Advertisement
Advertisement
Tollywood news

জাতীয় পুরস্কারের নেপথ্যে লবির জোর? ‘বিতর্কটাই অপছন্দ’, সাফ জানালেন অর্জুন

অর্জুন নবীন প্রজন্মের পরিচালক। এটা তাঁর চতুর্থ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি।

film director arjunn dutta interview after winning national award
Published by: Arani Bhattacharya
  • Posted:August 8, 2025 3:04 pm
  • Updated:August 8, 2025 3:45 pm   

শম্পালী মৌলিক: একেই বলে অর্জুনের লক্ষ্যভেদ! ৭১তম জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চে এবার সেরা বাংলা ফিচার ফিল্ম নির্বাচিত হয়েছে অর্জুন দত্ত-র ‘ডিপ ফ্রিজ’। কথা বলে মনে হল, অর্জুনের কাছে এই সাফল‌্য কিছুটা অপ্রত‌্যাশিত। তাঁর এই ছবিটি ‘ইফি’র ইন্ডিয়ান প‌্যানোরমাতেও জায়গা করে নিয়েছিল। ইন্টারনেটে একটি পেজ নোটিফিকেশনে অর্জুনের ভাইপো প্রথম খবরটি দেখেন। তিনি পরিচালককে জানান যে ‘কাকান, দেখো কী খবর!’ “ডিপ ফ্রিজ’ করার সময় মা চলে যান, আমি মাকেই উৎসর্গ করেছি। মায়ের শারীরিক অসুস্থতার কথা আমি ছবিটা করার সময়েই জানতে পেরেছিলাম। মাকে ছবিটা দেখাতে পারিনি বলে দুঃখ ছিল। ভালো কাজ স্বীকৃতি পেল। বলছি না যে আমি ‘মাস্টারপিস’ কিছু বানিয়ে ফেলেছি। এটুকুই বলব আমার পুরো টিম পরিশ্রম করে সৎভাবে একটা ছবি বানিয়েছে। এই পুরস্কার শুধু আমার নয়, পুরো টিমের। নয়তো ছবিটা বানাতে পারতাম না। এপ্রিল মাসের ওই গরমে শুটিং করেছি। বিশেষ করে আবিরদা (চট্টোপাধ‌্যায়)-তনুশ্রীদির (চক্রবর্তী) ওপর অনেকটা চাপ ছিল। একটা রাতের গল্প। সম্পর্কের টানাপোড়েন ও বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে অন‌্য একটা প্রেক্ষিত তুলে ধরে। পারফরম‌্যান্স ড্রিভেন ফিল্ম এটা।”

Advertisement

অর্জুন নবীন প্রজন্মের পরিচালক। এটা তাঁর চতুর্থ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি। এই সাফল্যের পরে ইন্ডাস্ট্রির প্রতিক্রিয়া কেমন? জিজ্ঞেস করতে তিনি বললেন, ‘সবাই খুব ওয়ার্মলি গ্রহণ করেছে আমার এই পুরস্কার প্রাপ্তি। ফোনে, সোশাল মিডিয়ায় বা ব‌্যক্তিগত ভাবে, সকলেই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সব থেকে মুভড হয়েছি সৌকর্য ঘোষাল সোশাল মিডিয়ায় জানিয়েছিল। আর আমার বিগেস্ট চিয়ারলিডার রঞ্জন ঘোষ, সেও লিখেছেন। আলাদা করে আর কার নাম নেব, সকলেই অভিনন্দন জানিয়েছেন।’ পুরস্কার পাওয়া এবং না-পাওয়ার পর দু’ধরনের প্রতিক্রিয়া সাধারণত পাওয়া যায়। এক, পুরস্কার পেয়েছে কারণ লবির জোর আছে। দুই, পুরস্কার না পাওয়ায় কারণ লবির জোর নেই। এই প্রসঙ্গে পরিচালকের কী বক্তব‌্য? অর্জুন বলছেন, ‘আমি এই সব বিতর্কে থাকতে ভালোবাসি না। একদম মধ‌্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছি, নিজের মতো করে ছবি বানানোর চেষ্টা করছি। সিনেমা ভালোবাসি। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ফার্স্ট ক্লাস অর্জন করেছি, তাও নিজের জীবন সিনেমাতেই দিয়েছি। আমার পাঁচ অঙ্কের মাইনের চাকরিও নেই। এবং বাড়িতে আমার দায়িত্ব রয়েছে। বয়স্ক বাবা, অসুস্থ দাদা রয়েছেন। সত্যি বলতে এত কিছু ভাবার সময় নেই। শুধু চাই যেন আরও দুটো কাজ পাই ইন্ডাস্ট্রিতে। সবার নিজের স্ট্রাগল থাকে জীবনে। আমি কখনওই নিজের স্ট্রাগলের কথা সমাজমাধ‌্যমে বলি না, কারণ লড়াইকে মহিমান্বিত করায় বিশ্বাস করি না। প্রতিটা ছবিতে সৎভাবে কিছু করার চেষ্টা করেছি।’

জাতীয় পুরস্কার পেয়েও কাজ পাননি এমন উদাহরণ আমরা দেখেছি। একটা পুরস্কার প্রাপ্তি জীবন কতটা বদলে দিতে পারে? অর্জুন বলছেন, ‘জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্তিটা খুব বিনীতভাবে গ্রহণ করছি। আই অ‌্যাম ভেরি ব্লেসড। ওপর থেকে আমার মা-ই হয়তো কলকাঠি নেড়েছে। ওই লবির কথা বললে, ওটা আমার মায়ের লবির জোর (হাসি)’। এবারে অ‌্যাওয়ার্ড প্রাপ্তির তালিকায় ‘কেরালা স্টোরি’ থাকায় যথেষ্ট বিতর্ক এবং নেতিবাচক আলোচনা হয়েছে। কী বলবেন? “আমি এই জায়গাতেই নেই, যে কিছু বলব। প্রত্যেক বছরই জাতীয় পুরস্কারে কোনও না কোনও বিতর্ক হয়, আমাদের হাতে নেই। তবে মনে হয় না, শেষ দু-তিনবছরে জাতীয় পুরস্কার নিয়ে এত বিতর্ক হয়েছে। আমার প্রসঙ্গে বলতে পারি আমার ‘অব্যক্ত’-ও ইফি-তে ছিল, যেখানে ইন্টারন্যাশনাল কমপিটিশনে ভারতের মাত্র দুটো ছবি ছিল। এমন নয়, হুট করে ‘ডিপ ফ্রিজ’-এ আমি কেল্লা ফতে করলাম। ‘অব্যক্ত’ কিন্তু আরও সেলিব্রেটেড ফিল্ম।” এই বছরের ষোলোটি ছবির তালিকায় ‘পদাতিক’, ‘নীহারিকা’, ‘অর্ধাঙ্গিনী’, ‘মুজিব: দ‌্য মেকিং অফ আ নেশন’, ‘কাবুলিওয়ালা’, ‘বিজয়ার পরে’-এর মতো ছবিও ছিল। সেখানে ‘ডিপ ফ্রিজ’-এর সেরা ছবি নির্বাচিত হওয়া যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। বলা যায় অগ্রাধিকার পেল তারুণ‌্য। অর্জুন বললেন, ‘আই জাস্ট গট লাকি (হাসি)। সব সিনিয়র পরিচালক, এবং তাঁদের কাজ আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। প্রত্যেকের নিজের জার্নি থাকে। শর্ট ফিল্ম দিয়ে আমার জার্নি শুরু করেছিলাম। প্রথম থেকে আমি নিজেই নিজের প্রতিযোগী। যে কাজগুলো করেছি, সেখানেও অনেক ভুল করেছি। ‘ডিপ ফ্রিজ’-ও সাংঘাতিক কিছু বানাইনি, এখনও বলছি। লোকজন এখনও ছবিটা দেখেননি, তার আগে এত জল্পনায় একটু অদ্ভুত লাগছে।’

‘ডিপ ফ্রিজ’ এখনও মুক্তির অপেক্ষায় ফলে তাঁর ওপর আরও চাপ বেড়েছে। পুরস্কার প্রাপ্তি কি তাঁর ভালো কাজের জেদ বাড়িয়ে দিল? ‘পুরস্কার একটা প্রমাণ বা স্বীকৃতি দিল যে, ঠিক পথে এগোচ্ছি। আমি তো নিজের শর্তে কাজ করি। এই ম‌্যাজিকটা হওয়াতে বুঝলাম, ভগবান চেয়েছেন। মা চলে যাওয়ার পর আমার জীবনবোধ পাল্টে গিয়েছে। আগে বেশি প‌্যানিক করতাম এখন অনেক শান্ত। মনে হয় আর কোনও কিছু অতটা দুঃখ দেবে না। একটা জিনিস যোগ করতে চাই, আমাদের প্রজন্মের পরিচালকরা এত সমর্থন করেছেন বলে, এটা যেন তাঁদেরও জয়, আমার একার নয়। আমি তেমন কেউ নই, মাত্র চারটে ছবি করেছি সবে। সমগ্র বাংলা ইন্ডাস্ট্রিকে বাড়তে হবে বিশ্বের দরবারে’, বক্তব‌্য । ফেডারেশন থেকেও অর্জুন সংবর্ধনা পেয়েছেন। সেই প্রসঙ্গে বললেন, ‘সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস আমার বাড়ি এসেছিলেন অভিনন্দন জানাতে মিষ্টি আর ফুল নিয়ে। দ‌্যাট ইজ গুড মুভ।’ এখনও ফেডারেশনের সঙ্গে পরিচালকদের একাংশের সমস‌্যা মেটেনি, সেই বিষয়ে কী বলবেন? ‘আমাদের একটা পরিবারের মতো কাজ করতে হবে। বাড়ির ঝগড়া অন‌্যদের সামনে আনার প্রয়োজন নেই। আমাদের ভাবা উচিত ভালো কনটেন্ট নিয়ে আর দেখা উচিত কীভাবে প্রযোজক টাকা ফেরত পেতে পারেন ছবি থেকে। এই প্রসঙ্গে বলব, ‘ডিপ ফ্রিজ’-এর পুরস্কার কিন্তু যতটা আমার ততটাই আমার প্রযোজক কৃষ্ণ কয়ালের।” সামনে তাঁর ‘বিবি পায়রা’ প্রায় তৈরি। ‘ডিপ ফ্রিজ’ পুজোর পরে মুক্তির পরিকল্পনা। আরও একটি ছবির কথা ভাবছেন তিনি, যা ক্রমশ প্রকাশ‌্য।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ