সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: “বহু বছর চুপ করেছিলাম, এক দিন সব কুকীর্তি ফাঁস করে দেব…”, বছর খানেক আগেই পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন আদনান শামি। বলেছিলেন, “সঠিক সময়ের অপেক্ষায় রয়েছি।” এবার যেন সেই অপেক্ষারই অবসান ঘটল! গোটা বিশ্বের সামনে নিজের মাতৃভূমিকে ‘ভিক্ষুক’ বলে কটাক্ষ করে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন শিল্পী। আদনানের অভিযোগ, নিজের মায়ের শেষকৃত্য থেকে তাঁকে বঞ্চিত করেছে পাকিস্তান।
সম্প্রতি ‘আপ কি আদালত’ শোয়ে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গায়ক। সেখানেই প্রশ্নোত্তর পর্বে পাকিস্তান সেনাকে প্রায় ‘উলঙ্গ’ করে ছাড়লেন তিনি। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে মৃত্যু হয় আদনানের মায়ের। তড়িঘড়ি সেদেশের ভিসা পাওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন গায়ক। কিন্তু সেদেশের ছাড়পত্র না মেলায় মা বেগন নৌরিন শামি খানের শেষকৃত্যটা অবধি নিজে হাতে করতে পারেননি তিনি। এপ্রসঙ্গে চোখের জল সামলে আদনান শামির মন্তব্য, “আমি ভিসার জন্য আবেদন করে বলেছিলাম, আমার মা মারা গিয়েছেন। কিন্তু ওরা আমাকে ভিসা দেয়নি। আমিও যেতে পারিনি। শেষপর্যন্ত উপায় না দেখে, ভিডিও কলে মায়ের শেষকৃত্যে দেখতে হয়েছে আমাকে।” এখানেই থামেননি শিল্পী। একসময়ে পাকিস্তানের নাগরিকত্ব থাকলেও আদনান শামি যে মনেপ্রাণে ভারতপ্রেমী, সেটা ভারত-পাক সংঘাতে এক্স হ্যান্ডেলে কড়া জবাবের মাধ্যমে কড়ায়-গণ্ডায় বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। পহেলগাঁও সন্ত্রাসের পর থেকেই নিজের জন্মভূমির বিরুদ্ধে একের পর এক বোমা ফাটিয়েছেন আদনান। আসিম মুনিরের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেও তোপ দাগতে ছাড়েননি গায়ক।
ভারতীয় নাগরিকত্ব নেওয়ায় পাক মুলুকের তরফে বারবার কটাক্ষের শিকার হতে হয়েছে তাঁকে। সেপ্রসঙ্গে আদনান বলেন, “যাদের ধারণা আমি পাকিস্তানের সব টপ সিক্রেট বয়ে ভারতে এনেছি, তাদের উদ্দেশে বলছি, আপনারা জানেন আমি একজন শিল্পী, গায়ক। আর পাকিস্তানের সেনাপ্রধানরা আমার গানে রোম্যান্স করত। আমার গানে নাচ করে ওরা। পাকিস্তান আর্মি চায় না কাশ্মীর ইস্যুর সমাধান হোক। তাই ওরা এই সমস্যা জিইয়ে রাখে। আসলে কাশ্মীর ইস্যু দেখিয়ে গোটা বিশ্বের কাছে সমবেদনা পাওয়ার চেষ্টা করে ওরা। আর এভাবেই সবার কাছ থেকে ভিক্ষা চেয়ে বেড়ায় দেশটাকে চালানোর জন্য। তবে গিয়ে দেখুন, সেনাপ্রধানদের বিলাসব্যাসনের কোনও খামতি নেই। যত কষ্ট ওখানকার সাধারণ মানুষদের। খাবার কেনার জন্য তাদের পকেটে ন্যুনতম টাকা নেই। গোটা দেশটা চলছে আমজনতার কষ্টের টাকায়। অন্যদেশে সিস্টেমের অংশ আর্মি। কিন্তু পাকিস্তানের মতো ‘ওয়াহিদ মুলক’ আর একটা নেই। সেখানে একটা দেশ চালায় আর্মি। ওদের সেনাজওয়ান তো ভুট্টাও বেচে। আর কোনও নেতা একটু সাধারণ মানুষের ভালোবাসা পেলেই হল! তাদের ছেঁটে ফেলা হয়! বেনজির ভুট্টোকে মেরে ফেলল। বর্তমানে ইমরান খান যিনি ক্রীড়াজগতের খ্যাতনামা তারকা, তাঁকে জেলে পাঠিয়ে দিল। কোনও জনদরদী নেতা সহ্য করতে পারে না পাকিস্তান আর্মি। ওরা যুদ্ধ চায় সবসময়ে।”
২০১৬ সালে নিজের দেশ, ভিটে-মাটি, বন্ধু-স্বজন ছেড়ে ভারতে চলে আসা মোটেই সহজ ছিল না আদনানের জন্য। নেপথ্যে রয়েছে এক ভয়ঙ্কর কারণ। নিজমুখেই সেকথা শেয়ার করেছিলেন বছর খানেক আগে। আদনান জানান, “অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করেন যে পাকিস্তানের প্রতি আমার এত বিদ্বেষ কেন? তবে আসল সত্যিটা হচ্ছে পাকিস্তানের মানুষদের উপর আমার কোনও রাগ নেই। ওঁরা আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহারই করেছেন। যতক্ষণ আমাকে কেউ ভালবাসেন, আমিও পালটা তাঁকে ভালবাসি। যদিও আমার মূল সমস্যা হচ্ছে ওই দেশের সরকারকে নিয়ে। যাঁরা আমাকে খুব কাছ থেকে চেনেন, তাঁরাই জানেন বহু বছর ধরে সেখানকার প্রশাসনের থেকে আমাকে কী কী সহ্য করতে হয়েছে! সেটা ভুলিনি। যেটা আমার পাকিস্তান ছাড়ার আসল কারণ।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.