সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লক্ষ্মীপুজো মানেই দেবলীনা কুমারের ব্যস্ততা দ্বিগুণ। বাপেরবাড়ি, শ্বশুরবাড়ি দু’দিকের পুজোর পুরোভাগেই থাকতে হয় অভিনেত্রীকে। একদিকে মহানায়ক উত্তম কুমারের নাতবউ, অন্যদিকে দেবাশীষ কুমারের একমাত্র সন্তান দেবলীনা। দুই বাড়িতেই ধুমধাম করে লক্ষ্মীপুজো হয়। উপরন্তু নিজের নাচের স্কুলেও বছরখানেক ধরে ধনদেবীর আরাধনা করেন তিনি। আর সেই সমস্ত দায়িত্ব থাকে দেবলীনার উপর। তবে কোনও দিকেই খামতি রাখেন না অভিনেত্রী। পরম যত্নে তিন পুজোর আয়োজন সারেন দেবলীনা কুমার। এবারও তার অন্যথা হয়নি।
রবিবার রাতেই স্কুলের লক্ষ্মীমেয়েদের সঙ্গে পটুয়া পাড়া থেকে প্রতিমা এনে পায়েস রেঁধেছেন। একফাঁকে আবার ভবানীপুরের চাটুজ্জ্যে বাড়ির মাকেও বরণ করে এসেছেন। প্রতি বছরই ধনদেবীর আরাধনায় মেতে ওঠে উত্তম কুমারের পরিবার। ঐতিহ্যবাহী চট্টোপাধ্যায় বাড়ির লক্ষ্মীপুজোর আয়োজনের পুরোধা এখন নাতি গৌরব চট্টোপাধ্যায় এবং বউমা দেবলীনা কুমার। এবাড়ির লক্ষ্মীপ্রতিমার কিন্তু বিশেষ একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ভবানীপুরের চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে মহানায়কের স্ত্রী গৌরীর আদলে আজও মা লক্ষ্মী পূজিতা হন। রীতি মেনে এখনও উপোস করে পুজোয় বসেন মহানায়কের নাতি গৌরব। পুজোর আয়োজনে থাকেন বউমা দেবলীনা কুমার। এবারও লাল পাড় সাদা শাড়ি, সোনার গয়নায় শ্বশুরবাড়ির মা লক্ষ্মীকে সাজালেন অভিনেত্রী।
ঐতিহ্য মেনেই আজও পুজোর দিন ভোরে গঙ্গায় ডুব দিয়ে ঘট ভরে আনা হয়। উত্তমকুমারের আমল থেকে একটা বড় রুপোর ঘট বসানো হয় প্রতিমার সামনে। সেই সময় উত্তমকুমারের স্ত্রী গৌরীদেবী নিজের গয়নায় সাজাতেন মাকে। এ বাড়িতে পুজোর ভোগ তৈরির অধিকার শুধুমাত্র দীক্ষিত পরিবারের মেয়ে বা পুত্রবধূদেরই। ভোগে থাকে পোলাও, লুচি, ছোলার ডাল, পাঁচরকম ভাজা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পায়েস। সেই সময় ভিয়েন বসিয়ে পান্তুয়া, গজা তৈরি হত বাড়িতেই। বালতি করে পান্তুয়া বিতরণ করা হত পাড়াপড়শিদের বাড়িতে। ভোজের আসরে বড় আকর্ষণ ছিল স্বয়ং উত্তমকুমারের উপস্থিতি। পুজোর পরে টালিগঞ্জের তাবড় প্রযোজক, গায়ক, অভিনেতারা পাত পেড়ে বসে ভোগ খেতেন। তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সকল নিমন্ত্রিতকে খাওয়াতেন। তার পরেই নিজে খেতে বসতেন। মেনুতে থাকত লুচি, ছোলার ডাল, বেগুন বাসন্তী, আলুর দম, ধোঁকার ডালনা, ছানার ডালনা, মিষ্টি। ইদানীং মেনুতে ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটেছে। শোনা যায়, মা লক্ষ্মীর কাছে চাওয়া বিশেষ মানত পূরণ হওয়ায় কাঙালি ভোজন করাতেন মহানায়ক। উত্তমকুমার, গৌরীদেবী নিজের হাতে পরিবেশন করতেন। সেই দায়িত্ব কিন্তু আজ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেছেন গৌরব-দেবলীনা-সহ বাড়ির বর্তমান প্রজন্ম।
মহানায়কের ভবানীপুরের বাড়িতে এই গৌরীরূপী লক্ষ্মীর নেপথ্যে একটা গল্প রয়েছে। শোনা যায়, ‘যদুভট্ট’ ছবির শুটিংয়ে মূর্তি গড়ছিলেন নিরঞ্জন পাল। শুটিং ফ্লোরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে সেই দৃশ্য চোখে পড়ে উত্তমকুমারের। তিনি শিল্পীকে বাড়িতে ডাকেন লক্ষ্মীপ্রতিমা গড়ার বায়না দেবেন বলে। শিল্পী বাড়িতে পৌঁছে উত্তমকুমারের খোঁজ করতে গিয়ে দেখেন, গৌরীদেবী ঘর মুছছেন। তিনি ঘোমটার ফাঁক থেকে এক ঝলক তাকিয়ে শিল্পীকে বসতে বলার পর উত্তমকুমারকে ডেকে দেন। কিন্তু ওই মুহূর্তেই শিল্পীর চোখে মা লক্ষ্মীর ছবি আঁকা হয়ে যায়। তিনি ছাঁচ ভেঙে গৌরীদেবীর মুখের আদলে লক্ষ্মীমূর্তি গড়েন। আজও প্রতিমার মুখের গড়নে সেই চেনা ছাপ। মহানায়ক চলে যাওয়ার পরও পুজোর ধারা একইভাবে বজায় রেখেছে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের নতুন প্রজন্ম। নাতি-নাতনি গৌরব, নবমিতা ও মৌমিতারা। হয়তো সেই জাঁকজমক কমেছে, কিন্তু ভক্তি বা নিষ্ঠায় ঘাটতি নেই। সেসময় সারাদিন নির্জলা উপোস করে বাড়ির কর্তা উত্তমকুমার নিজে পুজোয় বসতেন। এখন সেই দায়িত্ব পালন করেন গৌরব চট্টোপাধ্যায়।
১৯৫০ সালে ছেলে গৌতমের জন্মের বছরেই মহানায়ক উত্তমকুমারের ইচ্ছেয় ভবানীপুরে গিরিশ মুখার্জি রোডের চট্টোপাধ্যায় পরিবারে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো শুরু হয়। স্টুডিও পাড়ার মুখে মুখে ফেরে অভিনেতা ছবি বিশ্বাসের বাড়ির কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো দেখেই নাকি উত্তমকুমারের সাধ হয় নিজের বাড়িতেও লক্ষ্মীদেবীর আরাধনা করার। ওই সময় স্টুডিও পাড়া থেকে আর্ট ডিরেক্টর এসে আলপনা দিতেন। গোটা বাড়ি জুড়ে তখন এলাহি ব্যাপার! সেই ধারা একইভাবে বজায় রেখেছে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের নতুন প্রজন্ম। তাঁরাই আলপনা দেন দালানজুড়ে। প্রতিবারের মতো এবারেও আয়োজনের কলেবর একইরকম।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.