ফাইল ছবি
অভিযোগ, মোদি-শাহ’র সঙ্গে মতাদর্শগত সংঘাতে উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয় জগদীপ ধনকড়কে। ‘অঘোষিত জরুরি অবস্থা’-র পরিণতি!
‘রাষ্ট্রপতি’, ‘উপরাষ্ট্রপতি’, ‘রাজ্যপাল’– সবই সাংবিধানিক পদ। দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে। কিন্তু অতীতেও রাজ্যপালদের বেলায় সেই রীতি ভাঙার, বা রীতি না-মেনে চলার, অভিযোগ উঠেছিল। এখনও ওঠে। আর, সেই খেলার অন্যতম কুশীলব জগদীপ ধনকড়। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল থাকার সময় তিনি বারবার রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছিলেন। তা কতটা আইন ও সংবিধান মেনে, আর কতটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে– প্রশ্ন ছিলই। এখন যখন তঁাকে ‘উপরাষ্ট্রপতি’ পদ থেকে ‘ইস্তফা’ দিতে হচ্ছে, তখনও নেপথ্যে রাজনৈতিক সমীকরণের কথাই উঠে আসছে। ফলে, অনেকেই মনে করছেন, নিজের জালেই জড়িয়ে বিদায় নিতে হল ধনকড়কে। যেন একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল।
তারপরেও বলতে হয়, ধনকড়ের ইস্তফা নিয়ে যে অলীক কুনাট্য রঙ্গ গত কয়েক দিন ধরে মঞ্চস্থ হচ্ছে, তা দৃষ্টিকটু, লজ্জাজনক। রাষ্ট্রপতি যেমন দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে দেশের সাংবিধানিক প্রধান– তেমনই উপরাষ্ট্রপতিও নিরপেক্ষ, সাংবিধানিক পদে আসীন। রাজ্যসভার অভিভাবক। যে-দলের প্রার্থী রূপেই নির্বাচিত হন না কেন, জিতে যাওয়ার পর তঁার দলীয় পরিচয় থাকা উচিত নয়। যে-কারণে এ ধরনের সাংবিধানিক পদ থেকে অবসরের পর চট করে কেউ দলীয় রাজনীতিতে ফেরেন না। যদিও ব্যতিক্রম আছে। এমতাবস্থায় জগদীপ ধনকড় রাজ্যসভার কাজ পরিচালনা করতে গিয়ে পক্ষপাতিত্ব করছেন, এমনতর অভিযোগও উঠেছিল। এবার, তঁারও পা কাটল দলীয় রাজনীতির পচা শামুকে!
যদি সত্যিই মোদি, শাহদের সঙ্গে মতানৈক্যের জেরে ধনকড়কে সরতে হয়, তাহলে এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কিছু হতে পারে না। রাজ্যসভার অভিভাবকরূপে তিনি বিরোধীদের কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনবেন, প্রত্যাশিত। তঁাদের প্রস্তাব গ্রহণ করা অপরাধ না কি? কিন্তু সভায় বিরোধীদের বক্তব্য ‘রেকর্ড’ করা নিয়ে বিজেপির দলনেতা জে. পি. নাড্ডা যেভাবে নির্দেশ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, যেভাবে বিষয়টি নিয়ে উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে গরহাজির থেকেছেন তিনি-সহ সংসদীয় মন্ত্রী কিরণ রিজিজু প্রমুখ, তা শুধু ধনকড়ের অপমান নয়, সমগ্র রাজ্যসভা ও সংসদীয় গণতন্ত্রের অসম্মান। বিজেপি প্রায়শই সাংবিধানিক নানা পদের, সংস্থার গরিমা ক্ষুণ্ণ করে বলে অভিযোগ। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে এই নিয়ে বিবাদ ঘটেছে। কলেজিয়াম ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার কম চেষ্টা হয়নি।
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়ম বদল করে কমিশনকে কুক্ষিগত করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত, সুপারিশ মেনে চলেন– সেটাই দস্তুর। কিন্তু নির্দিষ্ট দলের বা শাসক দলের অঙ্গুলিহেলনে তঁাদের চলতে হবে, পছন্দ না হলে চাপ দিয়ে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হবে, এমন ঘটনা বেনজির। ৭৫ বছরের গণতন্ত্রে দেখা যায়নি। যে ‘অঘোষিত জরুরি অবস্থা’ সমাজের সর্বস্তরে কেন্দ্রের শাসক দল নামিয়ে আনতে চাইছে, তার পরিণতি সুখকর হবে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.