সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বারো বছর আগের একদিন। জীবনানন্দ দাশের কবিতার শিরোনাম হয়ে বাঙালির কাছে ফিরে এল আরেকটা ৩০ মে। ঋতুপর্ণ ঘোষের চলে যাওয়ার দিন। ২০১৩ সালের সেই দিনটিতে সকালবেলায় দেখা গিয়েছিল নিজের ঘরে প্রিয় বিছানায় নিদ্রিত পরিচালক। যে ঘুম আর ভাঙবে না কক্ষনও। জীবনানন্দর সেই কবিতার লাইন ছুঁয়ে বলতে গেলে ‘এই ঘুম চেয়েছিল বুঝি!’ এতগুলো বছর পেরিয়ে গিয়েও বাঙালির মননে সদা জাগ্রত সেলুলয়েডের মরমি শিল্পী-পরিচালক। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুর অভিঘাত রয়ে গিয়েছে আজও। আর সেই প্রেক্ষিতেই ঋতুপর্ণ ঘোষের দ্বাদশ প্রয়াণ বার্ষিকীতে মনকেমনের কথা বললেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
সুপারস্টার প্রসেনজিতের মন্তব্য, “আরও একটা ৩০ মে চলে এল। গত ১২ বছরে আর তোর ফোন আসেনি। ২০১৩ সালের ৩০ মে-র পর আর আমাদের সাক্ষাৎ হয় না, ঝগড়া হয় না। সত্যিই কি দেখা হয় না ঋতু? প্রতিদিনই কোনও না কোনও সময় তোর কথা মনে পড়ে। যখন কোনও ভালো গল্প পাই, মনে হয়, ঋতু থাকলে আর ভাবতে হত না। যেখানেই থাকিস ভালো থাকিস। একটু ভালো চিত্রনাট্য পাঠাস তো, বাংলায় ভালো গল্পের খুব দরকার এই মুহূর্তে। বাংলা ইন্ডাস্ট্রির এই সময় তোকে খুব প্রয়োজন। তোর শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। বিশ্বাস করি খারাপ সময়েও নতুন দিশা দেখাতিস তুই।”
বুম্বার স্মৃতিচারণায় বন্ধুবিয়োগের কাতর যন্ত্রণা এখনও তরতাজা। অভিনেতার আক্ষেপ, “কতদিন নতুন কিছু নিয়ে আড্ডা হয় না আমাদের। অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করে তোকে ‘মিস’ করি কি না। এই প্রশ্নের সত্যি কি উত্তর হয়? ঋতু, তোর না থাকার মধ্যেই তুই ভীষণভাবে আছিস। যেখানেই থাকিস আনন্দে থাকিস। এই যে প্রায় চল্লিশ বছর ধরে কাজ করছি, তোর শাসন, আদর না থাকলে আমার অভিনয় জীবনের বাঁক বদল অসম্ভব ছিল। ‘অন্য প্রসেনজিৎ’-কে তুই দেখতে পেয়েছিলি। এখনও তোর দেওয়া ‘টিপস’ মাথায় ঘোরে। বড্ড অভিমান হয় আজও, কিন্তু কাকে বলব? সবাইকে ফাঁকি দিয়ে তুই চলে গেলি, অন্য জগতে।”
‘উনিশে এপ্রিল’, ‘চোখের বালি’, ‘দোসর’, ‘উৎসব’-এর মতো একাধিক ছবিতে ঋতুপর্ণ ঘোষের পরিচালনায় অভিনয় করেছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। না, মৃত্যুদিবস বলেই হয়তো কলমের আঁচড় পড়েনি তাঁকে নিয়ে। আসলে প্রিয় শিল্পী হোক কিংবা প্রিয় মানুষ, তাঁদের প্রতি ভালবাসা জাহির করার তো কোনও নির্দিষ্ট দিনের দরকার হয় না। আবার তাঁদের কথা স্মরণ করে স্মৃতির সরণিতে হেঁটে বেড়ানোরও কোনও নির্দিষ্ট দিনের প্রয়োজন হয় না, তাই তাঁর বন্ধু, সহকর্মী নিয়ম-অনিয়মের ‘ঋতু’কে সবসময়েই নিজের মতো করে স্মরণ করেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। আজও স্মরণ করলেন, ঋতুপর্ণ ঘোষের দ্বাদশ মৃত্যুবার্ষিকীতে। আসলে ঋতুপর্ণ ঘোষের শিল্পী-মননই তো বাংলা সিনেইন্ডাস্ট্রিকে এক নতুন দিগন্তের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছিল। বাঙালি দর্শককে খুব যত্ন করে চিনিয়েছিল মধ্যবিত্তদের ঘর-সংসার, নারীমনের টানাপোড়েন। শিখিয়েছিল চেনা ছকের বাইরে অন্যরকমভাবে সম্পর্ক, পৃথিবীটাকে দেখতে। ফিরিয়ে দেননি দর্শকরাও। আপন করে নিয়েছিল ঋতুপর্ণ ঘোষকে। তাঁর চলে যাওয়ার আজ বারোটি বছর পার হল। নীরবে, কাজের মধ্য দিয়ে অনেকেই মনে রেখেছেন তাঁকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.