Advertisement
Advertisement
Joto Kando Kolkatatei Film Review

‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’ রিভিউ: ফেলুদাকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে কলকাতাকে খুঁজলেন ‘তোপসে’ আবির

কেমন হল অনীক দত্ত পরিচালিত 'যত কাণ্ড কলকাতাতেই'?

Anik Dutta Helmed Abir Chatterjee starrer Joto Kando Kolkatatei film review
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:September 26, 2025 2:47 pm
  • Updated:September 26, 2025 2:47 pm   

বিদিশা চট্টোপাধ্যায়: আমরা যারা কলকাতাকে ভালোবাসি, তারা এই বদলে যাওয়া শহরে, ওই পুরনো শহরটাকে খুঁজে বেড়াই। যে শহরটা রয়ে গিয়েছিল ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার পর। আটপৌরে কলকাতার মধ্যে সেই যে ‘ক্যালকাটা’র দ্বিতীয় সত্তা রেখে সাহেবরা চলে গেল, তৈরি করে দিয়ে গেল একটা মিলমিশের সংস্কৃতি সেটা আমরা বাঙালিরা আজও বয়ে বেড়াই। কলোনিয়াল হ্যাংওভার? তা তো কিছুটা বটেই। কিন্তু সে যে যাই বলুক এই হ্যাংওভারের আশপাশেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে কিংবা জড়িয়ে থেকে গেল মানুষের জীবন। ইতিহাস আর সত্যি মানুষের জীবন নিয়ে কত গল্প, কত ব্যথা, কত বিষাদ, কত সুখের ছাপ রয়ে গেল শহরের বুকে। সে সব তো মানুষের জীবনের সত্যি কাহিনি। মানুষের যাপনের মধ্য দিয়েই তৈরি হয় শহরের প্রাণ। আর সেই শহর ঘিরে তৈরি হল গল্প, উপন্যাস, গান। তা সে সত্যজিৎ রায়ের ‘ফেলুদা’র গল্প হোক বা অঞ্জন দত্তর গান। তক্কে তক্কে থাকি, পথ চলতে গিয়ে কখন যে সেই শহরের আত্মার মুহূর্তের জন্য আবির্ভাব হবে তা বলা মুশকিল। সজাগ না থাকলে, দেখার সেই মন না থাকলে, সেই সিপিয়া ছবি চোখে পড়া মুশকিল। অনীক দত্ত পরিচালিত ছবি ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’ দেখতে দেখতে সেই শহরটাকে দেখতে পাচ্ছিলাম যেন।

Advertisement

এটা ঠিক যে সত্যজিৎ রায় এবং ফেলুদাকে ট্রিবিউট জানিয়ে এই ছবি। এবং ছবির মেকিংয়ে রয়েছে সেই ‘ফেলুদা’ সিনেমার চেনা প্যাটার্ন। এবং সেটা খুব সচেতনভাবেই করা। কিন্তু গল্পটা এমনভাবে বলা হয়েছে যে কোথায় ফ্যাক্টের শেষ আর ফিকশনের শুরু তার সীমারেখা মুছে দেওয়া হয়। নানা প্রশ্ন জাগে, তাহলে কি বাস্তবে সত্যিই এমন পেন্টিং ছিল? ব্যারিস্টারবাবুর বাড়ির আসল ইতিহাস তাহলে কেমন? ‘ট্রিংকা’জ-এ এমন অ্যাংলো গায়িকা থাকাও একেবারে অবিশ্বাস্য নয়, তাই না! সেকালে কোনও বাঙালিবাবুর তেমন এক সুন্দরী গায়িকার প্রেমে পড়াও আশ্চর্যের কিছু নয়! কলকাতা থেকে কার্শিয়াংয়ের দূরত্ব কী আর এমন– হতেই তো পারে, সমতলের বড় বাড়ির কেচ্ছা ঢাকতে কেউ পাহাড়ি কুয়াশার মধ্যে গিয়ে লুকিয়ে পড়ল। আর এইসব জানতে বাংলাদেশ থেকে যখন সাবা (অভিনয়ে কাজি নওশাবা আহমেদ) কলকাতায় এল তখন কিছু ‘দুষ্টু লোক’ পিছনে লেগে গেল। আর বাঙালি জীবনে ছড়া, ধাঁধা তো অবিচ্ছেদ্য অঙ্ক। ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এর আদলে এই ছবিতেও সে সব মজুত করেছেন পরিচালক। ছবি দেখতে দেখতে সাবা এবং তার কলকাতার সহকারী বন্ধু তোপসে (অভিনয়ে আবির চট্টোপাধ্যায়) সেই রহস্যভেদে জড়িয়ে পড়ল।

আর দর্শক হিসাবে আমাদেরও একটা কৌতূহল সৃষ্টি হল। কেসটা কোনদিকে গড়াবে? ধাঁধার উত্তর কী! এবং সত্যি বলতে কী, ছোটবেলায় ধাঁধা আছে এমন রহস্য উপন্যাস পড়ার সময় জেদ চেপে যেত, হেঁয়ালির রহস্যভেদ করার ইচ্ছেতে। ছবিটা দেখতে দেখতেও তাই হয়। সাবা যে বাংলাদেশ থেকে এল নিজের ভারতীয় পরিবারের ইতিহাস জানতে, নিজের দাদুকে খুঁজতে– তাহলে সে ছবির শেষে উত্তরাধিকার হিসেবে দাদুর রেখে যাওয়া ধাঁধার উত্তরে যে মূল্যবান সামগ্রীর কথা বলে গিয়েছেন সেটা সে পাবে? সাবার পাশাপাশি দর্শকের কৌতূহলী মনের এই যে জার্নি সেটাই অনীক দত্ত পরিচালিত ছবির মজা। হয়তো অনেক সংলাপে ভারাক্রান্ত হবেন, মাঝে মাঝে ধীরগতির লাগবে, কখনও মনে হতে পারে সত্যজিতের তুখড় অভিনেতাদের মিস করছেন– কিন্তু সেই যে পুরনো বাংলা ছবি দেখার মজা এবং অভিজ্ঞতা, সেটা ফিরিয়ে আনে ফিরদৌসুল হাসান প্রযোজিত ছবি ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ