সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মুক্তির প্রাক্কালে রাজ্যসভায় প্রদর্শিত হওয়ার সুবাদে নতুন মাইলফলক গড়েছিল ‘আমার বস’। তার মাঝেই শহরের অলিন্দে দুটি খ্যাতনামা প্রেক্ষাগৃহে স্লট না পাওয়ার অভিযোগ করেছিলেন শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তবে ৯ মে রিলিজের পর থেকে ঝোড়ো ব্যাটিং করছে নন্দিতা রায় পরিচালিত ছবি। বিগত ২২ দিনে দর্শকদের বিপুল ভালোবাসায় আপ্লুত শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ও।
হিসেব বলছে, এখনও পর্যন্ত আড়াই লক্ষেরও বেশি সংখ্যক দর্শক দেখে ফেলেছেন রাখি গুলজার, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় অভিনীত এই সিনেমা। কলকাতা তো বটেই এমনকী শহরতলীতেও প্রেক্ষাগৃহে ভিড় উপচে পড়ছে ‘আমার বস’ দেখার জন্য। প্রযোজনা সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, যে বেহালার দুটি সিনেমা হলে ব্রাত্য ছিল এই ছবি। সেই অঞ্চলেরই সিঙ্গলস্ক্রিনে বাজিমাত করেছে ‘আমার বস’। বাংলা সিনেমাকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সিঙ্গলস্ক্রিনের তাৎপর্য বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ। এপ্রসঙ্গে ছবির রাগী বস ‘অনিমেষ’ ওরফে শিবপ্রসাদ কী বলছেন? সংবাদ প্রতিদিন ডট ইন-কে অভিনেতা, পরিচালক তথা প্রযোজক জানালেন, “অজন্তা সিনেমাহলে যখন গিয়েছি, তখন দর্শকদের মধ্যে দারুণ উন্মাদনা উপলব্ধি করেছি। ২০১৫ সালে যখন ‘বেলাশেষে’ রিলিজ করেছিল, তখন শতদীপ সাহা (ডিস্ট্রিবিউটর) আমাদের জানাত যে, টানা একমাস ‘বেলাশেষে’ হাউসফুল ছিল অজন্তা সিনেমাহলে। এবার ‘আমার বস’-এর ক্ষেত্রেও টানা ২২ দিন হাউসফুল। ধন্যবাদ অজন্তা সিনেমাহলকে এবং শতদীপ সাহাকে আমাদের পাশে থাকার জন্য। আরও অনেক মানুষের এই সিনেমা দেখা বাকি। আমি চাই, এরকমই হাউসফুল হয়ে থাকুক আমাদের ছবি। দর্শকের কাছে আমরা ঋণী।”
নন্দিতা-শিবপ্রসাদের সিনেমা মানেই বাস্তব সমাজের দলিল। নতুন ভাবনাচিন্তা কিংবা সমাজকে নতুন বার্তা দিতে পরিচালকদ্বয়ের জুড়ি মেলা ভার। আর সেই ভাবনায় ভর করেই ভিন্নস্বাদের সিনেমা উপহার দিয়ে বরাবর দর্শকদের মন কেড়ে এসেছেন তাঁরা। ‘আমার বস’-এর ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। বৃদ্ধ মা-বাবাদের জন্য ‘ডে কেয়ার হোম’ খোলার ভাবনা ‘আমার বস’ সিনেমাটির গল্পের অন্যতম ইউএসপি। উল্লেখ্য, ‘আমার বস’-এর সুবাদেই দীর্ঘ বাইশ বছর বাদে বাংলা সিনেমায় প্রত্যাবর্তন করতে চলেছেন রাখি গুলজার। শেষবার ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘শুভ মহরৎ’ ছবিতে গোয়েন্দা ‘রাঙা পিসি’র ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল তাঁকে। তবে তার পর দু’ দশক কেটে গেলেও সিনেপর্দায় তাঁকে দেখা যায়নি। ‘আমার বস’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য রাজি করিয়ে রাখিকে বাংলার পর্দায় ফেরানোর অসাধ্য সাধন করেছেন নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। যে ছবিতে এক প্রকাশনী সংস্থার রাগী বস অনিমেষ ওরফে শিবপ্রসাদের মা শুভ্রা গোস্বামীর ভূমিকায় দেখা গেল তাঁকে। হলফ করে বলা যায়, এত বছর বাদে বাঙালি দর্শকরা যে তাঁর টানেই হলে ভিড় জমিয়েছেন।
নন্দিতা-শিবপ্রসাদের ফিল্মোগ্রাফির উপর চোখ রাখলে বোঝা যায় যে, তাঁদের প্রত্যেকেটা ছবিই সমাজের আস্ত বাস্তব দলিল। আর ইউএসপি? সিনেমার জটিল ব্যাকরণের ধাঁধায় না গিয়ে সহজ-সরল ন্যারেটিভই পরিচালকদ্বয়ের সম্বল। অতিনাটকীয়তা, কাকতালীয় বিষয়, যুক্তিবুদ্ধির মারপ্যাঁচ বর্জিত আবেগঘন দৃশ্যায়ণ। যা দেখে বক্সঅফিসের মার্কশিটেও ফুলমার্কস বসিয়ে এসেছেন দর্শকরা। খবরের কাগজে পড়া কোনও প্রতিবেদন হোক কিংবা লোকমুখে প্রচারিত কোনও গল্প, সেসবের মজ্জায় ঢুকে বরাবর কন্টেন্ট সাজিয়ে আসছেন নন্দিতা রায় এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। উইন্ডোজ-এর প্রতিটি কাজে কন্টেন্টই আসল ‘কিং’। বাড়ির বা আশেপাশের গল্প যখন রুপোলি পর্দায় ম্যাজিক তৈরি করে, তা উপভোগ করতে যে দর্শকরা বারবার হলমুখো হবেন, সেটাই স্বাভাবিক। তাই কলকাতা টু মফঃস্বল সব হলেই হাউজফুল বোর্ড ঝোলাতে সক্ষম তাঁরা বছর খানের ধরে। ‘আমার বস’-এর ক্ষেত্রেও যে তার অন্যথা হল না, সেটা বিগত কয়েক দিনের দর্শকের অঙ্কই বলে দেয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.