Advertisement
Advertisement
Satyajit Roy and Kishore Kuma

সত্যজিৎ-কিশোর, মানিকজোড় মামা-ভাগনে

গুগাবাবা’-য় গুপীর চরিত্রে সত্যজিৎ রায় কাস্ট করতে চেয়েছিলেন কিশোরকুমারকে।

Satyajit Roy and Kishore Kumar Pair
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:August 4, 2025 6:11 pm
  • Updated:August 4, 2025 6:11 pm  

‘গুগাবাবা’-য় গুপীর চরিত্রে সত‌্যজিৎ রায় কাস্ট করতে চেয়েছিলেন কিশোরকুমারকে। হয়নি। ছবির গানও গাওয়াতে চেয়েছিলেন তাঁকে দিয়ে। হয়নি। কাজের তুমুল ব‌্যস্ততায় বম্বে থেকে কলকাতা না-যাওয়া হলেও রেকর্ডিং শুনেই পাঠিয়েছিলেন ‘চারুলতা’-র দু’টি রবীন্দ্রসংগীত। ‘মানিকমামা’-র প্রতি আকণ্ঠ ও অকুণ্ঠ ভালবাসা ছিল যে! আজ, কিশোরকুমারের জন্মদিনে, ফিরে দেখা মামা-ভাগনে সম্পর্কের রোদেলা উঠোন। লিখছেন অগ্নিভ চক্রবর্তী

Advertisement

সত্যজিৎ রায়কে ‘মানিকমামা’ সম্মোধন করতেন কিশোরকুমার। তাঁর গানের গলাও ছিল সত্যজিতের ভীষণ পছন্দের। এমনকী, ‘গুগাবাবা’-য় গায়ক গুপীর চরিত্রে প্রথমে অভিনয়ও করার কথা ছিল তঁার! রায়বাড়ির সঙ্গে কিশোরকুমারের পারিবারিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ‘পথের পাঁচালী’ নির্মাণে আর্থিক সাহায্যও করেন তিনি। আজ, ৪ আগস্ট কিশোরকুমারের ৯৬তম জন্মবার্ষিকীতে ফিরে দেখা দুই কিংবদন্তি বাঙালি ও তাঁদের পারস্পরিক সম্পর্ককে।

বীরভূমের জেলার দুবরাজপুর এলাকায় অবস্থিত রাজ্যের অন্যতম আকর্ষণ বিখ্যাত ‘মামা ভাগনে’ পাহাড়। সত্যজিৎ রায়ের লেখায় ও ছবিতে মামা ভাগনে পাহাড়ের কথা উঠে এসেছে একাধিকবার। ফেলুদার শেষ গল্প ‘রবার্টসনের রুবি’-তে উল্লেখ তো আছেই। এছাড়াও ‘অভিযান’ (১৯৬২) সিনেমায় যখন নরসিংয়ের ট্যাক্সিতে করে নীলিমা পালাবে বলে ঠিক করে, তখন রাতের অন্ধকারে নরসিংয়ের সঙ্গে দেখা করতে আসে এই মামা ভাগনে পাহাড়েই। ছবির পোস্টারেও স্থান পেয়েছে পাহাড়টি।

ছবির ‘নীলিমা’ অর্থাৎ রুমা গুহঠাকুরতার মা সতী দেবী ছিলেন সেই যুগের বিখ্যাত গায়িকা। তাঁর ছোট বোন বিজয়া রায় আর পিসতুতো ভাই সত্যজিৎ রায়। অর্থাৎ, সত্যজিৎ রায় সম্পর্কে ছিলেন কিশোরকুমারের মামা(শ্বশুর)। রুমাদেবীর সঙ্গে বিয়ের পর থেকেই কিশোরকুমারের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে রায় পরিবারের। বম্বেতে নিয়মিত সপরিবার যাওয়া হলে একদিন অন্তত কিশোরকুমারের বাড়িতে তাঁরা যেতেনই। মাছভক্ত ছিলেন কিশোর, আর সত্যজিৎ রায়ের প্রিয় ইলিশ। তাই মানিকমামা এলে তিনি ইলিশই আনতেন সেদিন। লাঞ্চ সেড়ে কিশোরকুমারের নিজস্ব ১৬ মিমি প্রজেক্টরে চলত পুরনো প্রিন্টের পুরনো সিনেমা দেখা।

কিশোরকুমারের গানের গলা ছিল সত্যজিতের বেশ পছন্দের। স্নেহও করতেন। ১৯৬৩ সালে মুক্তি পায় মাধবী মুখোপাধ্যায় অভিনীত ‘মহানগর’। এই ছবির পরে সত্যজিৎ রায়ের ঠিক করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নষ্টনীড়’ নিয়ে ছবি করবেন৷ তবে নাম রেজিস্টার করতে গিয়ে যখন জানা গেল যে, এই নামে আগে ছবি আছে, তখন খানিক বাধ্য হয়েই তঁার আগামী ছবির নাম রাখলেন ‘চারুলতা’। ছবিতে রবীন্দ্রসংগীতের জন্য এমন একটি তাজা পুরুষস্বর খুঁজছিলেন যঁার কণ্ঠে মানুষ তখনও অবধি রবীন্দ্রসংগীত শোনেননি। তাই ‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে…’ গানটি তিনি প্রথমেই কিশোরকুমারকে দিয়ে গাওয়াবেন বলে স্থির করেন। সেই মতো কিশোরকুমারের কাছে অনুরোধ পাঠানো হল।

তখন কিশোরকুমারের ব্যস্ততা তুঙ্গে। আগের বছরই মুক্তি পেয়েছে ‘হাফ টিকিট’। পরের বছর আসতে চলেছে নিজস্ব পরিচালনায় ‘দূর গগন কি ছাও মে’। এমন সময় রবীন্দ্রসংগীত গাওয়ার প্রস্তাবে তিনি ঘাবড়ে গিয়েছিলেন বইকি! কারণ রবীন্দ্রসংগীতের ক্ষেত্রে সামান্য ভুল-ত্রুটি হলে তা অমার্জনীয়। তবে কিশোরকুমারেরও দীর্ঘ দিন ধরেই মনের ইচ্ছে ছিল সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে কাজ করার। তাই এই সুযোগ তিনিও যেন হাতছাড়া করতে চাননি।

সত্যজিৎ রায় জোর করায় কিশোরকুমার জানান, সে-সময় তাঁর পক্ষে কলকাতা আসা সত্যি অসম্ভব। তবে মানিকবাবু যদি বম্বেতে আসেন তাহলে সময় বের করে নেবেন। অসুবিধার কথা ১৯৬৩-র ৪ নভেম্বর জুহুর ‘গৌরী কুঞ্জ’ থেকে লেখা চিঠিতে তাঁর মানিকমামাকে জানান– আশা করি কোনও সমস্যা হবে না যদি এ-মাসের ২৬ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে তুমি ও মঙ্কুমাসি এসে আমাদের বাড়িতে কিছু দিন থাকো। তার মধ্যেই একদিন গানটা রেকর্ড করে ফেলা যাবে। এছাড়াও জানিয়ে রাখেন, মিউজিশিয়ান ও রেকর্ডিংয়ের সমস্ত বন্দোবস্তও তিনিই করে দেবেন যদি না মানিকমামার কোনও আপত্তি থাকে। তবে শুধু ছবির শুটিংয়ের ব্যস্ততাই নয়, তঁার পক্ষে কলকাতা না আসতে পারার আরও একটি কারণ ছিল তখন তাঁর মায়ের অসুস্থতা। যিনি সপ্তাহ খানেক আগেই ফিরেছেন হরিদ্বার থেকে। তাই মাকে ছেড়ে কলকাতা যাওয়াও সম্ভব ছিল না। সেই কথাও কিশোরকুমার উল্লেখ করেন ওই চিঠিতে। এই চিঠিতে সত্যজিৎ রায়ের প্রতি কিশোরকুমারের শ্রদ্ধাশীল, বিনম্র ও বিনয়ী মনোভাব ভীষণভাবে স্পষ্ট।

বিজয়া রায়কে তখন মানিকবাবু জানান, ‘গানটা টেপ রেকর্ড করে দিও—– কিশোর ওই শুনে শিখে নেবে।’ বাধ্য হয়ে বিজয়া রায় ‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে…’ এবং ‘ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে’ দুটো গানই গেয়ে টেপ রেকর্ড করে দেন। সেই রেকর্ড শুনেই কিশোরকুমার নিজস্ব স্বকীয়তায় আলাদা মাত্রা জুড়ে দেন গানটিতে। তবে গানটির শেষে ছিল সামান্য পরিবর্তন। সেখানে ‘ওগো বিদেশিনী’ হয়ে যায় ‘ও বৌঠাকুরানি’। সত্যজিৎ রায়কেও সমালোচনার মুখে পড়তে হয় সেজন্য।

এই গানের জন্য এক পয়সাও পারিশ্রমিক নেননি কিশোরকুমার! অন্যদিকে, এই ঘটনার বেশ কয়েক বছর আগে, তখন সত্যজিৎ রায় ‘পথের পাঁচালী’-র শুটিংয়ে ব্যস্ত। পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে আটকে যায় ছবির কাজকর্ম। সন্দীপ রায় নির্মিত কিশোরকুমারের জীবনীনির্ভর তথ্যচিত্রে সত্যজিৎ রায় জানিয়েছেন– সেই সময় পাশে এসে দাঁড়ান সহৃদয় কিশোর। বেশ কিছু টাকা ধার দেন ছবি তৈরির জন্য। অঙ্কটা সামান্য নয়, পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে সাহায্য করেন তিনি! ফের কাজ শুরু হয় ‘পথের পাঁচালী’-র।

তবে ‘পথের পাঁচালী’-র গল্পে কিশোর-যোগ এখানেই শেষ নয়। কিশোরকুমার নিজেও ছিলেন সত্যজিতের ফ্যান। একটি সাক্ষাৎকারে কিশোরপুত্র অমিতকুমার জানান– শুটিং চলাকালীন ‘পথের পাঁচালী’ নির্মাণে পর্দার পিছনের ফুটেজ নিয়ে তথ্যচিত্রের ধাঁচে একটি ছবি তৈরি করতে চেয়েছিলেন কিশোরকুমার। এখনকার আধুনিক ভাষায় আমরা যাকে বলি ‘বিটিএস’ বা ‘বিহাইন্ড দ্য সিন্‌স’, ভিডিও খানিকটা সেরকমই। সে-সময় কিশোরকুমার নিজেই একটি ৮ মিমি মুভি ক্যামেরা হাতে তুলে নেন। ছবি তৈরি হওয়ার সময় বেশ কিছু দিন বোড়ালে গিয়ে ক্যামেরাবন্দি করেন শুটিংয়ের নানা মুহূর্ত। তৈরি করতে চেয়েছিলেন ‘পথের পাঁচালী’-র নেপথ্যে থাকা আর-এক পথের পাঁচালী। বহু দিন পর্যন্ত সেই সমস্ত ফুটেজ ছিলও কিশোরকুমারের কাছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত পরে সেই ক্যামেরা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে হারিয়ে যায় কিশোরের ক্যামেরাবন্দি ছবি-ভিডিও। আর আমরা চিরকালের জন্য বঞ্চিত হই ‘দ্য মেকিং অফ পথের পাঁচালী’ দেখার সৌভাগ্য থেকে।

মুক্তির পরে ‘পথের পাঁচালী’ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন তিনি। সেই মুগ্ধতা এমনই যে ১৩ বার দেখে ফেলেছিলেন ছবিটি! তাঁর পরিচালনায় ‘দূর গগন কি ছাও মে’ ছবির অনেক দৃশ্যের সঙ্গে ‘পথের পাঁচালী’ ও ‘অপুর সংসার’-এর (১৯৫৯) সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।

‘পথের পাঁচালী’-র শুটিংয়ের সময় ‘মানিকমামা’-কে প্রচুর চিঠি লিখেছিলেন কিশোর। ভীষণ ভাল ছবি আঁকতে পারতেন তিনি। ‘পরশ পাথর’-এর (১৯৫৮) সময় লেখা এমনই একটি চিঠির শেষে সত্যজিৎপুত্র সন্দীপ রায়ের জন্য নৌকো এঁকে দিয়েছিলেন। সঙ্গে লেখা ছিল, ‘দিস ইজ ফর সন্দীপবাবু।’

‘চারুলতা’-র পর কেটে গিয়েছে বছর চার-পাঁচেক। মানিকবাবু ঠিক করলেন তাঁর ঠাকুরদা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর কাহিনি অবলম্বনে নির্মাণ করবেন নিজের পরের ছবি ‘গুপী গাইন
ও বাঘা বাইন’। গুপীর জন্য প্রয়োজন এমন অভিনেতার, যিনি গানও গাইতে পারবেন।
তাই প্রথমে নির্বাচন করলেন আভাসকুমার গঙ্গোপাধ্যায়কেই! প্রাথমিক কথাবার্তাও
হয়েছিল। কিন্তু কিশোরকুমার তখন ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ঠিক হয় ওঁকে দিয়ে শুধু ছবির গানগুলোই গাওয়াবেন। ওঁর কথা ভেবেই উনি গানের সুরগুলিও তৈরি করেছিলেন। কিন্তু পরে সেটাও সম্ভব হয়নি। এছাড়াও অমিতকুমারের কথায় জানা যায়, ‘পরশ পাথর’ সিনেমায়ও
তুলসী চক্রবর্তীর চরিত্রটি কিংবদন্তি গায়ককে দিয়েই করাবেন বলে ভেবেছিলেন মানিকবাবু।

‘চারুলতা’-র প্রায় বছর কুড়ি পর যখন ফের রবীন্দ্রনাথের ‘ঘরে-বাইরে’ (১৯৮৫) বড় পর্দায় আনবেন বলে ঠিক করেন, তখন সন্দীপের কণ্ঠে সব ক’টি রবীন্দ্রসংগীত গাওয়ার জন্য ঠিক করেন কিশোরকুমারকেই। কিন্তু এবারও তাঁর পক্ষে কলকাতায় যাওয়া মুশকিল, কারণ ইনকাম ট্যাক্সের একটা কেসে আটকে পড়েন তিনি। ‘বিধির বঁাধন কাটবে তুমি…’ রেকর্ড করে বম্বে নিয়ে গিয়েছিলেন সত্যজিৎ। আর বাকি দুটো গানের ক্ষেত্রে পিয়ানো বাজিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায় নিজেই। এবারও কোনও পারিশ্রমিক নেননি কিশোর।

কিশোরকুমারের প্রতি সত্যজিৎ রায়ের যথেষ্ট শ্রদ্ধা ছিল, প্রশংসাও করতেন। অন্যদিকে, মানিকমামার ছবিতে কিশোরও রবীন্দ্রসংগীত গাইতে পেরে খুব আনন্দ পেয়েছিলেন। অমিতকুমারের কথায়, সালটা ১৯৫৫, কিশোরকুমার শুট করছেন ‘এভিএম প্রোডাকশনস’-এর ‘ভাই ভাই’ ছবির জন্য। আর পাশের সেটে নিজের আগামী ছবি ‘চোরি চোরি’-র শুট করছেন রাজ কাপুর। শুটিং ফ্লোরে গোটা টিমকে নিয়েই ‘পথের পঁাচালী’ ছবিটা দেখেছিলেন রাজ কাপুর। অসম্ভব প্রশংসা করেছিলেন ছবিটির। কিশোরকুমারকে নাকি রাজ কাপুর সরাসরি বলেছিলেন, ‘কী আর ছবি বানাব?

একজন বাঙালি পরিচালক আমাদের তো একেবারে বোকা বানিয়ে দিলেন! সাংঘাতিক ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছেন রায়সাহেব।’ ঐতিহ্যবাহী পাঠ ভবন স্কুলের প্রথম আটজন ছাত্রছাত্রীর তালিকায় রয়েছে তিনটি উল্লেখযোগ্য নাম– কুণাল সেন, সন্দীপ রায় ও অমিত গাঙ্গুলি। সঙ্গে পরের কলমে বাবার নামের জায়গায় যথাক্রমে– শ্রীমৃণাল সেন, শ্রীসত্যজিৎ রায় ও শ্রীকিশোরকুমার গাঙ্গুলি। নিয়মিত কিশোরকুমারের গানের নতুন রেকর্ড কেনা থেকে শুরু, পরে ছবির গানের পুরনো রেকর্ড সংগ্রহ করা–এভাবেই সন্দীপ রায়ও বিস্তর কিশোরচর্চা শুরু করেন। পরে, অমিত কুমারের কাছে প্রস্তাব রাখেন কিশোরকুমারকে নিয়ে প্রামাণ্য কাজ করতে চাওয়ার। এরপর কিশোরকুমারের ব্যস্ততার কারণে সেই নিয়ে কথাবার্তা বা কাজ কিছুই আর এগয়নি।

১৯৮৭ সালে তো মানুষটাই চলে গেলেন। পরের বছর অমিতকুমারের আশ্বাসে ফের কাজ শুরু করেন সন্দীপ রায়। দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন ফুটেজ ও স্টিল ছবি সংগ্রহ করে, কিশোরের বন্ধুবান্ধব ও বিখ্যাত মানুষজনের সাক্ষাৎকার নিয়ে, একাধিকবার বম্বে গিয়ে, ‘দূরদর্শন’ ও ‘বিবিসি আর্কাইভ’ থেকে ফুটেজ সংগ্রহ করে, অমিতকুমার-সহ আরও অনেকের সাহায্যে
সন্দীপ রায় তৈরি করে ফেললেন তথ্যচিত্র ‘জিন্দেগি এক সফর’ (১৯৮৮)। তথ্যচিত্রটির ধারাভাষ্য দেন আমিন সায়ানি।

’৮৭-র অক্টোবরে যখন কিশোরকুমারের মৃত্যুর খবর এল, ভেঙে পড়েছিলেন রুমা গুহঠাকুরতা। প্রথমে একটি সংবাদপত্রের দফতর থেকে খবরটা এলে– বিশ্বাস করেননি। পরে টেলিফোন মারফত খবরটা দেন খোদ সত্যজিৎ রায়। সত্যজিৎ রায়ের ‘অপরাজিত’ (১৯৫৬) ছবিতে রুমা গুহঠাকুরতার স্বামী অরূপ গুহঠাকুরতা সহকারী হিসাবে কাজও করেছিলেন।

কিশোরকুমার হুবহু কণ্ঠস্বর নকলও করতে পারতেন ‘মানিকমামা’-র! আটের দশক, দু’জনের দেখা হতেই– মানিকমামা চলো, আমরা দু’জন মিলে রবীন্দ্রসংগীতের একটা রেকর্ড করি। তুমি দশ-বারোটা গান বাছো। আমি সেটা করি– প্রস্তাব রেখেছিলেন কিশোর। এমনিতে নিজের রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবমটা করে সন্তুষ্ট ছিলেন না তিনি। কারণ তখনও রবীন্দ্রসংগীত কপিরাইটের আওতায়। যথেষ্ট নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। তাই কিশোরকে গাইতে হয়েছিল অনেক কিছু মেনে। যে-স্বাধীনতা তঁার মানিকমামা দিয়েছিলেন, সেটা তিনি পাননি। সেই অপূর্ণতা থেকেই এই প্রস্তাব। তবে শেষ অবধি সেটাও আর হয়নি। অমন ভরাট কণ্ঠস্বরে আরও কিছু রবীন্দ্রসংগীত পাওয়া থেকে আমরাও বঞ্চিত হলাম।

(মতামত নিজস্ব)
লেখক প্রাবন্ধিক
[email protected]

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement