Advertisement
Advertisement
Body Shaming

রোগা-মোটা, শরীরের খুঁত ও নিখুঁত

নিজের দেহকে অন্যের চেয়ে ‘শ্রেষ্ঠ’ ভাবার কারণ নেই।

Thin and Fat Body Shaming
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:August 11, 2025 12:33 am
  • Updated:August 11, 2025 12:33 am  

সব মানুষের শরীরেই কম-বেশি খুঁত রয়েছে। নিজের দেহকে অন্যের চেয়ে ‘শ্রেষ্ঠ’ ভাবার কারণ নেই। বরং দোষ ধরা থেকেই অনর্থের সূত্রপাত।

Advertisement

রোগা ও মোটার মধ্যে বাক্‌যুদ্ধ লেগেছে। ‘রোগা’ কানাই বলল ‘মোটা’ বিশ্বম্ভরকে– তোমার চেহারা বিচ্ছিরি, ঢাকাই জালার মতো। তাছাড়া তোমার বুদ্ধিও মোটা। তাতে বিশ্বম্ভর যথারীতি রেগে গেল। সেও পাল্টা বলতে ছাড়ল না যে, কানাইয়ের হাত-পা কাঠির মতো। আর, রোগা মানুষ ভীষণ অনুদার ও কিপটে মনের অধিকারী। চাপানউতোর সমানে চলতে থাকায় শেষে দু’জনে দ্বারস্থ হল পণ্ডিতমশাইয়ের সমীপে।

কিন্তু প্রথমে পণ্ডিতমশাই নাকে নস্যি নিয়ে প্রগাঢ় ঘুমে আচ্ছন্ন রইলেন ঘণ্টাদুয়েক। তারপর ঘুম থেকে উঠে শান্ত চিত্তে বসলেন রোগা ও মোটার স্বভাব-বিশ্লেষণে। হেলেদুলে বের করলেন পঁাজির মতো গুরুতর ও বিশ্বাসযোগ্য বই। তারপর পড়তে শুরু করলেন– ‘মোটকা মানুষ হেঁাৎকা মুখ/ বুদ্ধি মোটা আহাম্মুখ–।’ শুনে তো রোগা কানাই হেসেই খুন। পরক্ষণেই পণ্ডিতমশাইয়ের কণ্ঠে ধ্বনিত হল– ‘শুকনো লোকের শয়তানি/ দেমাক দেখে হার মানি।’ এবার মোটা বিশ্বম্ভর উচ্ছ্বসিত। পণ্ডিতমশাই থামলেন না। ‘বইয়ে লিখেছে’ বলে পড়ে চললেন উদাসীন চিত্তে– ‘মস্ত মোটা মানুষ যত/ আস্ত কোলা ব্যাঙের মতো/ নিষ্কর্মা সব হদ্দকুঁড়ে/ কুমড়ো গড়ায় রাস্তা জুড়ে।’ আর ‘চিমসে রোগা যত ব্যাটা/ বিষম ফাজিল বেদম জ্যাঠা/ শুঁটকো লোকের কারসাজি/ হিংসুটে আর হার পাজী।’ এই শুনে কানাই ও বিশ্বম্ভর উভয়েরই মুখ শুকিয়ে গেল। এরপর পণ্ডিতমশাই পড়লেন: ‘দুটোই বঁাদর দুটোই গাধা/ রোগা মোটা সমান হঁাদা।/ ভণ্ড বেড়াল পালের ধাড়ী/ লাগাও মুখে ঝঁাটার বাড়ি।/ মাথায় মাথায় ঠুকে ঠুকে/ চুনকালি দাও দুটো মুখে।।’ অতঃপর পণ্ডিতমশাই আবার নাকে নস্যি দিয়ে ঘুমতে লাগলেন। আর, রোগা কানাই ও মোটা বিশ্বম্ভর– মাথা চুলকোতে চুলকোতে আপন আপন বাড়ির পথ ধরল, ভাবল– এই পণ্ডিতমশাইটি বেজায় বোকা, বিতর্কশাস্ত্রের কিছুই বোঝেন না।

সুকুমার রায়ের এ-লেখার মর্মার্থ কী– তা গম্ভীর চালে, বিরাটাকার তত্ত্ব ফেঁদে না-বললেও বোঝা যায়। সব শরীরেই কম-বেশি খুঁত রয়েছে। তাই নিজের দেহকে অন্যের চেয়ে ‘শ্রেষ্ঠ’ ভাবার কারণ নেই। অন্যের দেহ-দোষ ধরলে, সেই দোষের ছায়াই নিজ-পানে ধেয়ে আসবে। ঈশপের গল্পে ছিল– দেবতা মানুষ তৈরি করে তার সামনে একটি ঝুলি ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন, পিছনের দিকে আর-একটা। সামনের ঝুলিতে লেখা ছিল: ‘গুণ’। মানে, সব মানুষ নিজের গুণ দেখতে পায়।

কিন্তু পিছনের ঝুলিতে লেখা ‘দোষ’– পিছনের দিকে থাকার কারণেই– মানুষের আর চোখে পড়ে না। ‘বডি শেমিং’ নিয়েও একই কথা বলার। উত্তরপ্রদেশে বছর ২০-র এক যুবক খুন হয়েছে দু’জন বন্ধুর হাতে। যুবকটি ওই বন্ধুদের ‘রোগা’ বলে উত্ত্যক্ত করত। শেষে তার জীবনের বিনিময়ে অন্য দু’জনের ক্ষোভের নিরসন ঘটল। কাজেই শরীর-সংস্থান নিয়ে অন্যদের অপবাদ দেওয়া অর্থহীন। বরং বিদ্রুপবাক্য থেকেই যত অনর্থের সূত্রপাত।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement