‘গৃহপ্রবেশ’ মুক্তির আগে একান্ত আলাপচারিতায় শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
‘গৃহপ্রবেশ’ মুক্তি পাবে, ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’-র শুটিং শুরু হবে এবং একই সঙ্গে দেবের সঙ্গে বহু প্রতীক্ষিত ছবি ‘ধূমকেতু’ মুক্তি পাবে? ২০২৫ প্রচণ্ড ইভেন্টফুল?
– আমার কাছে প্রত্যেকটা বছরই খুব ইভেন্টফুল। কারণ শুধুমাত্র কাজ দিয়ে আমার জীবনটাকে মাপি না। আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, আমার বাচ্চাদের কারণেও ইভেন্টফুল। বছরে একটি ছবি মুক্তি পেলেও সেটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই বছরটা খুব স্পেশাল। অনেকগুলো পরীক্ষা। আর প্রতিটি পরীক্ষায় সেরা পারফর্ম করতে হবে।
কাজ দিয়ে জীবনটাকে মাপেন না, তবু আঠেরো বছর ইন্ডাস্ট্রিতে কাটিয়ে ফেলার পর কতটা সন্তুষ্ট নিজের কেরিয়ার নিয়ে?
– আই অ্যাম অলওয়েজ হ্যাপি, খুবই স্যাটিসফায়েড। কেবল ভালো দিকগুলো দিয়ে নিজেকে মোটিভেট করি। এবং যে খারাপ দিক বা অভিজ্ঞতাগুলো অর্থাৎ যেটা আমার মনের মতো হয় না, বা আকস্মিকভাবে কিছু ঘটে- সেই অভিজ্ঞতাগুলোও আসলে গুরুত্বপূর্ণ কারণ সেটা থেকেও আমরা শিখি। আর সাফল্য মানে কী? সমাজ কিছু প্যারামিটার বেঁধে দিয়েছে। যেমন খ্যাতি, অর্থ এগুলো থাকা মানেই সফল! তাই কি? আমার বাড়িতে যে হাউসহেল্প আসে সে মনে করতেই পারে শি ইজ দ্য কুইন অফ হার হাউসহোল্ড। আমার শাশুড়ি যে কিছুই করে না, তার নাতি-নাতনির মুখ দেখে মনে করে এতেই সার্থকতা বা সাফল্য! তাই না!
আপনার পরিবারে আরও এক নতুন সদস্য এসেছে! সন্তান ছোটো থাকাকালীন বেশির ভাগ সময়টা মায়ের কাছেই থাকে। ওদের সামলে কাজ সামলানো, বাড়ি সামলানো, ক্লান্ত লাগে না?
– শুনলে মনে হবে, বলার জন্য বলছি। সত্যি বলছি, আমার ক্লান্ত লাগে না। প্রচণ্ড কাজের চাপ থেকে বাড়ি গেলে ওই দুটোর মুখ দেখলে আরাম হয়। আবার ওদের সময় দেওয়ার জন্য টানা বাড়িতে আছি, তারপর নিজের কাজে ফিরলে আনন্দ হয়।
‘গৃহপ্রবেশ’-এর ট্রেলার বেশ উৎসাহ জাগিয়েছে। একটা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। ঋতুপর্ণ ঘোষকে উৎসর্গ করা নিশ্চয়ই কাকতালীয় সমাপতন নয়। শোনা যাচ্ছে, সম্পর্কে একটা কুইয়ার অ্যাঙ্গেল আছে…
– তার জন্য তো ছবিটা দেখতে হবে। এটুকু বলতে পারি, এই বাড়ির গল্প এত সহজ সব কিছু নয়, এই বাড়ির মধ্যে একটা বড় রহস্য আছে।
যদি ধরে নিই, কুইয়ার অ্যাঙ্গেল আছে এবং সিনেমায় সেটাকেই ‘রহস্য’ বা সারপ্রাইজ এলিমেন্ট হিসাবে দেখা মানে মূলস্রোত থেকে কি আলাদা করে দেওয়া নয়? মানে কুইয়ার প্রসঙ্গ কেন স্বাভাবিকভাবে দেখানো হবে না? সাসপেন্স বা সারপ্রাইজ এলিমেন্ট হিসাবেই কেন দেখছি? এটা যে কোনও ছবির ক্ষেত্রেই জানতে চাইছি?
– এই ছবির ক্ষেত্রে এটাই সারপ্রাইজ এলিমেন্ট কি না তার জন্য ছবিটা দেখতে হবে। আর যে কোনও বিষয়ে সচেতনতা তৈরি হতে সময় লাগে। ধরো রাস্তায় থুতু ফেলা, হেলমেট না পরা, জোরে হর্ন দেওয়া- এগুলো নিয়ে জরিমানা হয়, এখন লোকে খানিকটা বোঝে বা মানে। আমরা ছোট থেকে একরকমভাবে জেনেবুঝে বড় হয়েছি। দুম করে নতুন কিছু বললে সেটা চট করে অ্যাকসেপ্টেড হয় না। একটা শিশুকে ধীরে ধীরে বড় করার মতো। সমাজকে যদি তুমি একটা বাচ্চার মতো ট্রিট করো তাহলে দেখবে ব্যাপারটা সহজ হয়ে গিয়েছে, নাকি তুমি এভাবে ভাববে যে বিষয়টাকে আলাদা করা হচ্ছে বা ব্র্যাকেটে ফেলা হচ্ছে। বরং তুমি এভাবে ভাববে যে ধীরে ধীরে বিষয়টাকে বোঝাচ্ছি, যারা এই ম্যাটারটাকে অ্যাকসেপ্ট করে নিয়েছে তারা স্লোলি বিষয়টা নিয়ে অ্যাওয়ারনেস তৈরি করেছে।
আপনার কি মনে হয় যে সমাজ এমন একটা জায়গাতে আছে যে ‘এতটাই’ ধীরে ধীরে বোঝাতে হবে?
– শুধু কুইয়ার বা সমকামিতা বিষয় নিয়ে বলছি না, যে কোনও বিষয়েই এটা প্রযোজ্য। এখন জরিমানা হবে বলে হেলমেট পরছে, নিজে থেকে পরছে না। এই বেসিক সেন্সটা নেই যে দুর্ঘটনা ঘটলে নিজের ক্ষতি, বা ধরে রাস্তা অপরিষ্কার রাখা, বা পাবলিক স্পেসে স্মোক করা….।
হেলমেট পরা বা রাস্তা পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি কি কুইয়ার মানুষের অধিকারের কথা উল্লেখ করা যায়? দুটোর গুরুত্ব এক নয়।
– হয়তো আমি অন্যরকম উদাহরণ দিচ্ছি, কিন্তু হোমোসেক্সুয়ালিটির ক্ষেত্রেও তাই বলব। যেহেতু জিনিসটা খুব নতুন, হয়তো বা বহু বছর আগে থেকে যখন ছিল তখন মানুষ অ্যাকসেপ্ট করত না। এখন কম সংখ্যক মানুষ অ্যাকসেপ্ট করেছে। যখন সংখ্যা কম হয় তখন ধীরে ধীরে বোঝাতে হয়।
শুটিংয়ের প্রায় ৯ বছর পর দেবের সঙ্গে ছবি মুক্তি পাচ্ছে। আপনাদের মধ্যে যাই দূরত্ব থাক, ফ্যানেরা দেব-শুভশ্রী জুটি আজও চায়। বক্স অফিসের কথা মাথায় রেখেই কি আবার হাত মেলালেন? ছবির প্রচারে একসঙ্গে দেখা যাবে?
– ‘ধূমকেতু’ রিলিজ হতে এখনও অনেক সময় বাকি আছে। আগস্টে মুক্তি। সেই সময়ে বা ছবি মুক্তির ঠিক আগে ‘ধূমকেতু’ নিয়ে কথা বলব। এই মুহূর্তে ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তর ‘গৃহপ্রবেশ’ নিয়েই কথা বলতে চাই। এই ছবিটা বানাতে অনেকটা সময় লেগেছে, প্রায় তিন বছর। মাঝখানে আমি প্রেগন্যান্ট হয়ে গিয়েছিলাম, তখন সবাই অপেক্ষা করেছে। এই ছবিটার জন্য অনেক স্যাক্রিফাইস রয়েছে।
‘লহ গৌরাঙ্গ…’-তে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রথম কাজ…
– এটুকু বলব সৃজিতের সঙ্গে অনেকবার কথা হয়ে কাজ হয়নি। ফাইনালি হচ্ছে। ১২ জুন থেকে আমার শুটিং শুরু। আমি খুব এক্সাইটেড। কারণ এই চরিত্রে প্রচণ্ড চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
এর আগে অনন্যা চট্টোপাধ্যায় এবং রুক্মিণী মৈত্রকে বিনোদিনীর চরিত্রে দেখা গিয়েছে। তুলনা হবে- এটা ভেবে কি বাড়তি চাপ?
– এইসব নিয়ে ভাবলে, নিজের পার্টটাতে মন দিতে পারব না।
একদম মেনস্ট্রিম মশালা ছবির নায়িকা যাঁরা, তাঁরা একটা সময়ের পর বয়স হলে এই ঘরানা ছেড়ে একটু অন্য ধরনের ছবি করেন। এই ট্রেন্ড বলিউড, টলিউড সব জায়গাতেই। এদিকে হিরোরা কিন্তু দিব্যি দুই ঘরানার ছবিই করে। এটাকে কীভাবে দেখেন?
– আসলে খানিকটা কনশাস ডিসিশন তো বটেই। আর ‘পরিণীতা’ করার পর ভালো চরিত্রের প্রতি একটা খিদে তৈরি হয়। ওই বলে না, রক্তের স্বাদ পাওয়ার পর আর অন্য কিছু মুখে রোচে না। যে ছবিতে আমার করার মতো কিছু থাকবে না, সেটা আর করব না। আর তুমি যেটা বলছ সেটা এগেন একটা সিস্টেমের সমস্যা। আমি যখন ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিলাম সেই সময় থেকে এখন বেশ কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। আমি হোপফুল যে তেমন নাচগানের ছবিতে নায়িকাদের তেমন গুরুত্বপূর্ণ রোল থাকবে। শুধু নাচগান করতে হলে তো করব না। আমাদের জন্য একটু পার্টও থাকতে হবে। সেই জন্য এমন ছবি আমাদের অফার করে না, কারণ জানে যে আর করবে না (হাসি)।
‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’-এর পর আবার নতুন ওয়েব সিরিজ দেখা যাবে। ওটার জনপ্রিয়তা কি বাড়তি চাপ তৈরি করছে?
– হ্যাঁ, অদিতি রায়ের নতুন ওয়েব সিরিজ। নাহ! এই প্রেশার নিতে রাজি নই। বিশাল চাপ হবে এভাবে ভাবলে। ওটার সঙ্গে তুলনা করা ঠিক হবে না। অদিতিদির ‘অনুসন্ধান’ খুব অন্যরকম সিরিজ, এবং দারুণ কনটেন্ট। জুলাইয়ে শুটিং শুরু।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.