রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: বৃহস্পতিবার বিকেলে মিউজিক ভিডিওর শুটিং চলাকালীন মন্দারমণি থেকে অপহৃত পরিচালক শ্রীকান্ত ওরফে প্রিন্স। জানা যায়, দিন তিনেক আগে কলকাতা থেকে ১৭ জনের একটি টিম নিয়ে মন্দারমণিতে শুটিং করতে গিয়েছিলেন ওই পরিচালক। শুটিং চলছিল মন্দারমণির নিকটবর্তী লাল কাঁকড়ার বিচে। সেখানেই একটি প্রাইভেট গাড়িতে এসে হাজির হয় চার দুষ্কৃতী। এর পরই গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় পরিচালককে। রাতভর তল্লাশি অভিযানের পর অবশেষে সেই পরিচালকের খোঁজ পেল পুলিশ। ঠিক কী ঘটেঠিল? সংবাদ প্রতিদিন-এর কাছে মুখ খুললেন প্রিন্স।
পরিচালক জানিয়েছেন, “বৃহস্পতিবার আমাদের শেষ শুটিং চলছিল পুরুষোত্তমপুর লাল কাঁকড়ার সমুদ্র সৈকতে। ঠিক রামকৃষ্ণ মিশনের সামনে। আচমকাই সেখানে এসে একজন আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন- এখানে কি তোমাদের শুটিং চলছে? আমি জানাই, হ্যাঁ। কথা বলার মাঝেই আমাকে টেনে গাড়িতে ঢোকানো হয়। তারপরে আমাকে নিয়ে আসা হয় খড়্গপুর। আমাকে বলা হয়, ‘চুপ করে বোসো। আধঘণ্টার মধ্যেই ছেড়ে দেওয়া হবে।’ খড়্গপুরে নিয়ে আসার পর আমি জানতে পারি, এই অপহরণের নেপথ্যে স্বর্ণকমল মুখোপাধ্যায়। নিজেকে পেশায় উকিল বলে দাবি করার পাশাপাশি তিনি প্রযোজকও।”
একটু থেমে শ্রীকান্ত ওরফে প্রিন্সের সংযোজন, “উনি তিনটে মিউজিক ভিডিও করেছেন। তো আমাদের সঙ্গেও কাজ করার ইচ্ছেপ্রকাশ করেছিলেন। আমরা সাধারণত ডান্স কোরিওগ্রাফি বা মিউজিক ভিডিওর ডিরেকশন দিই। আমাদের কাজ শুধু প্রজেক্টটা কমপ্লিট করে দেওয়া। সেটা কোথায় বিক্রি হবে বা তার থেকে কত টাকা আয় হবে, সেসব জানা আমাদের কাজ নয়। উনি আমাকে বলেছিলেন, আমি যেন কোথাও ওঁর কাজগুলি বিক্রি করিয়ে দিই। আমি ওঁর জন্য তিন-চারটে মিউজিক ভিডিওর করেছি এবং বিক্রি সংক্রান্ত বিষয়ে সেই প্রযোজককেই ফোন নম্বর দিয়েছিলাম কথা বলার জন্য। সেভাবে উনিও ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে চুক্তি করেন। আমি এক্ষেত্রে কোনওভাবেই মিডলম্যান ছিলাম না। তার বেশ কিছুদিন বাদে, ওই প্রযোজক সিনেমা তৈরি করার ইচ্ছেপ্রকাশ করেন। বাজেট ১৪-১৫ লক্ষ টাকা। তিন-চার দিন শুটিং হয়েছিল। আর উনি ২ দিনের টাকা দিয়েছিলেন। বাকিটা বকেয়া ছিল।” সেটা নিয়েই সমস্যা বাঁধে।
কীরকম? খড়্গপুর থানায় বসেই পরিচালক জানালেন, “কাজ বন্ধ হওয়ার পর টিমের যিনি ম্যানেজার ছিলেন, উনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার পর কিছু কিছু টাকা দিয়ে প্রযোজক শুটিং শেষ করতে বলেছিলেন। সেটাও দু’ তিন বছর আগের কথা। আমি প্রযোজককে বলেছিলাম, শুটিং শেষ করে প্রজেক্টটা কোথাও বিক্রি করে দিতে। নইলে খরচ করা পুরো টাকাটাই জলে যাবে। উনি এরপর পালটা আমাকেই দুষতে থাকেন। হুমকি দেন- ‘কোথাও সেই সিনেমা বিক্রি করব না। যে টাকা তোকে দেওয়া হয়েছে, সেটার পুরোটা ফেরত দিতে হবে।’ মাঝেও আমাকে দু’ একবার বলেছিলেন। এর আগে দুর্গাপুরেও আমাকে অপহরণ করার ফন্দি এঁটেছিলেন ওই প্রযোজক স্বর্ণকমল। কিন্তু বিষয়টা চেনা-পরিচিতর মধ্যে বলে আমি থানা-পুলিশ করিনি। আমি বলেছিলাম, সামনাসামনি বসে বিষয়টা মিটিয়ে নিতে। তার পর আর বসা হয়নি। আমিও ভুলে গিয়েছিলাম। এবার মন্দারমণিতে আমাকে শুটিং স্পট থেকে অপহরণ করা হয়। কিন্তু খড়্গপুরে গিয়েও উনি আমার সামনে আসেননি। পরিবর্তে বাকি ছেলেপুলেকে দিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলান। এখন খড়্গপুর থানায় বসে রয়েছি। তবে পুলিশের কাছ থেকে ভীষণ সাহায্য পেয়েছি। গতকাল সারারাত আমাকে খুঁজেছেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.