ঢাকঢোল পিটিয়ে বিয়ে করব না, অঙ্কুশের মুখে এই কথা শুনে কী বললেন ঐন্দ্রিলা? আড্ডায় বিদিশা চট্টোপাধ্যায়
আজ (২৩ মে) মুক্তি পাচ্ছে রাজা চন্দ পরিচালিত ছবি ‘চন্দ্রবিন্দু’। প্রথমে ছবির নাম শুনে ভেবেছিলাম, বাংলা ব্যান্ড সংক্রান্ত নয় তো! তারপর জানলাম এই ছবির বেশ কিছু ব্যান্ড মেম্বার পরলোক গমন করেছেন। মৃত প্রিয়জনদের সঙ্গে যোগাযোগ ছবির বিষয়। এইরকম কিছু আপনাদের চেনাজানা পরিসরে ঘটেছে?
অঙ্কুশ : অভিজ্ঞতা হয়তো হয়নি। কিন্তু এই ইচ্ছেটা আমি অনেক জনকে প্রকাশ করতে শুনেছি। আমি নিজে ঠাকুরমার খুব ক্লোজ ছিলাম। ঠাকুরমা চলে যাওয়ার পর মনে হয়েছে নিশ্চয়ই কোথাও থেকে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে, বা সব দেখছে, জানছে। অনেক সময় মনে হত, পাশেই আছে। এটা নিয়েই ‘চন্দ্রবিন্দু’। যারা আমাদের ছেড়ে গিয়েছে, তারা যদি আমাদের দেখতে পায়, শুনতে পায় তা হলে কী হবে!
ঐন্দ্রিলা কখনও প্ল্যানচেট করেছেন?
– করিনি। তবে যদি করি তাহলে ডেফিনিটলি আমি আমার বাবা এবং আমার দাদুকে ডাকব। আমি দাদুর খুব খুব ক্লোজ ছিলাম।
আপনারা দুজনে ‘মির্জা’-র পর আবার একসঙ্গে। অঙ্কুশ যদিও অন্য নায়িকাদের সঙ্গে কাজ করেছেন, ঐন্দ্রিলা আপনাকে দেখিনি!
ঐন্দ্রিলা : হ্যাঁ, অঙ্কুশ আমাকে করতে দেয় না (হাসি)। ও বলেছে, ‘আমি কিন্তু বিভিন্ন নায়িকার সঙ্গে কাজ করব, তুমি কিন্তু আমাকে ছাড়া কাজ করবে না।’ আমি সেটা মাথা পেতে মেনেও নিয়েছি।
অঙ্কুশ : আরে বোলো না এসব! অনেস্টলি একটা কথা বলতে চাই। এটা খুব আনফরচুনেট যে সবাই এইভাবে ভাবে। পরোক্ষভাবে হলেও অনেকের কাছ থেকে এই ভাইবটা আমি পেয়েছি। প্রযোজক, পরিচালক, কো-অ্যাক্টর সবাই এই তালিকায় পড়বে। পুরুষের এমনিতেই বদনাম যে তারা দমন করতে চায়, আর বিশেষ করে এই বিনোদনের জগতে। কিছু মানুষ হয়তো নিজেদের পার্টনারকে দাবিয়ে রাখতে চায়। কারণ আমাদের পেশায় ইনসিকিওরিটি খুব সহজেই চলে আসে। আমার বান্ধবী কোন হিরোর সঙ্গে আউটডোরে শুট করছে- এই ধরনের ভাবনা আসে! তাই অনেক নায়ক চায় তাদের অভিনেতা বান্ধবী যেন অন্য হিরোর সঙ্গে কাজ না করে বরং ততদিন অপেক্ষা করুক যতদিন না তারা ফ্রি হয়। আর আমি নিজে এই ধরনের মানুষ একেবারেই নই, তাই আমার একেক সময় খুব খারাপ লাগে লোকে যখন আমাকে তেমন মনে করে। আর সেই কথা, নানা লোক ঘুরে আমার কাছে এসেছে।
ঐন্দ্রিলা, আপনি এটা কীভাবে হ্যান্ডল করেন?
ঐন্দ্রিলা: আমি আসলে ছোট থেকে এত কিছু হ্যান্ডেল করে এসেছি যে কিছু বলার নেই। হ্যাঁ, মাঝে মধ্যে খুব খারাপ লাগে কারণ সত্যি বলছি একটা কাজ পাওয়ার পিছনে যত কারুকার্য থাকে আমি অত বুঝি না। নিজের কাজটা ছাড়া আমি সত্যি আর কিছু বুঝি না। ‘মির্জা’-য় আমার কাজ প্রশংসিত হয়েছে তাতে আমি হ্যাপি। এটা ঠিক যে ‘মুসকান’ চরিত্রটা আমি বাইরের হাউস থেকে পাইনি, অঙ্কুশ আমাকে অফার করে। কিন্তু চরিত্রটা পেয়ে তার পিছনে যে পরিশ্রম করেছিলাম সেটা কিছু মানুষ দেখেছে, জানে। কিন্তু পরিশ্রমটা অনেকেই দেখতে চায়নি, বরং বলেছে ওর তো রোল পাওয়া খুব ইজি। নিশ্চয়ই এটা খারাপ লাগার জায়গা। সৌভাগ্যবশত বা দুর্ভাগ্যবশত আমার সব কাজ ওর সঙ্গে তাই হয়তো লোকে ভাবে যে ওকে ছাড়া কাজ করব না। কিন্তু সেটা একেবারেই ঠিক নয়।
অঙ্কুশ, প্রযোজনায় আপনি নতুন। আর এখন ইন্ডাস্ট্রিতে সব নায়কদের প্রোডাকশন হাউস রয়েছে। সতীর্থদের কাছ থেকে কতটা প্রতিযোগিতা ফেস করছেন?
অঙ্কুশ : টাফ কম্পিটিশন আছে। প্রোডিউসার হয়ে গেলে দায়িত্ব বেড়ে যায়। কারণ ছবির বীজ থেকে ছবি মুক্তি পাওয়া পর্যন্ত সব দিকে খেয়াল রাখতে হয়। এই প্রেশারটা মারাত্মক। আমি ‘মির্জা’-র সময় ডিস্ট্রিবিউটর, এগজিবিটর সবার কাছ থেকে হেল্প পেয়েছি। দেবদা আমাকে সাহায্য করেছে। আমার প্রোডাকশন হাউস থেকে ইউনিক কিছু ছবি করতে চাই। সব সময় হয়তো ‘মির্জা’র মতো বড় বাজেটের হবে না। আমাদের পরবর্তী ছবি ‘নারী চরিত্র বেজায় জটিল’, অ্যাকশনের পর কমেডি ছবি।
এই ছবিতেও আপনার নায়িকা ঐন্দ্রিলা। ঐন্দ্রিলা কতটা জটিল?
ঐন্দ্রিলা : আমি খুবই জটিল, তাই তো আমাকে কাস্ট করেছে (হাসি)।
অঙ্কুশ : হ্যাঁ, মানে ওর মতো জটিল চরিত্র কোথায় পাব!
ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার প্রায় পনেরো বছর হয়ে গিয়েছে। বর্ধমান থেকে এসে এখানে নিজের জমি খুঁজে পাওয়া। পিছন ফিরে তাকালে কেমন লাগে?
অঙ্কুশ : অদ্ভুত একটা অনুভূতি হয়। সত্যি কথা বলতে কী, কাজের প্রেশারে কীভাবে এতগুলো বছর পেরিয়েছে খেয়ালই করিনি। ২০১০ থেকে শুরু, নায়ক হব ভেবেছিলাম। তারপর টানা কাজ করে গিয়েছি। সাফল্যকে চেরিশ করা যেটা বলে সেটা করা আর হয়নি। আর আমার কাছে এটা ইমপসিবল ড্রিমের মতো। বর্ধমান থেকে আসা একটা ছেলে যার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কোনও কানেকশন নেই তার পক্ষে এটা সহজ নয়। কিন্তু অবসর সময়ে একটু রিওয়াইন্ড করলে যেটা অনুভব করি সেটা বলে বোঝাতে পারব না।
ঐন্দ্রিলা, আপনি তুলনামূলকভাবে কম কাজ করেন। আপনি অ্যাম্বিশাস নন, না কি কম কাজ আসে, বা কাজের জগতে রাজনীতির শিকার?
ঐন্দ্রিলা : আমি কতটা অ্যাম্বিশাস সেটা আমার বাড়ির লোকজন জানে। কিন্তু আমি নিজে থেকে কাজ চাইতে পারব না। আর হ্যাঁ, আমি রাজনীতির শিকার আগে হয়েছি। আর এটা এত নিশ্চিত করে বলতে পারলাম কারণ আমি জানি তাই। একবার, দুবার হয়েছি- তখন সেই সুযোগ পেলে হয়তো কেরিয়ারে আরও একটু বেটার জায়গায় থাকতাম। আমি কাজ নিয়ে খুব খুঁতখুঁতে। যাঁরা প্যাশনেটলি কাজটা করতে চান তাঁদের সঙ্গেই কাজ করতে চাই। এখন সিনেমা একটা মানি মেকিং ব্যবসা হয়ে গিয়েছে, যেখানে কাজটার প্রতি ভালোবাসা নেই। তেমন মানুষের সঙ্গে কাজ করি না। আবার কিছু কাজ জানি আমি করব, তারপর দেখলাম কাস্ট বদলে গিয়েছে। অঙ্কুশ জানে, এটা হয়েছে আমার সঙ্গে। তাতেও কাজ কমে যায়। আর এইভাবেই আমার দিন কাটছে, দিন চলছে। তাছাড়া আমি সবাইকে বলতে চাই যে আমার কাজের জায়গাটা এত ইজি না, আমাকেও প্রতিনিয়ত স্ট্রাগল করতে হয়।
অঙ্কুশ : ওর সাপোর্টে একটা কথা বলতে চাই। ছোটবেলা থেকে কাজ করছে। আর পিওরলি নিজের ট্যালেন্ট দিয়ে কাজ পেয়েছে। কিন্তু যত বড় হবে, সময় যাবে, যুদ্ধগুলো পালটে যাবে। ও কাজ দেখিয়ে কাজ পাওয়ার আশা করে। কাজ পাওয়ার জন্য ম্যানিপুলেট করা, গেম খেলা, তেল দেওয়া ওর ধাতে নেই। তাই ও জানে ওকে লম্বা অপেক্ষা করতে হবে।
আপনারা অনেকদিন একসঙ্গে দীর্ঘ সম্পর্কে। টিকিয়ে রাখতে এফর্ট দিতে হয় নিশ্চয়ই? কে বেশি এফর্ট দেয়?
ঐন্দ্রিলা : শুনতে খুব ক্লিশে লাগবে কিন্তু খুব বেশি এফর্ট দিতে হয় না। আমরা ঝগড়া করি, মাথাগরমও করি, তবে সেটাকে সিরিয়াসলি নিই না। ওভারথিংক করলে আমি দেখেছি সেটা নেগেটিভ দিকেই যায়। আর ওকে আমি আমার ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে চিনি। আমরা ভালো সময়, খারাপ সময় দুটোই পার করে এসেছি। এত কিছু পার করে আসার পর জানি যে বেশি এফর্ট দিতে লাগবে না। মনে হয় বাকি পথটাও পেরিয়ে যাব!
কে বেশি অভিমানী?
ঐন্দ্রিলা : আমি।
কে আগে সরি বলে?
অঙ্কুশ : সরি বলতে হয় না। আমরা ঝগড়া বেশিক্ষণ জিইয়ে রাখতে দিই না। মিটিয়ে নিই।
কে বেশি কমপ্রোমাইজ করেন?
অঙ্কুশ : আমাকেই করতে হয়।
বিয়েটা কবে?
ঐন্দ্রিলা : ওটা হবে না, এটা ডিসাইডেড।
অঙ্কুশ : যদি সই করে হয় তাহলে ঠিক আছে, আমি খরচ করতে পারব না।
ঐন্দ্রিলা : আসলে ওর এক্সপিরিয়েন্স তো খারাপ। ওর বিভিন্ন এক্স গার্লফ্রেন্ড ছিল, তাদের দেখেছে, ওর অভিজ্ঞতা খুব সুখের নয়। তাই ও আর খরচের দিকে যেতে চায় না। তা ছাড়া আশেপাশে তো দেখেছে খরচ করে বিয়ে করার পর কী ঘটনা ঘটেছে। তাই আর খরচের দিকে নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.