দশ বছরের অপেক্ষার পর ‘ধূমকেতু’। অতীত, আবেগ এবং প্রাক্তন প্রসঙ্গে কী বললেন দেব? মুখোমুখি শম্পালী মৌলিক।
ইমোশনাল লাগছে? আপনার প্রযোজিত প্রথম ছবি, সঙ্গে রানা সরকার, দশবছর পর মুক্তি পাচ্ছে। এবং দেব-শুভশ্রী জুটির শেষ ছবি।
– (হাসি) আমার মনে হয়, আজকে আরও পরিষ্কার ভাবে বোঝাতে পারব কেন ‘দেব এন্টারটেনমেন্ট ভেঞ্চার্স’ লঞ্চ করেছিলাম। সেই সময় আমি যে ধরনের গল্প বলতে চাইছিলাম, যে ধরনের গল্পে অভিনয় করতে চাইছিলাম, সেই ধরনের গল্পে আমাকে কেউ বিশ্বাস করত না। মনে হয়েছিল আর বেশি দিন রিমেক করতে পারব না। তখনও রিমেক রমরমিয়ে চলছে। ‘রংবাজ’ দারুণ চলেছিল। মনে হত একদিন এমন আসবে লোকে আমাদের রিপ্লেস করে দেবে। তার আগে আমাদের নিজেকে বদলাতে হবে। এবং ‘ধূমকেতু’ (Dhumketu) এমন একটা বিষয়, মনে হয়েছিল এই ধরনের বিষয়কে আমার সমর্থন করা উচিত। সেই জন্যই আমার প্রোডাকশন হাউস খোলা। ভাগ্যচক্রে ছবিটা মুক্তি পায়নি। এবার ১৪ আগস্ট আসছে। নিশ্চয়ই আবেগ কাজ করছে। ‘ধূমকেতু’র সঙ্গে যে আবেগটা আমার সবচেয়ে জড়িয়ে, সেটা হল প্রোডাকশন হাউসের প্রথম ছবি। নতুন ভাবে যে দেব-ও গল্প বলতে পারে, সেটা আমি দেখাতে চেয়েছিলাম সেই সময়। আমি খুব খুশি যে ছবিটা শেষ পর্যন্ত দর্শকের কাছে পৌঁছচ্ছে।
২০১৫-’১৬-এ যে ছবি তৈরি হয়ে রয়েছে নানা জটিলতায় মুক্তি আটকে গিয়েছিল। বরফ গলল কী করে?
– সময় সবচেয়ে বড় ওষুধ। আমার আর রানাদার মধ্যে যে ঝামেলা ছিল সেটা আমরা ২০১৯ সালেই মিটিয়ে নিয়েছিলাম। এ ছাড়া নানা আইনি জটিলতা চলছিল। একসময় সকলেই বুঝতে পারে, একটা ভালো ছবি মুক্তি পাক।
‘ধূমকেতু’-র শুটিংয়ে নৈনিতালে যাওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে জানি, মাইনাস তিন ডিগ্রিতে শুটিং করেছেন। মেকআপ নিতে হত প্রায় চার ঘণ্টা। বিক্রম গায়কোয়াড় মেকআপ করেছিলেন। প্রচুর পরিশ্রম জড়িয়ে ছবিটার সঙ্গে। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ও বলেছেন, এটা হয়তো দেবের সেরা।
– প্রায় ছ’ঘণ্টা লাগত মেকআপে। আমারও মনে হয় আমার সেরা কাজ। প্রায় ৪৮-৪৯টা ছবি হয়ে গেল আমার। ‘ধূমকেতু’ সাংঘাতিক তৃপ্তি দিয়েছিল। আশি বছরের বৃদ্ধের চরিত্রে যে আমি করতে পারি তখন কেউ বিশ্বাস করেনি। আমার মা পর্যন্ত সেট-এ দেখে আমাকে চিনতে পারেনি। ২০১৫ সালে আমি সাহস দেখিয়েছিলাম। শুধু শারীরিক পরিবর্তন বা লুক নয়, কণ্ঠস্বরও তো বদলাতে হয়েছে ডাবিংয়ে। আমার তিনটে বয়স, লুক-ও তিনটে। আমি যখন ডাবিং করছিলাম, কৌশিকদা ‘অর্ধাঙ্গিনী’র শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিল। আমি ডাবিং করেই লন্ডনে চলে গিয়েছিলাম। কতবার কৌশিকদাকে ফোন করেছি, যে ডাবিংটা কেমন লাগছে বলো। শুনে বলল, ‘দারুণ লাগছে’। কিপিং মাই ফিঙ্গার্স ক্রসড।
‘ধূমকেতু’-র যখন শুটিং চলছিল, তার আগে আপনার আর শুভশ্রীর ব্রেক আপ হয়ে গিয়েছিল। ফলে এই ছবিটা ছিল আপনাদের কামব্যাক ফিল্ম। কিন্তু সেটা আর হয়নি। এত বছর পর পর্দায় নিজেকে শুভশ্রীর সঙ্গে প্রেম করতে দেখে কেমন লাগছে?
– আমার মনে হয়, অভিনেতারা ওইরকম ভাবে দেখে না। আমরা অনেকটা সময় পেরিয়ে এসেছি। দু’জনের জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। তার এখন সংসার আছে, কেরিয়ার আছে। আর ও খুব ভালোভাবে সামলাচ্ছে। আর আমার কেরিয়ারে আমিও, ‘খাদান’-এর পর চিন্তা ছিল আর আলাদা কী করব এবং বড় কীভাবে করব। তারপর ‘রঘুডাকাত’ করলাম। প্রযোজককে কনভিন্স করলাম বড় স্কেলের ছবি করা নিয়ে। এগুলো নিয়েই বেশি ভাবনা। এক্ষেত্রে ভাবনা হল, দশ বছরের পুরনো ছবি হলেও, দর্শকের কাছে বলতে চাই গল্পটা আজকের। সবাই রিলেট করতে পারবে। মনে হয়, শুভশ্রীও তাই ভাবছে। যে ভালোবাসা দেব-শুভশ্রী জুটি হিসাবে আগে পেয়ে এসেছে, সেটা যেন এই ছবিতেও পাই আমরা। শুধু দেব-শুভশ্রীর নামে নয়, যারা যারা পার্ট করেছে, দুলালদা, রুদ্রনীল, অলোকাদি প্রত্যেকে দারুণ করেছে। অনুপম দারুণ সুর দিয়েছে। কৌশিকদার সেরা ছবি মনে হয়। এইরকম ম্যাসিভ স্কেলের লার্জার দ্যান লাইফ ছবি যে কৌশিকদা বানাতে পারে, দর্শক দেখবে। দার্জিলিংয়ের গল্প ছিল, সেখানে থেকে রানাদা গল্পটা নৈনিতালে নিয়ে যায়। বাংলা ছবির জন্য ব্যাপারটা হিউজ ছিল। পুরো টিম ওয়ার্কটাই দুরন্ত।
তখন দেবের বয়স অনেক কম। সে তখন স্টার হলেও এখন মেগাস্টার। সে ফেল করতে পারে কেউ মানে না। এই ছবিটা তো বড় পরীক্ষা।
– এই ছবিতে আমি ফেল করব না। প্রযোজক হিসাবে, অভিনেতা হিসাবে, এটা বলতে পারি। ব্যবসার সঙ্গে ফেল করার যোগ নেই। এভরি হিট ফিল্ম ডোন্ট নিড টু বি আ গুড ফিল্ম। আর এভরি গুড ফিল্ম ডোন্ট নিড টু বি আ হিট ফিল্ম। প্যাশন হচ্ছে গল্প বলা এবং নিজেকে ভাঙা। দর্শক যেন না মনে করে আমি ঠকাচ্ছি। ‘প্রধান’-এর পরে আমি ‘প্রজাপতি টু’ করতে চাইনি, চেয়েছিলাম অ্যাকশন ফিল্ম অর্থাৎ ‘খাদান’ করতে। পরে ‘প্রজাপতি টু’ করি। আমি স্রোতের বিপরীতে যেতে চেয়েছি, না হলে টিকে থাকতে পারব না।
‘ধূমকেতু’ শুটিংয়ের একটা ঘটনার কথা বলি। দেব-শুভশ্রীর বিয়ের সিকোয়েন্স ছিল।
– ছিল বুঝি (জোরে হাসি)।
খুব সুন্দর সিকোয়েন্স। শুটিংয়ের গল্পটা কিছুটা জানি। ওই সিকোয়েন্সে মেক আপ ভ্যানটা একটু দূরে। শুভশ্রী শট দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ভ্যানে ফিরে গিয়েছিলেন। সেটা আপনি পরে জেনেছিলেন। ঠিক কী অনুভূতি ছিল আপনার?
– আমার মনে নেই। অনেক বছরের পুরনো গল্প। আমার এটাও মনে নেই, সত্যি কি জানতাম কেঁদেছে কি কাঁদেনি। মনে হয় শুভশ্রী ভালো বলতে পারবে। কিছু জিনিস কেন হয় সেই মানুষটাও হয়তো জানে না। আবেগ কখন কীভাবে চালিত করে। সেইদিনগুলো চলে গেছে, আর আলোচনার দরকার নেই। শুভশ্রী সুন্দর সংসার করছে, সে তার জীবনে হ্যাপি। আমিও আমার জীবনে খুব খুশি।
তবু সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা কি কখনও পিছন ফিরে দেখি না? আমরা তো মানুষ।
– সব মানুষ কি এক হয়? আমি অতীতে থাকতে ভালোবাসি না। তার মানে অতীতকে অসম্মান করি, তাও না। আমার সামনে এত কাজ। এত মানুষ তাকিয়ে আছেন আমার দিকে, কাজে মনোযোগ দিতেই হবে। আমি নিজেকে ইন্সপায়ার করি, মোটিভেট করি এইভাবে যে, কারও ক্ষতি করব না, আর নিজের ক্ষতিও হতে দেব না।
আগামী দিনে দেব-শুভশ্রী জুটিকে একসঙ্গে পাওয়া যেতে পারে?
– সময়, আবার বলছি। আমরা পরস্পরকে দেখিইনি শেষ আট-দশ বছর। যা দেখেছি একটা দুটো অনুষ্ঠানে, একটা অ্যাওয়ার্ড শোতে, যেখানে আমি জানতাম না ওকে অ্যাওয়ার্ড দেব।
‘টকিং টার্মস’ তো আছে?
– না, বললেই চলে। আমাদের পারস্পরিক সম্মান আছে। সোশাল মিডিয়ায় দেখি ওর কাজ নিয়ে চর্চা হয়, ভালো কাজ করছে। শেষ ছবিটা দারুণ চলেছে। সংসার এবং কেরিয়ার দুটোকেই ভালো ব্যালান্স করছে, যেটা সহজ নয় একজন মেয়ের পক্ষে। আই উইশ হার অল দ্য লাক। জীবনে আরও উন্নতি করুক। শান্তিতে থাকুক, সেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। (হাসি)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.