Advertisement
Advertisement

‘ধূমকেতু’ই গড়ল সেতু, প্রাইম টাইমে রাজ্যের সব হলে বাংলার ছবির শো ৫০%: কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়

'১৪ আগস্ট থেকে সিনেমার যুবভারতী কানায় কানায় পূর্ণ থাকবে', ধূমকেতু মুক্তির প্রাক্কালে কলম ধরলেন পরিচালক।

Dhumketu: 50 percent prime time show for bengali films in WB, says Koushik Ganguly
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:August 12, 2025 2:23 pm
  • Updated:August 12, 2025 4:03 pm   

কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়: কোথা দিয়ে দশটা বছর কেটে গেল! টেরই পেলাম না। জন্মের পরই হারিয়ে যাওয়া সন্তানের মুখ চেয়ে বসে ছিলাম আমি। তাকে খুঁজে আনল প্রযোজক দেব ও রানা সরকার। ১৪ তারিখ সেই সন্তানের ইস্কুলে যাওয়া শুরু হবে। অসংখ্য মানুষের সঙ্গে তার পরিচয় হবে। আমি ও আমরা সে আবেগ আটকেই রাখতে পারছি না। ভাবনার বীজ থেকে কাহিনীর কৈশোর পেরিয়ে চিত্রনাট্যের যৌবনে পা দিয়েই ‘ধূমকেতু’ আমাদের টিমের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিল। তার পর দীর্ঘ অপেক্ষার পর যখন তৈরি হল ছবিটা তখন এত বছরের জমে থাকা আগ্রহ আগ্নেয়গিরির মতো ফেটে পড়ল বক্স অফিসে শুভমুক্তির ৬ দিন আগেই!

Advertisement

১০ বছর তো দু’ একদিন নয়। রামচন্দ্র আর মাত্র ৪ বছর বেশি বনবাসে ছিলেন। সমাজ বদলেছে, মানুষ বদলেছে, তাই সিনেমার ভাষা আঙ্গিকও পালটে গেছে। পালটে গেছি আমি, পালটেছে দেব, শুভশ্রীর জীবন ও দৃষ্টিভঙ্গি! অজান্তেই মুঠো ফোনে বিশ্ব দেখা দর্শক বেমালুম চাহিদা বদলে নতুন মেজাজের ছবি খুঁজতে শুরু করে দিয়েছে। তাদের আর সুইজারল্যান্ডের গান দিয়ে হলে টানা যাচ্ছিলই না। এই বদলের ডাকে সাড়া দিয়েছিল ‘ধূমকেতু’! সেটা এতটাই জোরালো ছিল যে আজ এই দীর্ঘ অপেক্ষার পরও ইমোশনের রিখটার স্কেলে তার তীব্রতা কমেনি। বুদ্ধিমান শিল্পীরা বদলের সেই ভূকম্পন বুঝে এগিয়ে যান নতুন পথে। প্রথমে দেব, তারপর শুভশ্রী তাদের ‘কমার্শিয়াল’ ছবির গন্ডির বাইরে পা রেখে বারবার অন্য মেজাজের ছবিকে গুরুত্ব দিতে শুরু করে। দেব ‘বুনোহাঁস’ থেকে সেই যাত্রা শুরু করে, নিজেই প্রযোজক হয়ে পরপর নানা মেজাজের সুপারহিট ছবি করে মাল্টিপ্লেক্সে ঢালাই করে নেয় তার আসন। ‘পরিণীতা’, ‘বাবলি’, ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ থেকে ‘গৃহপ্রবেশে’ এসে শুভশ্রীরও পাকাপোক্ত উপস্থিতি তৈরি হয়ে গেল শহুরে দর্শকের মনে। আমিও ‘খাদ’, ‘বিসর্জন’, ‘নগরকীর্তন’, ‘অর্ধাঙ্গিনী’, ‘দৃষ্টিকোণ’, বা ‘অযোগ্যে’র মতো ছবি বানাতেই থেকেছি এই দশ বছরে!

Dev on working with Subhashree Ganguly in Dhumketu

জেলায় জেলায় পুরনো হল সরে প্লেক্স হয়ে গেছে! এরকম একটা বিবর্তনের পর ‘ধূমকেতু’র মতো হয়ে সিনেমার আকাশে আছড়ে পড়ল দে-শু জুটি! লাগামহীন আবেগে ভেসে যাচ্ছে বাংলার অনুরাগীরা! এক সপ্তাহ আগেই অগ্রিম বুকিং খুলে দিয়েও সামলে রাখা যাচ্ছে না। হিন্দি ছবি সরিয়ে ‘ধূমকেতু’র শো বাড়িয়ে দিচ্ছেন হল মালিকেরাই। এটা কম বড় কথা? বাংলা ভাষার ছবি। আমাদের মাতৃভাষায় ছবি! তার প্রতি ভালোবাসা ও আদরের সঙ্গে আর কোনওকিছুর তুলনা হবে না। দক্ষিণ ভারতে বা মারাঠি, পাঞ্জাবি ছবির দুনিয়ায় নিজেদের ভাষার ছবিকে তারা এখন বুক দিয়ে আগলে রাখে! বাংলা সেই দৌড়ে সামান্য হলেও বারবার পিছিয়ে যায় ধারাবাহিকভাবে প্রচেষ্টার অভাবে। ব্যক্তিগত স্বার্থে উদ্যোগ কোনওদিন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি, হবেও না। ‘ধূমকেতু’কে কেন্দ্র করে এই যে সরকারিভাবে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা সার্বিকভাবে বাংলার মর্যাদার লড়াইয়ের স্রোতে বেয়ে নিয়ে যেতে হবে। পরপর ভালো ছবি, প্রতিটি হলে বাধ্যতামূলকভাবে প্রাইমটাইমে চালিয়ে চালিয়ে নেশা তৈরি করতে হবে। সিনেমার আবেগ বাঙালির রক্তে মিশে, সেটাকে অভ্যেস করিয়ে করিয়ে জাগাতেই হবে। প্রাইম টাইমে বাংলার সব হলে ৫০% শো বাধ্যতামূলকভাবে পাবে বাংলা ছবি। এই সিদ্ধান্তের জন্য বহু বছর ধরে বাংলা সিনেমা অপেক্ষা করেছিল। ‘ধূমকেতু’ একটা সেতু হয়ে এল। ধূমকেতুর হাত ধরেই, সরকারের হস্তক্ষেপে তা সম্ভব হয়েছে এতদিনে। আগামী সময়ে এর ফল আমরা সবাই ভোগ করব, এবং এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এমন জায়গায় বাণিজ্যকে নিয়ে যেতে হবে যে, হল মলিকেরাও এগিয়ে এসে প্রদর্শনের শতকরা হিসাবটা নিজেরাই বাড়িয়ে দেবেন।

Kaushik Ganguly

আমি খালি ভাবতাম, ছবি দেখে দর্শক কেবল ফেসবুকে ভালোমন্দ লিখবেন, ছবি পোস্ট করবেন, রিলস্ দেবেন তা তো হয় না। যাঁদের বিনোদনের জন্য এই বিরাট শ্রম, তাঁরা কি আরেকটু ভার নেবেন না বাংলা ছবির? ‘ধূমকেতু’র অ্যাডভান্স খোলার পর মনে হল, তাঁরা যেন উপচে পড়ে টিকিট কেটে বুঝিয়ে দিচ্ছেন যে, “আমাদের ভালো ভালো উপভোগ্য ছবি উপহার দিন, আমরা এরকমভাবেই এগিয়ে আসব বাংলা সিনেমার কাছে।”
ধারাবাহিকভাবে সেই সাপ্লাইটা নির্মাতাদের দিতেই হবে। বিষয় নির্বাচন থেকে ছবি বানানোর প্রতিটা ধাপে লাইন দিয়ে টিকিট কেটে আসা দর্শকদের মুখগুলো ভাবতেই হবে। ভাবতেই হবে হল মালিকদের কথা। একদিন তাঁরা যে তীব্রতা নিয়ে বাংলা ছবিকে গর্বের সঙ্গে পৌঁছে দিতেন মানুষের কাছে। কার দোষে এতদিন তাঁরা আর আমাদের সিনেমাগুলোকে টানতে পারছিলেন না? বছরে হাতে গোনা কয়েকটা ছবি বড় ব্যবসা করেছে, বাকিরা? পর্যালোচনা করতে হবে, আত্মসমালোচনা করতে হবে। ক্রাই বেবিদের কোনও স্থান নেই শিল্পে বা ক্রীড়ায়। খেলে প্রমাণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, নেট প্র্যাক্টিসে সেঞ্চুরি কিন্তু রেকর্ডে যায় না। আসল লড়াইটা মাঠে। ‘ধূমকেতু’কেও সমানভাবে মাঠেই লড়াই করতে হবে, বাঁচতে হবে, জিততে হবে। বাংলা টিমের স্বার্থে। বাংলা সিনেমার মর্যাদার স্বার্থে। একটা বড় আশার আলো যে, ১৪ আগস্ট থেকে সিনেমার যুবভারতী কানায় কানায় পূর্ণ থাকবে। ‘ধূমকেতু’র এরকম উন্মাদনায় আমি নিশ্চয়ই আবেগপ্রবণ হয়ে আছি। তাই অনেক মনের কথা লিখে ফেললাম। হয়তো কিছুটা জ্ঞানও দিয়ে ফেললাম। এটুকু না হয় আজ আমায় প্রশ্রয় দিলেন। ১৪ আগস্ট ভোর ২টোর লগ্নে পুজোর আগেই দেব-দেবীর যৌথ পক্ষ শুরু হবে বাংলার প্রতিটা বড় পর্দায়। ১০ বছর পর আপনাদের জানাই আগাম শুভ-দেব দর্শন।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ