শুক্রবার অভিনেত্রী শতাক্ষী নন্দীর প্রথম বড়পর্দার ছবি ‘কাল্পনিক’ মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। তবে সেন্সরের কোপে আটকে গেল। সেই প্রেক্ষীতেই মুখ খুললেন শতাক্ষী। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
১১ জুলাই বড় পর্দায় আপনার ছবি ‘কাল্পনিক’, যেখানে এই প্রথম অন্যতম লিড চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। সেন্সরের টালবাহানায় আটকে গেল। কী বলবেন?
…একটা অনিশ্চয়তা রয়েছে। আমার এই ধরনের ঘটনার পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। যেটা বুঝলাম একটা ছবিতে সুযোগ পেয়ে অভিনয় করা, এবং ছবিটা তৈরি করার যে যুদ্ধ তার চেয়ে বড় লড়াই হল সেই ছবিকে রিলিজ করিয়ে সাধারণ দর্শকের কাছে পৌঁছে দেওয়া। বিশেষ করে অর্ক মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘কাল্পনিক’-এর মতো সেটা যদি একটা রাজনৈতিক ছবি হয়। আমাদের ছবি সরাসরি দলীয় রাজনীতি নিয়ে কথা বলে না কিন্তু বিভেদের রাজনীতি নিয়ে কথা বলে। সমসময়ের ছবি তুলে ধরে। এটা ঠিক যে ‘কাল্পনিক’ আমার সে অর্থে বড় পর্দায় প্রথম রিলিজ, যেখানে আমি প্রথমবার অনেক কিছু করেছি। তবে এই মুহূর্তে খুব কনফিউজড।
সেন্সরের তরফে কী বলা হচ্ছে?
…সেন্সরের তরফ থেকে অফিসিয়ালি, লিখিতভাবে কিছু কমিউনিকেট করা হয়নি। সমস্যা কোথায়, তা নিয়ে পরিষ্কার করে বলা হচ্ছে না, বরং আবার রিভিউয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও (এই সাক্ষাৎকারের সময় পর্যন্ত) কিছুই লিখিতভাবে জানানো হয়নি– এইটুকু বলতে পারি।
শুনলাম, পুরুলিয়াতে ছবির স্ক্রিনিং হয়েছিল। কেমন অভিজ্ঞতা?
…ঝড়, বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রায় ৭৯০ জন স্থানীয় মানুষ এসেছিলেন ছবিটা দেখতে। এবং ছবি দেখার পর তাঁরা অনেকক্ষণ ছিলেন, ছবিটা নিয়ে কথা বলেছেন। আমি সত্যিই খুব আপ্লুত। আমি ওদের সঙ্গে বসে ছবিটা দেখেছি। এবং এই ছবি কারও ভাবাবেগে আঘাত দিয়েছে বলে তো মনে হয়নি। ওখানকার মানুষের ছবিটা প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে এবং তাঁরা এনজয় করেছেন।
‘কাল্পনিক’-এ আপনার চরিত্র এবং ছবি সম্পর্কে জানতে চাই। ‘কাল্পনিক’ রাজনৈতিক ছবি কেন?
…এই ছবিতে আমি একজন সাংবাদিক। ছবির প্রেক্ষাপট বেশ ইন্টারেস্টিং। তারপর প্রস্তুতি শুরু হয় যেটা একটা কোলাবোরেটিভ জার্নি। এবং পরিচালক হিসাবে অর্ক খুবই কমিউনিকেটিভ, যেটা চাইছে সেটা বুঝিয়ে দিতে পারে। এই ছবির জন্য আমি বাইক চালানো শিখেছি। এই ছবিকে ‘রাজনৈতিক’ বলা হচ্ছে তার খানিকটা ট্রেলার দেখলে বোঝা যায়। এই যে পোলারাইজড সমাজ, বিভেদের রাজনীতি– সেটার কারণে বেঁচে থাকাটাও এই সব কিছুর উপর নির্ভর করছে। এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক বা পলিটিকাল পাওয়ার ঠিক করছে কখন কাকে মার্জিনালাইজড করে দেবে, কে কীভাবে রেসপন্ড করব, এর সঙ্গে তার সম্পর্ক কেমন হবে! সেটাই এই পলিটিকাল থ্রিলারের মূল জায়গা। আমি এখানে ‘মৈথিলী’। সে ‘চক্রপাণিপুর’ নামক গ্রামে একটি মন্দির নিয়ে নতুন স্টোরির খোঁজ পায়। এই স্টোরি চেজ করতে গিয়ে ‘আসাড়ু’ নামক গ্রামের খোঁজ পায়। আর একটু খোঁজ করতে গিয়ে দ্যাখে সেখানে ‘দেবারী রক্ষিত’ (রজতাভ দত্ত) নামক এক প্রফেসারের খুন হয়। আরও জটিল হয়ে গোটা বিষয়টা।
রাজনৈতিক বলতে আপনার কাছে কী?
…তার আগে যেটা বলতে চাই আমার অভিনয়ে আসা থিয়েটার দিয়ে, সেটা কেবল কলকাতা শহরে প্রসেনিয়াম ভিত্তিক থিয়েটার নয়। মফস্সল, গ্রাম, বিভিন্ন শহর ঘুরে নাটক করেছি এবং মানুষ কীভাবে বাঁচে সেটা চোখের সামনে দেখার সুযোগ হয়েছে। এমনকী রোহিঙ্গা রিফিউজিদের জন্য ‘ক্লাউনিং’ও করেছি। আমার কাছে কোনও কিছুই অরাজনৈতিক নয়। আমি মনে করি, একটা প্রেমের গল্পও পলিটিকাল, বাজারে আলু-পটলের দাম বাড়ল কি না সেটাও পলিটিকাল। সোশ্যাল স্ট্রাকচার, সমাজ এবং মানুষের মধ্যে যে ডায়নামিক্স সেটা কেন- কীভাবে প্রভাবিত হয়– এই সব কিছুই আমার কাছে রাজনীতি।
‘বিরহী’ এবং অন্যান্য ওয়েব সিরিজে যে চরিত্রে আপনাকে দেখেছি, বেশির ভাগই মফস্সল থেকে আসা চরিত্র। তেমনই চরিত্র কি বার বার আসে?
…থিয়েটার, নানা ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্ম, আমার নাচ– এই সব করছিলাম। তারপর ফিল্মে এক্সপ্লোর করার কথা মনে হয়। প্রদীপ্তদার (ভট্টাচার্য) কাছে আমিই প্রথম যোগাযোগ করি। নিজেই ১২-১৩ মিনিটের শো-রিল বানিয়ে পাঠিয়েছিলাম। তার এক বছর পর ‘বিরহী’ হয়। ‘বিরহী’-র পরে ‘ফেলু মিত্তির লেন’, ‘ইন্দু’, ‘হরগৌরী পাইস হোটেল’। তবে মেনস্ট্রিমে খুব বেশি করিনি। এটা ঠিক যে আমার কাছে ‘মফস্সল’ ঘেঁষা চরিত্র বেশি এসেছে। কম কাজ করি– কারণ স্ট্রিরিওটাইপ হতে চাই না। তবে আমার কাছে শ্রেণি, গ্রাম, শহর দিয়ে বিভাজন তৈরি হয় না। আমার কাছে একজন গ্ল্যামারাস চরিত্রও যা একজন পরিচারিকাও তাই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.