Advertisement
Advertisement
Rituparna Sengupta

‘এঁদের কাছে সবকিছুই সহজলভ্য, আমাদের পথ কঠিন ছিল’, ঋতুপর্ণার নিশানায় কারা?

'অভিনয় জীবনের আকাঙ্ক্ষার কোনও শেষ নেই'- ঋতুপর্ণা।

Rituparna Sengupta special interview about her film and filmy career

ছবি: ব্রতীন কুণ্ডু

Published by: Arani Bhattacharya
  • Posted:June 27, 2025 8:04 pm
  • Updated:June 27, 2025 8:11 pm  

শম্পালী মৌলিক: তাঁর বাড়িতে সাক্ষাৎকার নিতে যাওয়া মানে, নিছক ইন্টারভিউ সেশন নয়। মুখোরোচক চানাচুর, বাংলা চিপস, কুচোনিমকি এবং লাল চা সহযোগে তিনি অনর্গল মেক আপ নিতে নিতে। তাঁর মতো অতিথি আপ‌্যায়ন ক’জন পারেন! তিনি ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত টলিউডে এখনও অবিকল্প। প্রযোজক হিসেবে নবজন্ম, ব্যক্তিগত জীবন, নতুন ছবি মুক্তি, সব কিছু নিয়ে অকপট অভিনেত্রী।

সিঙ্গাপুরে যেন বেশি সময় কাটাচ্ছেন। সে প্রসঙ্গ তুলতেই বললেন, ‘তা নয় (হাসি)। আমার পরিবারের সঙ্গে কথাই আছে, মাসে অন্তত দশটা দিন সিঙ্গাপুরে দিতে হবে। আর বাকি ২০ দিন আমার কাজ, সে বম্বে হোক বা কলকাতা। সঞ্জয় (স্বামী) এবং ফ‌্যামিলির সঙ্গে এই ডিলটা আমি করেছি। সত্যি বলতে ওরাও খুব মিস করে আমাকে। ওখানে দুটো ছোট ডগিজ আছে, ওরা খুব মিস করে আমাকে। রিশোনার স্কুলও থাকে। আমি সিঙ্গাপুর গিয়েছিলাম কয়েকদিনের জন‌্য, কারণ সঞ্জয় ফিলিপিন্স গিয়েছিল, ওর বোর্ড মিটিং ছিল। ও কখনওই বাচ্চাকে একা রেখে যাওয়া পছন্দ করে না। যদিও আমাদের দু’জন গৃহ সহায়িকা আছে। কিন্তু ওই আর কি, বাড়িতে দু’জনের একজন যেন থাকে। বম্বেতে কিছু কাজ সেরে সিঙ্গাপুর হয়ে কলকাতা ফিরলাম।

ছবি: ব্রতীন কুণ্ডু

লং ডিসট‌্যান্স রিলেশনশিপ টিকিয়ে রাখা কতটা কঠিন? জিজ্ঞেস করতেই অভিনেত্রী বললেন, অনেকে বলে, এতে সম্পর্ক ভালো থাকে, পরস্পরকে স্পেস দেওয়া হয়। আবার এটা কঠিনও। কারণ, ইউ হ‌্যাভ টু বি অ‌্যাট ইট। পরিশ্রম করতে হবে। বিয়ে আছে, এবং থেকে যাবে তা কিন্তু নয়, চারাগাছে জল দেওয়ার মতো প্রতিদিন দিতে হবে। কারণ, এটা রোজকার উপলব্ধি আন্ডারস্ট‌্যান্ডিং, বিবাদ, সবই নিয়মিত মেটাতে হয়। আমরা যেভাবেই হোক সেই কাজটা এখনও অবধি করে চলেছি। আমি বলব, সঞ্জয়ও অনেকটা হেল্পফুল। আবার অনেক সময় ডিফিকাল্ট। ও আমার মতো অত ইমোশনাল নয়। ওইটাই ভারসাম‌্য রাখে। ও বাচ্চাদের পড়াশোনার ব‌্যাপারে ভীষণ পার্টিকুলার। আমিও অনেক সময় পেরেন্টস টিচার্স মিটিংয়ে গেছি বা অঙ্কনকে পড়াতে পড়াতে শুটিংয়ে নিয়ে গেছি। তবুও বলব, সঞ্জয় খুব ভালো বাবা। অঙ্কন এখন বস্টনে পড়ছে আর রিশোনা সিঙ্গাপুরে।

এই বছর যেন প্রযোজক ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর নবজন্ম হল ‘পুরাতন’-এর মাধ‌্যমে। টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে একাধিক নায়ক প্রযোজক হয়েছেন। সেখানে নায়িকা হিসেবে আপনার যুদ্ধ কতটা শক্ত?

“প্রযোজক হিসাবে অন অ‌্যান্ড অফ সবসময়ই কিছু না কিছু করছিলাম। এক সময় ‘আলো’ করেছিলাম। সেটা সোলো প্রযোজনা নয়, আমাদের একটা গ্রুপ ছিল। তার পরে ‘ইচ্ছে’আমি প্রেজেন্ট করেছিলাম আর কো-প্রোডিউস-ও। ‘পার্সেল’প্রেজেন্ট করেছিলাম। ‘আহারে’,‘দত্তা’-ও করেছিলাম। প্রথম ছবি প্রযোজনা অনেক বছর আগে করেছিলাম দুলাল লাহিড়ীর ‘বৃষ্টির ছায়াছবি’। এবার সুজিত মণ্ডলের ‘অন্বেষণ’ছবিটাও মুক্তি পাবে। রিবার্থ নিয়ে বলব,‘পুরাতন’সম্পূর্ণ অন‌্য লিগের ছবি। যেটা মানুষের জীবনের গল্পের ছবি এবং সকলকে ছুঁয়ে গেছে। এবং শর্মিলা ঠাকুরের মতো পুরাতন ফ্লেভার ছিল। সব মিলিয়ে বিষয়টা অন‌্য মাত্রায় গিয়েছে। শর্মিলা ঠাকুরের কাছে, সুমনের কাছে (ঘোষ) এবং আমার পুরো টিমের কাছে আমি এ জন‌্য কৃতজ্ঞ। হ্যাঁ, প্রযোজক হিসাবে নবজন্ম বলা যেতে পারে। আমাদের হাউসের কাছেও চ‌্যালেঞ্জ ছিল। আমি অভিনেত্রী হিসাবেও অনেক স্টিরিওটাইপ ভেঙেছি। অনেক কিছু প্রথম আমি এক্সপেরিমেন্ট করেছি, অন‌্যরা পরে।” বললেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।

Rituparna Sengupta special interview about her film and filmy career
ছবি: ব্রতীন কুণ্ডু

এবারে ঋতুপর্ণা অভিনীত‘ম‌্যাডাম সেনগুপ্ত’আসছে ৪ জুলাই। থ্রিলার ছবি। যেখানে তিনি কার্টুনিস্টের চরিত্রে। এই ছবির ইউএসপি কী?

উত্তরে বলছেন, “এটা নতুন প্রোডাকশনের ছবি নন্দী মুভিজ-এর, যার জন‌্য আমিও অনেকটা ইন্সট্রুমেন্টাল। আগে কখনও কার্টুনিস্টের ভূমিকায় অভিনয় করিনি। ‘অনুরণন’-এর অনেক বছর পরে আবার আমাকে আর রাহুল বোসকে একসঙ্গে দেখা যাবে। ব্রিলিয়ান্ট অ‌্যাক্টর রাহুল। আমি ওকে বলেছিলাম, ‘এই গল্পটা তুমি দেখতে পারো।’ভালো লেগেছে ওর। সায়ন্তনের (ঘোষাল) পরিচালনায় এটা থ্রিলার ছবি। এখনকার প্রজন্মের পরিচালকদের মধ্যে ওর অনেক সম্ভাবনা আছে। আর সুকুমার রায়ের ‘আবোল তাবোল’-এর সঙ্গে ছবির একটা যোগ রয়েছে, যেটা বাঙালির অত‌্যন্ত কাছের। এই ছবির কাস্টিংও দারুণ– পরান বন্দ্যোপাধ‌্যায়, রাহুল বোস, সুব্রত দত্ত, কৌশিক সেন, অনন‌্যা চট্টোপাধ‌্যায়ের মতো অ‌্যাক্টররা আছে। অনন‌্যাকে আমি রেকমেন্ড করেছিলাম এই ছবির জন‌্য। ইনফ‌্যাক্ট, ‘অন্নপূর্ণা’-র সময়েও আমি নিজে করতে চাইনি, অনন‌্যার কথা বলেছিলাম। আরেকটা বিষয় হল, ‘ম‌্যাডাম সেনগুপ্ত’-তে অনেকগুলো ফাইট সিকোয়েন্স আছে। যেগুলো খুব সুন্দর করে ডিজাইন করা।”

তিন দশক ইন্ডাস্ট্রিতে কাটিয়ে ফেলেও বিভিন্ন চরিত্র করার খিদে বাঁচিয়ে রেখেছেন কীভাবে?

ঋতুপর্ণার স্পষ্ট উত্তর, ‘আমার এই খিদে কোনওদিন যাবে না। অভিনয় জীবনের আকাঙ্ক্ষার কোনও শেষ নেই। অনেক প্রবীণ শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, তাঁদেরও এমন মনে হয়।’এখন দেখা যায়, কারও একটা সিনেমা কি সিরিয়াল হিট করলেই তাঁর স্টারের মতো হাবভাব চলে আসে, এটা কীভাবে দেখেন? ঋতুপর্ণা বলছেন, “এই তো ২৫ বছর পরে ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’এল, তাতেও মানুষের কী পাগলামি। এটাই বলব, ২৫ বছর আগেও হিট দিয়েছি। তারপর ‘অযোগ্য’-র মতো হিটও। সাম্প্রতিক কালে ‘দাবাড়ু’স্টান্ডার্ড চলেছে বা ‘পুরাতন’হিট করেছে। এটাই বলব, সাফল‌্যকে মাথায় চড়তে দিই না। সাফল‌্য পেয়ে আরও নম্র হয়েছি। এটা হয়তো প্রজন্মের ব‌্যাপার। এদের কাছে সবকিছুই সহজলভ‌্য। আমাদের পথ ছিল কঠিন। গ্রুমিং ওই ভাবেই হয়েছে। একটা সাফল‌্য পেলে মনে হয়, পরেরটা কীভাবে করব। আমি সব সময় মনে করি সবার প্রোপোজাল শোনা উচিত। তারপর ভেবে দেখব। এক সময় তো আমিও নতুন ছিলাম।”

সামনে তাহলে অরিন্দম শীলের ‘কর্পূর’? আর হনসল মেহতার সিরিজ? অভিনেত্রী বললেন, “কর্পূর’ শুরু হবে। আর হনসল মেহতার সিরিজে স্পেশাল অ‌্যাপিয়ারেন্স।”

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement