Advertisement
Advertisement
Fairness Cream

ফেয়ারনেস ক্রিমে মিলেছে স্টেরয়েড, এবার বোধোদয় হবে?

সাদা-কালোর মায়া!

Steroids in fairness cream
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:July 13, 2025 10:14 pm
  • Updated:July 13, 2025 10:14 pm  

ফেয়ারনেস ক্রিমে স্টেরয়েড থাকে। বহু দিন ধরে বলে চলেছে ‘ইতাতসা’ সংস্থা। সদ্য স্বীকৃতি পেল বড় মঞ্চের। ফেয়ারনেস ক্রিমের রবরবা কমবে? 

Advertisement

২০০৩ সালে মন্দিরা বেদি তোলপাড় রচেছিলেন সারা দেশে। সে-বছর ক্রিকেট বিশ্বকাপের কমেন্ট্রি বক্সে তাঁকে দেখা গিয়েছিল ‘লাইভ’ খেলার ধারাভাষ্য দিতে। মেয়েরা দর্শকের ভূমিকায় স্বচ্ছন্দ– এই ধারণা ভেঙে দিয়েছিল মন্দিরার সপ্রতিভ উপস্থিতি। ক্রিকেটের ব্যাকরণ বোঝেন, ব্যাখ্যা দিতে পারেন একটি শট কেন ভুল বা কেন ঠিক, সেই সঙ্গে তাৎক্ষণিক হাসির সৌন্দর্যে পারেন মনোহরণ করতে– আর কী চাই! ‘ডিডিএলজি’-তে শাহরুখ খানের ভালবাসা পায়নি যে-মেয়েটি, সে এমন চমৎকারিত্ব ঘটাল কী করে? মানুষ মুগ্ধ বিস্ময়ে এ-প্রশ্ন মনে-মনে না-করে পারেনি। কাকতালীয় হয়তো-বা, কিন্তু সমসাময়িকতার স্রোতকে উপেক্ষা করা যায় না। ২০০৩ সালেই জেনেলিয়া ডি’সুজা একটি ফেয়ারনেস ক্রিমের বিজ্ঞাপন করেছিলেন, বিষয়– ক্রিকেট কমেন্ট্রি।

গল্পটি এরকম: মধ্যবিত্ত বাড়ির একটি কালো ত্বকের মেয়ে স্বপ্ন দেখে ক্রিকেট কমেন্টেটর হওয়ার। পাড়ায় বাচ্চারা যখন খেলে, সে বারান্দা থেকে দাঁড়িয়ে একমনে ধারাভাষ্য দেয়। মনে-মনে ভাবে, খেলার দিনে মাঠে ঢুকে পিচ পরীক্ষা করে ‘পিচ রিপোর্ট’ জানাচ্ছে দর্শকদের। তা, একদিন মেয়েটি টিভিতে খেলা দেখতে-দেখতে কমেন্ট্রি করছিল, তখন তার মা তার হাতে একটি ফেয়ারনেস ক্রিম ধরিয়ে দেয়। মেয়েটি অবাক হয়, একটু বিষণ্ণতাও হয়তো তাকে জড়িয়ে ধরে, কিন্তু মায়ের নীরব পরামর্শকে উপেক্ষা বা অবজ্ঞা করে না সে। এরপরে আমরা দেখি, মেয়েটি একদিন সকাল-সকাল ক্রিকেট মাঠের কমেন্ট্রি বক্সে হাজির হয়েছে। আগের সেই চাপা রং উধাও, গমের ত্বকের মতো ফটফট করছে তার উপস্থিতি। অর্থাৎ তার স্বপ্ন সত্যি হয়েছে।

কমেন্ট্রি বক্সে উপস্থিত প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত। মেয়েটিকে সহাস্যে বরণ করে নেন। শ্রীকান্তের অভিব্যক্তিতে স্পষ্ট– এই স্মার্ট ও ফরসা মেয়েটির ব্যক্তিত্বে তিনি মাত হয়েছেন। মেয়েটি অনবরত কথা বলে যায়, ম্যাচের ধারাবিবরণী দেয়, ওদিকে ঘরের ড্রয়িং রুমে বসে টিভিতে মেয়েকে আকাশ ছুঁতে দেখে মায়ের চোখে জল আসে, আনন্দের প্রকাশচিহ্ন হয়ে। বিজ্ঞাপনটি বোঝায়, ফেয়ারনেস ক্রিম-ই মেয়েটির স্বপ্নযাত্রার সহায়ক।
বিজ্ঞাপনটি একটি সাধারণ মেয়ের উচ্চাশা ও স্বপ্নের সার্থক হওয়ার কথা বলে বটে, কিন্তু এ বিজ্ঞাপনের অন্তরবার্তা পিছুটানে ভরা। গায়ের রং যাদের ‘ফরসা’ নয়, যারা কালো, তারা কি যোগ্যতার পুরস্কার কখনও পাবে না? একটি ‘কালো মেয়ে’ কি পারে না ফেয়ারনেস ক্রিমের সাহচর্য ছাড়া ধারাভাষ্যকার হতে?

‘পিগমেন্টোক্রেসি’ শব্দের অর্থ: যারা ফরসা, তারা সমাজে অনেক বেশি গুরুত্ব পায়, কালোদের তুলনায়। আর, ফরসা ও কালোর এহেন ভেদাভেদ যখন একটি মেয়েকে জড়িয়ে ঘটতে থাকে সমাজে, তা মেয়েদের অবস্থানকেই প্রশ্নের মধ্যে ফেলে দেয়। ফেয়ারনেস ক্রিমে স্টেরয়েড-সহ অন্য রাসায়নিক মেশানো হয়, এ-কথা বহু দিন ধরে বলে চলছে ‘ইতাতসা’ সংস্থা। সম্প্রতি, তাদের কাজের স্বীকৃতি দিল লন্ডনের ‘রয়্যাল কলেজ অফ ফিজিশিয়ান্‌স’। এরপরেও কি আমাদের বোধোদয় হবে না?

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement