সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শনিবারের সকালে বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভেঙেছে কলকাতার। নিম্নচাপের কালো আকাশে ভেসে এল একটা মৃত্যুসংবাদ। খবরটা মাঝরাতেরই। কিন্তু ছড়িয়ে পড়ল সকালে। শেফালি জরিওয়ালা (Shefali Zariwala) প্রয়াত। কে শেফালি? সেই মেয়েটি, যাঁকে দেখা গিয়েছিল ‘কাঁটা লাগা’ ভিডিওয়। আজকের জেন জি কিংবা আলফা হয়তো তাঁকে কেবলই নামে চেনে। অসংখ্য কনটেন্টের স্রোতে কোনও একসময় দেখেছে সেই ‘আদ্যিকালের ভিডিও’-ও। কিন্তু তাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় হয়তো, নতুন সহস্রাব্দের শুরুর এই ভিডিওর যথার্থ অভিঘাত। পপ সংস্কৃতির সিন্দুকে থেকে গিয়েছে, থেকে যাবে ‘কাঁটা লাগা’। থেকে যাবেন শেফালি জরিওয়ালা।
সেই অর্থে ভেবে দেখলে শেফালি তাঁর কেরিয়ারে বিরাট কিছু করতে পারেননি। যদিও অসংখ্য মিউজিক ভিডিওয় দেখা গিয়েছে তাঁকে। সব মিলিয়ে পঁয়ত্রিশটি। ২০০৪ সালে ‘মুঝসে শাদি করোগে’ ছবির মাধ্যমে রুপোলি পর্দায় পা রাখা। যদিও হিন্দি ছবি তাঁর কেরিয়ারে ওই একটিই। ‘বুগি উগি’, ‘নাচ বলিয়ে’ থেকে ‘বিগ বস’-এর মতো রিয়ালিটি শোয়েও অংশ নিয়েছেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত শেফালি জরিওয়ালার পরিচয় থেকে গিয়েছে একটিই। তিনি ‘কাঁটা লাগা গার্ল’।
ভাবতে ভাবতে কুয়াশায় ঢেকে যায় ২০২৫। ফিরে আসতে থাকে ২০০২। সেটা নতুন সহস্রাব্দের শুরুর দিক। গ্লোবালাইজেশন। কেবল টিভি। সাবালক হতে থাকা একটা সময়। সেই সময়েই যৌবনের পতাকা হাতে আমাদের ড্রইংরুমে এক সাহসী মেয়ে। যার অন্তর্বাস উপচে পড়ছে জিনস ছাপিয়ে। যার হাতে আঁকা ট্যাটু। আর প্যান্টের পিছনে গুঁজে রাখা একটা ম্যাগাজিন। কীসের ম্যাগাজিন? মলাটের নগ্ন পুরুষ বুঝিয়ে দিচ্ছে এর বিষয়বস্তু। আর সেই পত্রিকার পাতা মন দিয়ে ওলটাচ্ছে ভিডিওর তরুণী। ডিস্কো থেকে প্রবেশ করছে আশ্চর্য বিভঙ্গে চারপাশ মাতিয়ে দিতে দিতে। তাকে ঘিরে পুরুষের ভিড়। তাকে ঘিরে ভিড়ের হৃদয়। দূরে বিরক্ত প্রেমিক। তাকে খুশি করতে এবার ম্যাগাজিনে আগুন ধরিয়ে দেয় তরুণী। তারপর ঘনিষ্ঠ হয় প্রেমিকের সঙ্গে। যদিও ভিডিওর শেষে দেখা যায়, কেবলই পত্রিকার সামান্য অংশ পুড়েছে। বাকিটা রয়েছে যেমনকার তেমনই। সেটা প্যান্টের পিছনে গুঁজে রেখে সে হেঁটে যায় প্রেমিকের সঙ্গে।
শেফালি জরিওয়ালা ও এই গানের অমোঘ যুগলবন্দি প্রায় একটা ছোটখাটো পরমাণু বোমার মতো ফেটেছিল শহরে, মফস্বলে। এই প্রথম ভারতীয় জনমানসে নারীর বহুগামিতা এমন স্পষ্ট ভাবে উচ্চারিত হল। শরীরী বিভঙ্গ ও সঙ্গীতের এমন ছন্দোবদ্ধতাও যেন একদম নতুন। এমনিতেই সেই সময়ে মিউজিক ভিডিওর দাপট। একের পর এক রিমিক্স কিংবা ফাল্গুনী পাঠকের মতো গায়িকাদের অরিজিনালের দাপাদাপি। তবু এরই মধ্যে ১৯৭২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সমাধি’ নামের একটা ছবির গানের নতুন করে ফিরে আসা। যাঁরা ডিস্কো থেকে যেতেন তাঁরা ওই পরিবেশ চিনতেন। কিন্তু ক্যাবলা মফস্বল অথবা কলকাতার রক্ষণশীল পরিবার টিভির পর্দায় শেফালিকে দেখে সেই উদ্দাম, উচ্ছ্বাসের ভিতরে শুনতে পেতেন যৌবনের ‘বেপরোয়া বিচ্ছু’র দৃশ্যকল্প। শেফালি লাজুক প্রেমিকার আবরণ থেকে যেন বের করে আনলেন এক সোচ্চার রূপসীকে। প্রেমিক থেকে প্রেমিকে যাঁর অনায়াস গতায়াত। সেই গান, সেই ‘কাঁটা লাগা’ একধাক্কায় যেন কত কিছু বদলে দিয়েছিল। বাজার ছেয়ে গিয়েছিল ‘কাঁটা লাগা’ ড্রেসে! ঘরোয়া হুল্লোড়ে কমবয়সিরা কোমর দোলাতে শুরু করল। চারপাশ ছেয়ে গেল শেফালি ও রিমিক্সের সুরের আমেজে।
বদলে যাওয়ার সেই সময়কাল কত পিছনে চলে গিয়েছে। শনিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে ৪২ বছরের শেফালির মৃত্যুসংবাদ আমাদের যেন টাইম মেশিনের সামনে দাঁড় করিয়ে দিল আবার। ইউটিউবে ফের জেগে উঠল সেই রিমিক্স। পুরনো সময় ফেরে না। কিন্তু হারানো সময় থেকে যায় সময়ের ভাঁজে রাখা চিরকুট হয়ে। যাঁরা সময়কে ফেরাবেন কিংবা সমসময়কে চিনতে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নিতে চাইবেন ফেলে আসা দিনের এক মিউজিক ভিডিও, তাঁদের জন্য থেকে যাবে ‘কাঁটা লাগা গার্ল’। শেফালি জরিওয়ালা প্রয়াত। কিন্তু সময়বদলের ইতিহাস লিখে রাখতে যৌবনতরণী বাইতে থাকবে সেদিনের সাহসী মেয়েটা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.