মেট্রো প্ল্যাটফর্মের হলুদ রেখা অতিক্রম করলে জরিমানা হতে পারে? এই ‘নিষেধাজ্ঞা’ জারি হলে যাত্রী সুরক্ষা বাড়বে তো?
‘হলুদ লাইন অতিক্রম করবেন না’। এই মর্মে, এবং প্রায় কাছাকাছি ভাষায়, মেট্রো রেলে প্রায় অ্যানাউন্সমেন্ট হতে থাকে। প্ল্যাটফর্মের ধার ঘেঁষে হলুদ রেখা চলে গিয়েছে একথা সত্য। সতর্কতাবাণীর অর্থ: ট্রেন আসছে কি না, তা ঝুঁকে দেখার দরকার নেই। সেজন্যই হলুদ রেখার দাগ। আসলে কলকাতা মেট্রো রেলে আত্মহত্যার প্রয়াস যেভাবে নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে উঠেছে, তা কর্তৃপক্ষর কাছে মাথাব্যথার কারণ বইকি। হলুদ রেখা অতিক্রম করতে মানা করার প্রকৃত বার্তা লুকিয়ে রয়েছে এই ত্রাসের মধ্যে। যাত্রী সুরক্ষা বাড়লে পরিষেবায় তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। কিন্তু এই দেশ নেহাত ঘোষণাকে গুরুত্ব দেয় না। পুরনো অভ্যাস বজায় রেখেই জনজীবন বইতে থাকে। ফলে মেট্রো প্ল্যাটফর্মে হলুদ রেখা আখেরে লক্ষ্মণরেখা হতে পারেনি।
কিন্তু কর্তৃপক্ষ নাছোড়। সম্প্রতি খবরে প্রকাশ, হলুদ রেখা পেরলেই আর্থিক জরিমানা করা হবে। আগামী মাস থেকে তা প্রযোজ্য হতে পারে। এতে যাত্রী সুরক্ষা কতখানি বাড়বে, সে-প্রশ্নে ঢোকার আগে অযথা পকেট-গচ্চার আশঙ্কা অনেককেই আকুল করেছে। জরিমানার অঙ্ক ধার্য হয়েছে ২৫০ টাকা। খুব বেশি না হলেও খুব কমও তো নয়। মাঝারি মাপের, তাগড়া অঙ্ক। এ সম্ভাবনার বিপরীতে তাই প্রতিযুক্তি সাজানো চলছে। অনস্বীকার্য, মাঝে মাঝে এতই ভিড়ে ভরে যায় মেট্রোর প্ল্যাটফর্ম যে, হলুদ রেখার ছেঁায়াচ মেনে চলা মুশকিলের হয়ে যেতে পারে।
তখন কি টপাটপ ‘ফাইন’ দিতে হবে? কে স্বেচ্ছায় রেখা পেরলেন, কে বাধ্য হয়ে, সে বিচার করা হবে কীভাবে? মুড়ি ও মুড়কির তফাত না করে যদি ‘জরিমানা’ ধার্য হতে থাকে, সে কি সুবিচার? তখন বরং মেট্রোর বিরুদ্ধে সহজে উপার্জন বাড়ানোর অভিযোগ জটিল আকার ধারণ করবে না তো? সুরক্ষা ও স্বেচ্ছায় আইনলঙ্ঘনের মধ্যে ভারসাম্য রেখে ‘জরিমানা’ করা সম্ভব?
জরিমানার ভয়, আর্থিক ক্ষতি অনেক সময় আইনের প্রতি সমীহ ভাব তৈরি যে করে না, এমন নয়। দূরগামী ট্রেনে ধূমপান করলে জরিমানা করা হয়। জেনেশুনে প্ল্যাটফর্মের উপর প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিলে জরিমানা হওয়া উচিত। বিনা টিকিটে ভ্রমণ করা তো এক অর্থে অপরাধ। সেখানে জরিমানা বাধ্যতামূলক।
কিন্তু তাতে কি আমজনতার বিবেক ও বোধ জাগ্রত হয়েছে? লুকিয়ে কেন, প্রকাশ্যেই ট্রেনে মানুষ ধূমপান করে, জরিমানার প্রতি ‘থোড়াই কেয়ার’ মনোভাব দেখিয়ে। অন্যান্য ‘নুইসেন্স’ ঘটাতেও ডরায় না। বিশেষত, পুরুষরা। টানা বিনা টিকিটে যাওয়া যাত্রী হঠাৎ একদিন আর্থিক জরিমানা দিয়েও তৃপ্ত থাকে, এই ভেবে যে, যত টাকা বঁাচিয়েছি টিকিট না কেটে, তার অল্পই ফাইন বাবদ গেল! সীতার সুরক্ষার জন্য লক্ষ্মণ যে-গণ্ডি কেটে দিয়েছিলেন, সীতা তা সজ্ঞানে অতিক্রম করে বিপদ ডেকে আনেন। মেট্রোর হলুদ রেখার বেলায় মানুষ যেন হুঁশ না হারায়। আত্মহত্যা কাম্য নয়, তেমনই কাম্য নয় ২৫০ টাকার বিসর্জনও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.