‘অতি উত্তম’ রিলিজের প্রাক্কালে টলিউডের ফার্স্টবয় সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের মুখোমুখি বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
ট্রেলারের ফিডব্যাক কেমন? অতি উত্তম বলা যায়?
– অবশ্যই ‘অতি উত্তম’। খুবই উচ্ছ্বসিত সবাই। পার্সেন্টেজের নিরিখে যদি বলি তাহলে নব্বই শতাংশ মানুষ খুবই থ্রিলড, যে প্রযুক্তির সাহায্যে উত্তমকুমারকে নিয়ে আবার একটা ছবি দেখা যাবে।
‘অতি উত্তম’ তো বেশ কিছু বছর আগে তৈরি, মুক্তি পাচ্ছে ২২ মার্চ। এত দেরি কেন?
– ২০১৮ সালে কাজ শুরু হয়েছে। প্রায় ছয় বছর লেগেছে এটা কমপ্লিট করতে। রিলিজে দেরি হওয়ার নানা কারণ। প্রথমত, এই ভাবনাকে বাস্তবায়িত করা, টেকনিক্যাল বাধাগুলো উত্তীর্ণ হওয়া। ভিসুয়ালি ভিএফএক্স দিয়ে কতটা করা ম্যানেজ করা যায় সেটা বোঝা, সেটা নিয়ে আলোচনা করা। আরেকটা সমস্যা হল, অরিজিনাল মেটিরিয়ালটা খুব খারাপভাবে রিস্টোর করা। এমন অনেক ছবি আছে যেটার কোয়ালিটি খুব খারাপ, ভালো ভিএফএক্স দিয়েও রিট্রিভ করা সম্ভব হয়নি। আর চিত্রনাট্য লেখার প্রসেসটা বেশ দীর্ঘ।
সেটার কথায় আসছিলাম। এ তো অনেকটা ডিম আগে না মুরগি আগে– তেমন ব্যাপার!
– প্রথমে একটা স্ক্রিপ্ট লিখেছি, তারপর প্রতিটা সংলাপের যতটা সম্ভব কাছাকাছি লাইন উত্তম কুমারের ছবি থেকে খুঁজে বের করা। প্রথম ড্রাফটটা সেইভাবে লেখা। তারপর ছবি দেখতে দেখতে চিত্রনাট্য পাল্টাতে পাল্টাতে গিয়েছি। চুয়ান্নবার এডিট করতে হয়েছে। প্রায় সাতাশিটা ছবি দেখতে হয়েছে, তার মধ্যে চুয়ান্নটা ছবি কাজে লেগেছে। তাছাড়া কনটিনিউটি মেলাতে গিয়েও অনেক সমস্যা।
আপনার প্রতিটা ছবির ভাবনাতেই একটা চমক বা গিমিক থাকে। উত্তমকুমারকে নিয়ে এমন একটা ছবি করবেন, এই ভাবনা কোথা থেকে এল?
– দেখো ‘গিমিক’ শব্দটায় আমার আপত্তি আছে। কারণ এই শব্দটায় একটা সুপারফিশিয়াল ব্যাপার আছে। একটা ভাবনা যেটাকে বাস্তবায়িত করতে ছয় বছর লাগে সেটাকে গিমিক বলে আমি মনে করিনা। আমি বলব, আমার প্রতিটা ছবির মধ্যে একটা ইউএসপি থাকে। ইউনিকনেস থাকে। সেটাকে নেগেটিভভাবে দেখা ঠিক নয়। এমন ছবি বানাতে চাই যার মধ্যে একটা নতুনত্ব আছে বা আমি দেখতে পছন্দ করি। আর এই ছবির ভাবনা মাথায় এসেছে কারণ প্রতিবছর উত্তমকুমারের জন্ম বা মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রশ্ন করতেন, মহানায়ক বেঁচে থাকলে তাকে নিয়ে কী ছবি করতেন? সেটা শুনতে শুনতে মনে হল, এভাবে ছবি করে দেখাই যাক না। আর আমি উত্তমকুমারের অসম্ভব ভক্ত।
হ্যাঁ, মানে প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলা!
– আসলে সমস্যা হল দক্ষিণে রাজামৌলি ‘ইগা’ ছবিতে যখন একটা মাছিকে হিরো করে ছবি করে সেটা রেভোলিউশনারি, ইনোভেটিভ অনেক কিছু বলা যায়, প্রশংসা পায়, ভালোবাসা পায়। আর বাংলায় প্রথমেই কী করে হবে, কেন হবে, কী দরকার– এসব নানা প্রশ্ন ওঠে!
আপনি কী প্রযোজকদের কথা বলছেন?
– না, না কেবল প্রোডিউসার নয়, টেকনিক্যাল টিম, এমনকী, দর্শকও সন্দিহান। ফাইনালি যখন চোখের সামনে এল, তখন বুঝল যে হ্যাঁ, এটা সম্ভব।
ছোটবেলা থেকে বাড়িতে দেখেছি উত্তম-সৌমিত্র ভক্তদের নিয়ে দুটো দল। আমার মা যেমন সৌমিত্রর ফ্যান অন্যদিকে মাসি উত্তমকুমার। একদিকে পপুলার অন্যদিকে ইন্টেলেকচুয়াল- এমন একটা বিভেদ তৈরি হয়েছিল।
– এই উত্তম-সৌমিত্র ডিবেটে আমি নিঃসন্দেহে উত্তমকুমারের ভক্ত। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অসাধারণ অভিনেতা, এই নিয়ে কোনও কথা হবে না। কিন্তু উত্তমকুমার শুধু অভিনেতা নন, শুধু স্টারও নন। উনি বঙ্গজীবনের অঙ্গ। বাঙালিয়ানা বলতে আমরা যা কিছু বুঝি, উত্তমবাবু তার মধ্যে অন্যতম। হি ইজ আ সোশাল ফেনোমেনা। আর দুর্বল চিত্রনাট্য, বাজে পরিচালনা সত্ত্বেও উনি যেভাবে শাইন করতেন তাতে ওঁর জাত
চেনা যায়। সেখানে উত্তমকুমারের ধারেকাছে কেউ নেই।
আপনার প্রথম ছবি ‘অটোগ্রাফ’ বা তারপর ‘জাতিস্মর’, ‘শাজাহান রিজেন্সি’, ‘এক যে ছিল রাজা’– সবেতেই উত্তমকুমারের যোগ আছে। এটাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
– ‘নায়ক’ বাদ দিচ্ছি। এটার একটা ব্যাখ্যা আমি পেয়েছি। উত্তমকুমার যে ছবিগুলো করতেন তার সঙ্গে বাঙালিয়ানা বা সে বিষয়ের সঙ্গে বাঙালির হৃদয়ের যোগ আছে। এদিকে বাংলা গান, বাংলা সংগীত নিয়ে আমার উৎসাহ, সেই জায়গা থেকে ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’কে নিয়ে আগ্রহ। অন্যদিকে কবীর সুমনের ‘জাতিস্মর’ গান থেকে অনুপ্রাণিত আমার ছবি। এবার এই দুটোই পৃথকভাবে আমার কাছে এসেছে। বা ধরা যাক ভাওয়াল সন্ন্যাসী কোর্ট কেস। পৃথিবীর জুডিশিয়াল ইতিহাসের অন্যতম উদাহরণ। এটা নিয়ে ছবি করার কথা মনে হয়েছিল, তাই ‘এক যে ছিল রাজা’। আমার কলকাতাকে ভালোবাসা, কলকাতার প্রতি প্রেমের কারণ– একটা সুমনের গান হলে অন্যটা শঙ্করের ‘চৌরঙ্গী’ উপন্যাস। সেখান থেকে ‘শাজাহান রিজেন্সি’, আর প্রতিটি বিষয় নিয়ে ছবিতেই উত্তমকুমার অভিনয় করে গিয়েছেন। তবে আমার ছবিগুলো রিমেক নয়, আমি রিমেকে বিশ্বাস করি না। বঙ্গজীবন এবং সংস্কৃতির কাছের বিষয় নিয়ে ছবি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি তো অনেক পরে জন্মেছি। কী আর করা যাবে।
উত্তমকুমার, ক্রিকেট আর খাবার ছাড়া কী নিয়ে অবসেশন আছে? সম্প্রতি সাপ (পাইথন) পুষেছেন বাড়িতে!
– ছোটবেলা থেকেই আমার সাপ নিয়ে অবসেশন আছে, যেটা এখন গিয়ে চরিতার্থ হয়েছে। আমি সাপুড়েদের সঙ্গে প্রচুর সময় কাটিয়েছি। আমার খুব মিষ্টি লাগে সাপের গোটা ব্যাপারটাই। আই ফাইন্ড দেম ভেরি এলিগ্যান্ট, জেন্টল অ্যান্ড ডোসাইল।
সবাই বলছে সৃজিত দুধ-কলা দিয়ে কালসাপ পুষল!
– সমস্যা হচ্ছে, আমাদের উপমহাদেশে সাপ নিয়ে এত কুসংস্কার, ভুল ধারণা, অমূলক ভয় জন্মে গিয়েছে যার সঙ্গে প্রচুর নেগেটিভিটি রয়েছে। সেটা খুব অন্যায়ের। আর সাপের মেনটেনেন্স খুব সহজ। সাত-দশ দিনে একবার খায়। মাছের মতো অ্যাকোয়ারিয়ামে থাকে। কোথাও ঝামেলা নেই। লিগ্যাল দিকটা একটু পড়াশোনা করে তারপর পুষতে হবে। এটা কেরল থেকে এসেছে। ভারতে সেই জীবজন্তুই পুষতে পারো যেটা আমাদের দেশের জঙ্গলে নেটিভ নয়। সেটা কোনও রিসেলার বা ব্রিডারের থেকে নিতে হবে, ডিরেক্টলি ইমপোর্ট করতে পারবে না। সব নিয়ম মেনে ‘উলুপী’কে আনা হয়েছে।
প্রায় চোদ্দো বছর ইন্ডাস্ট্রিতে। বক্স অফিস সাফল্য, দর্শকের ভালোবাসা এবং গালাগাল দুটোই পেয়েছেন। সবাই বলে আপনি প্রশংসা নিলেও, নেগেটিভ সমালোচনা নিতে পারেন না। কী বলবেন?
– নেওয়া মানে কী? শোনা, তাই তো? আমি ভালো-খারাপ দুটোই শুনি। খারাপের ধরনটা খারাপ লাগলে ব্লক করে দিই। আর ছবিটা তো আমি নিজের জন্য বানাই। সেটা নিয়ে লোকের ভালো লাগলে ভালো লাগে, খারাপ লাগলে আমার মনখারাপ হয়। কিন্তু আমি আমার কাজ করে যাই। এটা নিয়ে খুব ভাবি না। আসলে আমি নিজেকে সিরিয়াসলি নিই না।
সে কী, লোকে তো বলে উল্টো কথা। নিজেকে খুবই সিরিয়াসলি নেন।
– লোকে উল্টোটা বলে, কারণ তাদের গায়ে লাগে যখন আমি তাদের সিরিয়াসলি নিই না।
এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে পরিচালক সৃজিত কোন ‘ফেজ’-এ আছেন?
– এক্সপেরিমেন্টাল! প্রথম দশ বছরে আমি অনেক সাফল্য পেয়েছি– বক্স অফিসের দিক থেকে, ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ডের দিক থেকে, আমার মনে হয়েছে যদি এক্সপেরিমেন্ট করতে হয়, তাহলে আমাকে এভাবেই করতে হবে। সেকেন্ড ফেজে তাই নানা ধরনের ছবি করতে চাই। যেমন ধরো এই, ‘অতি উত্তম’, ‘এক্স ইকুয়াল টু প্রেম’, ‘শেরদিল’। যেটা বক্স অফিসে সাফল্য না পেলেও আমি বানাতে চাইব।
আপনার নতুন ছবির ঘোষণা হল। একঝাঁক নামকরা অভিনেতা রয়েছেন…
– এটা ২০১০-এর স্ক্রিপ্ট। ‘অটোগ্রাফ’-এর পর এই ছবিটা করার কথা ছিল অনেক কারণে হয়নি। ফাইনালি করছি।
শোনা যাচ্ছে ‘টুয়েলভ অ্যাংরি মেন’ অবলম্বনে এই ছবি। যেখানে একজন খুনের অভিযুক্ত টিনএজারকে নিয়ে কোর্টরুম ড্রামা।
– না, একেবারেই না। ইটস নট এ কোর্ট ড্রামা!
দেবের সঙ্গে ‘টেক্কা’র মতো থ্রিলারে কাজ করার অভিজ্ঞতা? দেবকে জমাদারের চরিত্রে কনভিন্স করালেন কী ভাবে?
– এটা থ্রিলার আমি তো বলিনি। এটা হস্টেজ ড্রামা। শুট করে দারুণ লাগল। দেব এতটা ইভলভ করেছে ভাবাই যায় না! দারুণ ইনপুট দিয়েছে। জমাদারের চরিত্রে, আমি তো বলিনি। হয়তো করছে।
শেষ প্রশ্ন, আগেও করেছি। আপনার ছবি প্রোটাগনিস্ট সবসময় পুরুষ কেন? নারী কী দোষ করল? তাদের বুঝতে চান না, বুঝতে পারেন না, নাকি অতটা গুরুত্ব দিতে চান না?
– আমি কোনও এজেন্ডা বেসড ছবি করতে চাই না।
এজেন্ডা বলছি না, মহিলা প্রোটাগনিস্ট-এর কথা বলছি।
– আমার জেনারেলি পুরুষদের বেটার লাগে!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.