‘ধূমকেতু’ মুক্তি পাওয়ার আগে প্রেম, অপ্রাপ্তি এবং দেব-শুভশ্রীর রসায়ন নিয়ে কথা বললেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
সেলিব্রেটেড হওয়া দেব-শুভশ্রী জুটিই তো এই ছবির সবটা নয়, ট্রেলার সেটাই বলছে। রুদ্রনীল ঘোষ, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিতি, দু-দেশের যুদ্ধ, সিস্টেম থেকে প্রতারিত হওয়ার আভাস– অনেক কিছু আছে। ‘ধূমকেতু’ নিয়ে আরও জানতে চাই।
– একটা কথাই বলতে চাই, এটা একশো শতাংশ ফ্যামিলি ড্রামা। একজন যোদ্ধা হোক, বা এক্সট্রিমিস্ট হোক, বা একজন মাফিয়া হোক– কর্মজীবনের বাইরেও তাদের একটা জীবন আছে। পরিবার আছে, বন্ধু আছে। ট্রেলারে বলা হচ্ছে ‘আদর্শ যখন শত্রু’। এটা গুরুত্বপূর্ণ কথা। আমি যেটাকে ঠিক ভাবছি সেটা আমার এবং অন্যান্য মানুষের শত্রু হয়ে উঠছে কি না সেটা দেখতে হবে। ‘ধূমকেতু’তে এই সমস্যাটার একটা বিস্তার রয়েছে। নয় বছর আগে মুক্তি পেলে যা হত, এই সমস্যাটা দশগুণ প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে আজকের দিনে, দেরিতে রিলিজ করেও এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া।
ছবিতে সন্ত্রাসবাদ আছে?
– কাকে সন্ত্রাসবাদ বলব, সেটাও তো ভাবার বিষয়।
দেব-শুভশ্রীকে ঘিরে এই যে একটা হাইপ তার কিছুটা তৈরি করা, কিছুটা অরগ্যানিক। ভক্তদের উন্মাদনা আমরা দেখেছি। কী মনে হয়, রিয়েল লাইফের অসম্পূর্ণ প্রেমে, রূপকথার হ্যাপি এন্ডিং চাইছে বলে এই হাইপ?
– তুমি যদি রূপকথারই হও, তাহলে তোমার বাকি জীবনটা রূপকথার মতো করেই দেখে মানুষ। তোমাকে সেই রূপকথা থেকে বেরতে দেবে না। আমার যেটা ভালো লাগে না, ব্যক্তি জীবনটার মধ্যে ঢুকে পড়ে, আজকে সমাজমাধ্যম হোক বা কোনও ব্যক্তিই হোক যখন সেটা গুলোতে থাকে। দুজনেই ব্যক্তিজীবন সামলে পেশাদার হিসাবে কাজ করছে। যখন নজরুল মঞ্চে দশ বছর পর তাদের দেখা হচ্ছে, সেখানে রূপকথা নিয়ে ভাব, সিনেমার পর্দায় তাদের কেমিস্ট্রি নিয়ে রূপকথা তৈরি করো, আমার আপত্তি নেই। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে তাদের বাড়ির লোককে ছোট করে মিম তৈরি করা, বা অপমানজনকভাবে কিছু লেখার কোনও মানে হয় না। ‘কাল রাতে কারা কারা ভাত খায়নি…’, ‘সবচেয়ে দুঃখী দুজন মানুষ’– এই সমস্ত লেখা কুরুচিকর। দেব-শুভশ্রী পরস্পরকে সম্মান করেছে, স্টেজে একত্রে এসেছে, সেটা নিয়ে এই ধরনের কথা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি তো সামনে থেকে দুজনকে দেখলাম। ন’বছর আগে নৈনিতালে এই হাসিটা ছেড়ে এসেছিল ওরা। তারপরে আর দেখিনি কখনও। আমি সেই হাসির একটা ছবি পোস্টও করেছি। ফোটোফিনিশ ফ্রেম। ওরা যখন পারফর্ম করছে আমার টেনশন হচ্ছে, দর্শকের ট্রেলার কেমন লাগবে? তবে সেই টেনশন ছাপিয়ে গেল নয় বছর পর ওদের দুজনের হাসিটা দেখে। সেদিন একটা জিনিস জিতে গেল সেটা হল– পেশাদারিত্ব।
এই যে ফলো-আনফলো বা ব্লক-আনব্লক খুব বড় ব্যাপার আজকের দিনে! এই রকম সময়ে দাঁড়িয়ে আপনার কাছে প্রেম কী?
– প্রেম কখনও আনফলো করা যায় না! ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল জগতে আনফলো করাটার কোনও মানে নেই আমার কাছে। সত্যিকারের প্রেম আনফলো করবে কী করে! ফেসবুকে হয়তো ব্লক করে দিলাম। কিন্তু প্রেম যদি সৎ হয়ে থাকে, তাহলে কোনও বৈদ্যুতিন মাধ্যম সেটাকে ব্লক করতে পারবে না।
আপনার প্রেম কি সেইরকম, আনফলো হয়নি!
– কোনওদিন করিনি, আমার সেটা হয়ে ওঠেনি। কী বলো তো, আমি আমার পারিবারিক জীবনে এত ভালোবাসা পেয়েছি যে আমি কৃতজ্ঞ। পরিচালক হিসাবে কতটা সফল সেটা দর্শক বিচার করবে, কিন্তু মানুষ হিসাবে আমার প্রাপ্তির ভাঁড়ার সম্পূর্ণ। আর আমি সব ছবির অভিনেত্রীদের প্রেমে পড়ি ছবি করার সময়। অত সুন্দর করে দেখে একটা চরিত্র তৈরি করতে পারবই না, যদি আমার মধ্যে প্যাশন না থাকে।
সবচেয়ে বেশি প্রেমে কার পড়েছেন?
– রাইমা!
চূর্ণী যখন অভিনয় করছে, নতুন করে প্রেমে পড়েছেন যখন একটা চরিত্র হয়ে উঠেছে?
– চূর্ণী? প্রথম দুটো ছবির সময় সবচেয়ে বেশি হয়েছিল। তারপর আমরা অনেকটা ম্যাচিওর করে গিয়েছি। প্রেমের ভাষাটাও বদলে গিয়েছে। ‘কাবেরী অন্তর্ধান’-এর সময় চূর্ণীর অভিনয় দেখে মনিটরে চোখে জল এসেছে। ‘বিসর্জন’-এ জয়াকে দেখে বিস্মিত হয়ে গিয়েছি।
তবে সবাই বলে, সবচেয়ে বেশি প্রেমে পড়েছেন জয়ার?
-হ্যাঁ, সেটা বলে আনন্দ পায়। কারণ ‘গণেশ মণ্ডল’ চরিত্রটা বেশ বড় ব্যাপার। সেটা ভাবতে চেষ্টা করে সবাই।
তবে আপনার ছবিতে একটা জিনিস ফিরে ফিরে আসে। একটা চরিত্র এমন থাকে যে প্রেমে সমস্ত না পাওয়া নিয়ে বসে থাকে। প্রেম সোজা পথে আসে না কখনওই…
– প্রেম কারও সোজা পথে আসে না। প্রেম- প’য়ে র’ফলা তারপর এ’কার– কত আঁকাবাঁকা জিনিস বলত। কী করে সোজা পথে আসবে?
হ্যাঁ, আর না পাওয়া আপনার ছবিতে বারে বারে আসে!
– কেন বলতে পারব না। নিশ্চয়ই আমার মধ্যেও তেমন একটা মনখারাপ-করা মানুষ আছে। যে কারণে কমেডি ছবি আমি অনেক কম বানিয়েছি। ভালো লাগে ইনটেনস ছবি বানাতে, যদিও আমার মধ্যে একটা রসিক মানুষ আছে। পরপর জগজিৎ সিংয়ের গান যদি শোনো তুমি একটা ধরন পাবে। একটা মেজাজ আছে। কিন্তু যদি সফল হতে হয়, তাহলে আর.ডি. বর্মনের মতো হতে চাই। সেটা আমি চেষ্টা করি। এত গল্প চারপাশে, তার থেকে কোনটা বেছে নেব এটা নেশার মতো কাজ করে।
ইন্ডাস্ট্রিতে বন্ধুত্ব বা ঝগড়া কোনওটাই চিরস্থায়ী নয়। সিনেমায় অনেক টাকার লগ্নি হয়, পাবলিসিটি হয় ফলে কোনও একটা স্ট্যান্ড ধরে রাখা মুশকিল। তাই ‘ধূমকেতু’-র মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিতে দেব-শুভশ্রীকে একসঙ্গে আনা। ‘ধূমকেতু’, ‘সাইয়ারা’-র মতো বাংলা বক্স অফিস চাঙ্গা করে তুলবে?
– বক্স অফিস চাঙ্গা হোক, সবাই চায়। এই ছবি ভালো চললে, বাংলা ছবির পুজোর বাজারও চাঙ্গা হয়ে উঠবে চেন রিয়্যাকশনের মতো। এবং এই ছবি সফল হোক এটা দেব-শুভশ্রী দুজনেই চাইবে। দুজনেই এতে লাভবান হবে। আমি বেনিফিটেড হব, প্রযোজক বেনিফিটেড হবে। যে কোনও ছবির ক্ষেত্রে ভক্তদের যে প্রেশার বা উন্মাদনা সেটা সাতদিন চলে। তারপর সিনেমা চললে, সেটা সিনেমার জোরে চলে।
এই যে দেব আর শুভশ্রীর বোঝাপড়া বলুন, বা আইস ব্রেক – এটা ব্যক্তিগত স্তরে না হয়ে একটা ইভেন্ট করে করা হল। সেখানে লোকে টিকিট কেটে গেল। গোটা থিয়েট্রিকসকে কীভাবে দেখবেন?
– বিয়ে যে হয়, এত লোককে ডাকা হয় কেন? বাড়িতেও তো ঘরের মধ্যে গুটিকয়েক লোকের মধ্যে হতে পারে! অনেককে দেখিয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসে মানুষ। ঠিক তেমনি ক্লোজার হোক, বা জীবনে একটা জায়গায় পৌঁছনো হোক. সেটা কোনওদিন অসমাপ্ত থাকুক কেউ চায় না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.