Advertisement
Advertisement
Dhumketu

স্মৃতির ধূমকেতু, এক ফ্রেমে দেব-শুভশ্রী, পেশাদারিত্বের এক নতুন উপাখ্যান: অরিত্র দত্তবণিক

'সেই ভালোবাসার সহজ সারল্য সবই আমার কিশোর মনে গেঁথে আছে', অরিত্র দত্তবণিক।

Aritra Dutta Banik being nostalgic about dhumketu
Published by: Arani Bhattacharya
  • Posted:August 5, 2025 4:30 pm
  • Updated:August 5, 2025 5:16 pm   

অরিত্র দত্তবণিক: গতকাল যেন ফিরে এসেছিল সোনালি দিনগুলো। এক মঞ্চে দেব এবং শুভশ্রী, যাঁদের রসায়ন একসময় বাংলা সিনেমার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল। সেই মঞ্চে আমি, অরিত্র দত্ত বণিক, একসময় তাঁদেরই সহকর্মী হিসেবে শিশুশিল্পী থেকে তাঁদের বন্ধু হয়ে উঠেছিলাম, তাঁদের অফস্ক্রিন সম্পর্কের আবেগগুলো কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। বহু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাঁদের সঙ্গে এক মঞ্চে কাটানো সেই দিনগুলো আজও স্মৃতিতে অম্লান। সেই বন্ধুত্বের গভীরতা, সেই ভালোবাসার সহজ সারল্য সবই আমার কিশোর মনে গেঁথে আছে।

Advertisement

সময়ের স্রোতে সেই সম্পর্ক ভেঙেছিল, তাদের পথও আলাদা হয়ে গিয়েছিল। দীর্ঘ প্রায় আট-নয় বছর ধরে তাদের মধ্যেকার নীরবতা, না দেখা, না বলা কথাগুলো যেন বাংলা সিনেমার এক অলিখিত অধ্যায় হয়ে ছিল। কিন্তু গতকাল ‘ধূমকেতু’ (Dhumketu) ছবির ট্রেলার লঞ্চ অনুষ্ঠানে সেই অধ্যায়ের এক অন্যরকম পুনরুল্লেখ হলো। যখন তাঁরা মঞ্চে এলেন, তখন লক্ষ লক্ষ অনুরাগী এবং হাউসফুল অডিয়েন্সের উচ্ছ্বাস যেন বাঁধ ভাঙল।

পুরনো ছবির গান, সংলাপ এবং সেই চিরন্তন রসায়ন সবকিছু যখন তাঁরা আবার দর্শকের সামনে নিয়ে এলেন, তখন এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি যে তাদের মধ্যেকার দূরত্বটা এত বছরের। সেই একই চোখ, একই হাসি, একই অনবদ্য অঙ্গভঙ্গি। দর্শক যেন নস্টালজিয়ার এক বন্যায় ভেসে গেল। আমার ভেতরের সেই ছোটবেলার অরিত্র যেন এক নিমেষে ফিরে এলো, যে দেখেছিল তাদের সহজ বন্ধুত্ব।

এই অনুষ্ঠানটি শুধু একটি সিনেমার প্রচার ছিল না, এটি ছিল দায়িত্ববোধ, পেশাদারিত্ব এবং এক পরিণত মানসিকতার এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত। জীবনের পথ তাঁদের ভিন্ন দিকে নিয়ে গেছে। দেব এখন রুক্মিণী মৈত্রের সঙ্গে সম্পর্কে, এবং শুভশ্রী হলেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর স্ত্রী এবং দুই সন্তানের মা। এই নতুন সম্পর্কগুলো তাঁদের আরও পরিণত করেছে। সবচেয়ে বড় কথা, তাদের বর্তমান সঙ্গীরাও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিরই সদস্য এবং তাঁরা যে নিজেদের ভালোবাসার মানুষকে তাঁর পেশাদারিত্বের সম্মান জানাতে এতটা মানসিক সমর্থন দিয়েছেন, তা অনস্বীকার্য। তাঁদের এই উদারতা এবং বিশ্বাস না থাকলে এই পুনর্মিলন হয়তো সম্ভব হত না।

একজন সত্যিকারের শিল্পী হলেন তিনি, যিনি তার ব্যক্তিগত জীবনের সব ঝড়ঝাপটা, সব আবেগ সামলে মঞ্চে উঠে তার চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলেন। যিনি জীবনের বড় মিথ্যাকে সত্যের মোড়কে এমনভাবে উপস্থাপন করেন যে দর্শক কোনটা বাস্তব আর কোনটা অভিনয় তা গুলিয়ে ফেলেন। দেব এবং শুভশ্রী গতকাল সেই প্রমাণই দিলেন। তাদের এই অনবদ্য পেশাদারিত্ব দেখে আমি মুগ্ধ এবং অনুপ্রাণিত। অভিনেতা হিসেবে এই ঘটনাই আমাকে শেখাল যে শিল্পীর জন্য শিল্পই শেষ কথা। শিল্পই সব আবেগকে জয় করে, সব দূরত্বকে মুছে ফেলে।

এই পুনর্মিলন শুধুমাত্র পুরনো দিনের নস্টালজিয়া ফিরিয়ে আনেনি, বরং এটি এক নতুন সংজ্ঞা তৈরি করল। শিখিয়ে দিল, একজন শিল্পীর পেশাদারিত্ব কতটা গভীর হতে পারে, কত বড় হতে পারে তার মনের বিস্তার। ‘ধূমকেতু’ সিনেমার মতোই তাঁদের পুরনো সম্পর্কের স্মৃতিরা যেন আবার নতুন করে আকাশে জ্বলজ্বল করে উঠল। একজন পরিণত যুবক হিসেবে গতকালের এই দৃশ্য আমাকে শুধু আমার শৈশবের স্মৃতিই ফিরিয়ে দেয়নি, বরং দায়িত্ববোধ এবং পেশাদারিত্বের এক নতুন পাঠও শেখাল।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ