ইউএন রিপোর্ট বলছে, ভারত এই মুহূর্তে সবচেয়ে জনবহুল দেশ। তবে রিপোর্ট এ-ও দেখাচ্ছে যে, ‘টোটাল ফার্টিলিটি রেট’ ভারতে নিম্নগামী।
‘জনতার ভিড় থেকে একটি মুখ বেছে নিন, যে কোনও একটি মুখ। সে-ই আসলে আমি।’ নীরজ পাণ্ডের ‘আ ওয়েনসডে’ সিনেমায় যখন মুম্বই পুলিশের কমিশনারের সঙ্গে এরকম দৃপ্ত কণ্ঠে আমরা কথা বলতে শুনি অনামী চরিত্রটিকে, যে কিনা সন্ত্রাসবাদীদের পুলিশি নিরাপত্তার কবল থেকে মুক্ত করে প্রাণে মেরে ফেলতে চায়– উৎফুল্ল না-হয়ে পারি না। আমরাই তো ভিড়। অসংখ্য মানুষের সমাহার। যে-ভিড়ের নাম নেই, যে-ভিড়ের আলাদা আত্মপরিচিতি নেই। যে-ভিড় অনেকটা জলের মতো, যখন যে-পাত্রে থাকে, সে-পাত্রের আকার ধারণ করে। সিনেমায়, কমিশনারের উদ্দেশে, ওই অনামী চরিত্রটি বলে: মশাই, রোদে তো আমি পুড়ি। জলে তো আমি ভিজি। দাঙ্গায় তো আমিই আক্রান্ত হই। রাস্তায় বেরলে আমারই তো প্রাণনাশের ভয় থাকে। অর্থাৎ এ কথাগুলি প্রযোজ্য ভিড়ের ক্ষেত্রে।
ভিড়ের মধ্যে মিশে থাকা অনেক মানুষের ক্ষেত্রে। ভিড় যেদিকে যায়, ঝঁাকের কই হয়ে বাকিরা সেদিকেই যায়। ভিড়ের এহেন বদনাম আছে, কারণ ভিড় আলাদা করে চিন্তাশক্তির পরিচয় দেয় না। তা-ও ভিড় বাদ দিয়ে ভারতীয় জনজীবন নয়, এবং ভিড়ের চরিত্রমুখ যে আসলে আর. কে. লক্ষ্মণ-কথিত ‘কমন ম্যান’, তাতেও সন্দেহ নেই। আড়ে-বহরে কেমন হবে এই ভিড়ের স্বাস্থ্য? চলতি বছরের এপ্রিল মাসে হওয়া ইউএন রিপোর্ট বলছে– ভারতের জনসংখ্যা বর্তমানে ১.৪৬ বিলিয়ন, মানে ১৪৬ কোটি। যা ছাপিয়ে গিয়েছে চিনকে (১৪১ কোটি)। ভারত, এ-মুহূর্তে, সবচেয়ে জনবহুল দেশ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতের এহেন জনসংখ্যা আপাতত ক্রমবৃদ্ধির পথে ধাবমান হবে।
বাড়তে-বাড়তে, আগামী ৪০ বছরে তা উপনীত হবে ১৭০ কোটিতে, তারপর শুরু হবে জনসংখ্যার ‘ফল’ বা মন্দীভবন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি বড় কারণ অবশ্যই ‘লাইফ এক্সপেকটেন্সি’ বা গড় আয়ু সংবলিত জীবন-প্রত্যাশার বাড়বাড়ন্ত। ভারতীয় নারীর গড় আয়ুষ্কাল এখন ৭৪ বছর, পুরুষদের ৭১।
তবে যে-খবরটি শঙ্কা তৈরি করছে তা হল, ‘টোটাল ফার্টিলিটি রেট’ বা ‘টিএফআর’ ক্রমশ কমছে ভারতীয় সমাজে। এখন ‘টিআরএফ’ ১.৯। আগে ছিল ২.১। ‘টিআরএফ’ হ্রাস পাচ্ছে এর অর্থ: ভারতীয় নারীরা, দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাতে, সন্তানসংখ্যায় বৃদ্ধি ঘটাচ্ছেন না, বরং রাশ টানছেন। যদিও এখানে একটি অন্য প্রেক্ষিতও রয়েছে। ‘টিআরএফ’ কমলে কী হবে, সিংহভাগ ভারতীয় নারী-পুরুষ যে যৌনতা ও সন্তানধারণের প্রশ্নে এখনও যথেষ্ট জ্ঞানবুদ্ধির (‘ইনফর্মড ডিসিশন’) অধিকারী নয়। অধিকন্তু রিপোর্ট বলছে, ১০ থেকে ২৪ বয়সসীমায় ২৬ শতাংশ জনসংখ্যা কমেছে। যে-তথ্যে অনেকে সিঁদুরে মেঘ ঘনাতে দেখছেন। আগামী নবীন প্রজন্মের কর্মক্ষমতায় টান পড়বে না তো?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.