দীর্ঘদিন বাদে ‘বাৎসরিক’ দিয়ে বাংলা সিনেমায় শতাব্দী রায়ের প্রত্যাবর্তন। মুখোমুখি শম্পালী মৌলিক।
অনেকদিন বাদে আপনার অভিনীত ছবি আসছে। মৈনাক ভৌমিকের পরিচালনায় ‘বাৎসরিক’। মাঝের সময়ে আর ছবি করতে ইচ্ছে করেনি?
– যখন ছবি করেছি, বড় বেশি করেছি। ওই সময় পরিচালক প্রশান্ত নন্দা আমাকে বলেছিলেন, ‘তুমি বড় ক্লান্ত হয়ে পড়ছ। কাজ আর উপভোগ করছ না।’ আমি নিজেও তখন অনুভব করি যে, রোদে শুটিং করতে গিয়ে বিরক্ত হচ্ছি।
কীরকম?
– সেই সময় একটা ছবি করছিলাম, যেখানে আমার স্কুটি চালানোর দৃশ্য ছিল পাশে দুধের ডিব্বা, পিছনে বাচ্চা নিয়ে সিন। আমি যেখানে দাঁড়াচ্ছিলাম ক্যামেরা ম্যানের কিছুতেই অ্যাডজাস্ট হচ্ছিল না। দু’তিনবার শট দেওয়ার পর বিরক্ত হয়ে যাই। পরিচালক তখন আমাকে কিছু না বলে, লাঞ্চ ব্রেকে ডেকে নেন। বলেন, ‘শতাব্দী আমার মনে হচ্ছে তুমি কিন্তু কাজটা আর উপভোগ করছ না। এই গরম কিন্তু এতদিন অনুভব করতে না। ক্লান্তি বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।’ সেদিন থেকে বুঝতে পারি, হয়তো আমি এত বেশি কাজ করেছি, দিনরাত তিনটে শিফটও করেছি, যার ফলে আমার বিরতি দরকার। ফ্রেশ হতে চাই। সেই ফ্রেশ হওয়ার মধ্যেই পলিটিক্স এসেছে। তখন ওই কাজটাই একশো শতাংশ সিরিয়াসলি করেছি। সেটা করতে চাই এবং করব। তার মধ্যে যে সব ছবির প্রস্তাব এসেছিল আমার ডেটের সঙ্গে মেলা জরুরি ছিল এবং কাজগুলো ততটাই গুরুত্বপূর্ণ হতে হত, বলেই এতটা সময় লাগল।
‘বাৎসরিক’ নামের সঙ্গে মৃত্যুর যোগ রয়েছে। এই ছবিতে ভয়, আতঙ্ক, হরর- কোনটার যোগ বেশি?
– প্রথমত, এটা সম্পর্কের ছবি। ননদ আর বউদির যে সম্পর্ক তাই নিয়ে। একজনের ভাই মারা গিয়েছে, অন্য জনের স্বামী। যেখানে আমি ননদের চরিত্রে, ভাইয়ের বউয়ের চরিত্রে ঋতাভরী। আমাদের দু’জনের ওপরেই গল্প। ভূত, ভয়, সম্পর্ক এবং নেগেটিভিটি চাই না জীবনে- এই সব নিয়েই হরর কাহিনি।
নয়ের দশকে আপনি চুটিয়ে অভিনয় করেছেন। আজকে ইন্ডাস্ট্রি অনেক বদলে গিয়েছে। এবার ছবি করতে এসে মানাতে অসুবিধা হয়নি?
– সমাজ, প্রজন্ম, ভাবনা, ব্যবহার, কথাবার্তা, মূল্যবোধ– সব বদলে গিয়েছে। এখন দেখলাম খুব কম সময়ে কাজ করতে হচ্ছে। কাজ তাড়াতাড়ি করার খুব চাপ। পরিচালকের ওপর যেমন চাপ, সেই সঙ্গে অভিনেতাদের ওপরেও তাড়ার প্রেশার। এখন দু-তিনটে করে ক্যামেরা ব্যবহার হচ্ছে, আমি অভ্যস্ত নই। ফিল করছিলাম যে তিনটে ক্যামেরা, কন্টিনিউটি কী হবে। ওই ওল্ড মেথড, কখন আঙুল তুলেছিলাম, পরিচালক এডিটে সমস্যায় পড়বে কি না ভাবছিলাম। কিন্তু শেষপর্যন্ত সমস্যা হয়নি ওরা বলছে। বাকি এই প্রজন্মের সঙ্গে কীভাবে মিলিয়েছি বা আদৌ মিলেছে কি না দেখা যাবে। মৈনাক এই প্রজন্মের প্রতিষ্ঠিত পরিচালক। দর্শক ওর ছবি ভালোবাসে, লোকজন ওকে নামে চেনে। ওর কাজের পরিচয়ে চেনে। সেই ভরসায় কাজটা করেছি এবং ও সব প্রশ্নের ভাবনার উত্তর দিত। সিনেমা সব সময় পরিচালকের, এখন আরও বলব পরিচালকেরই সিনেমা। বিষয় এবং স্ক্রিপ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
বলছেন, যে স্টারের থেকেও কনটেন্ট আর পরিচালক গুরুত্বপূর্ণ?
– একদম তাই। এখন স্টার ভ্যালু নয়, কনটেন্টের ভ্যালুই আসল। না হলে ‘লাপতা লেডিস’ হিট হত? কোনও চেনা অভিনেতা তো ছিল না। আগে ছিল স্টারের জন্য, এখন আর সেভাবে স্টার তৈরি হয়নি। এত অপশন মানুষের কাছে, স্টার তৈরি হওয়া খুব কঠিন কাজ। যার ফলে মানুষের ধৈর্য কম।
কনটেন্টের ঘাটতি হচ্ছে বলেই কি আগেকার সিনেমার পুনর্মুক্তি হচ্ছে এখন মনে হয়?
– সেটা মনে হয় না।
এই সময়ে বেশ কিছু ছবির পুনর্মুক্তি হচ্ছে। আপনার কোনও ছবির রি-রিলিজ হোক চাইবেন? ‘গুরুদক্ষিণা’, ‘সখী তুমি কার’, ‘দেবীপক্ষ’… কত ছবি আছে!
– নিশ্চয়ই চাইব (হাসি)। কারণ, এই প্রজন্ম যারা আমার ওই ছবিগুলো দেখেনি তারা দেখুক চাই। আমি একটা ছবি পরিচালনা করেছিলাম ‘অভিনেত্রী’ বলে, সেটা তখন চলেনি। আমার ধারণা, এখন আইনক্সে-মাল্টিপ্লেক্সে যেমন ছবি চলে, সেই ধরনের বিষয় ছিল। এখন যদি ওই ছবিটা মুক্তি পায়, চলতে পারে বলে আমার ধারণা। লোকে জানুক এটাই। হিট ছবিগুলো লোকে টিভিতেই দেখে। পুনর্মুক্তি হলে সবারই ভালো লাগে, কারণ আরেকটা জেনারেশন দেখতে পারে। অনেক নস্টালজিয়া এই সব ছবির সঙ্গে।
আবার পরিচালনার ইচ্ছে করে?
– আমার পরিচালিত ছবি চলেনি, তার জন্য অতি উৎসাহিত হতে পারছি না। দ্বিতীয়ত, অনেক সময় দরকার। এখন যদিও পরিচালকরা সব বিভাগ আউটসোর্স করেন। কিন্তু আমাদের ধারণা হল, পরিচালক শুরু থেকে শেষ অবধি থাকবেন। তা অনেকটা সময়, সেটা হবে না। ইচ্ছে থাকলেও, বাস্তবে তা হবে না।
২০০৯ সাল থেকে বীরভূমের সাংসদ। ১৫ বছর কেটে গিয়েছে। মনে হয় না বড্ড আগে অভিনয় কমিয়ে দিলেন?
– (হাসি) সেটা যেমন, তেমন এটাও পাওনা বীরভূমের মানুষ ভালোবাসে। সে ভালোবাসা সিনেমার জন্যই। কিন্তু যদি বীরভূমে না যেতাম গ্রাউন্ড লেভেলে মানুষ কতটা ভালোবাসে জানতে পারতাম না। এখনও সেটা টের পাই। সেজন্য আমি কৃতজ্ঞ বীরভূমের কাছে।
আপনার সহ-অভিনেতা চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী। এবং রাজনীতির ময়দানেও আপনারা একই দলের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা হয়? রাজনৈতিক টিপস দেওয়া নেওয়া?
– হ্যাঁ, হয়। দেখা হলে খুবই কথা হয়। কখনও ফোনেও হয়। চিরিঞ্জিৎদাও আমার সঙ্গে গল্প করতে ভালোবাসে। না, টিপস দেওয়া-নেওয়া হয় না। যখন চিরঞ্জিৎদা এমএলএ হল, বলেছিলাম, ‘পাঁচ বছর কাটাও আগে তারপর তোমার সঙ্গে এই নিয়ে কথা বলব।’ (হাসি)
একসময় ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, দেবশ্রী রায়, শতাব্দী রায়- তিনটি নাম একসঙ্গে উচ্চারিত হত। ঋতুপর্ণা ছবি করছেন, দেবশ্রী ওয়েবের কাজ করেছেন কিছুদিন আগে। আপনার ইচ্ছে করে?
– যদি ভালো কিছু হয়, সময়ের অ্যাডজাস্টমেন্ট হয়, করতে পারি।
আপনার ছেলেমেয়েরা কখনও রাজনীতিতে আগ্রহী হতে পারে?
– রাজনীতিতে ওরা পারবে না। খুব সিম্পল জীবন ওদের। যদি এখন থেকে ওদের ইচ্ছে-আগ্রহ থাকত তাহলে ভবিষ্যতে কিছু হতে পারত, কিন্তু সেটা নেই। ছেলে হোটেল ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স করছে, স্পেনে আছে। ওর অন্য জগৎ। মেয়ে স্কুলে আছে। ওর অভিনয়ের ইচ্ছে মাঝে মাঝে প্রকাশ পায়। ওর জন্য সময় আছে। পরে বোঝা যাবে কী করতে চায়। আমার ভালোবাসার জগৎ সিনেমা, অ্যাক্টিং, লেখালিখিতে এলে, মা হিসাবে ভালো লাগবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.