বিয়ের পর প্রথম ছবি। পাকা গৃহিণী থেকে একেবারে সুইট সিক্সটিন স্কুলছাত্রীর লুকে ধরা দিয়েছেন। ট্রেলারের ঝলকেই তাঁকে নতুন করে চিনল টলিউড ইন্ডাস্ট্রি। চেনা গণ্ডি ছাড়িয়ে একেবারে অন্য ভাবে ধরা দিয়েছেন পরিচালকের ফ্রেমে। তিনি রাজ চক্রবর্তীর ‘পরিণীতা’ শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি মুক্তি পাচ্ছে ৬ সেপ্টেম্বর। তার প্রাক্কালেই সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-এর ক্যামেরায় অকপট শুভশ্রী। কথা বললেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ।
তাহলে রাজের হাত ধরে ‘পরিণীতা’ দিয়েই ফের সিনেমায় ফেরা…
হ্যাঁ, কিন্তু ‘বিয়ের পর’ কথাটিতেই আমার আপত্তি রয়েছে। দেখবে মেয়েদেরই এসব শুনতে হয়- ‘বিয়ের পর জীবন কেমন চলছে?.. জীবন কতটা পালটেছে?’ আরে বাবা… জীবনে আর পাঁচটা বিষয়ের মধ্যে বিয়েটাও পড়ে। খুব স্বাভাবিক বিষয়। বিয়ের আগে আমার জীবন যেরকম ছিল এখনও সেরকমই আছে। কোনও পরিবর্তন হয়নি। আগে যেভাবে কাজ করতাম, এখনও সেভাবেই করছি।
‘পরিণীতা’র আগে অবশ্য, টেলিভিশন ডেবিউটাও সেরে ফেলেছেন..
হ্যাঁ, ওই জঁরটা ঘেটে দেখার ইচ্ছে ছিল। খুব সুন্দর একটা রিয়েলিটি শো দিয়ে শুরু করলাম। আমি তো রিয়েলিটি শোয়ের কাজ আর ‘পরিণীতা’র শুট একসঙ্গেই করেছি।
অসুবিধে হয়নি?
ম্যানেজ তো করতেই হয়েছে। মেহুলের মতো একটা চরিত্রের জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। ‘পরিণীতা’র গল্পটা আমার খুব কাছের। আমার দিদিই প্রথম ফেসবুকে গল্পটা দেখে আমার সঙ্গে শেয়ার করেছিল। রাজকে বলায় ওরও খুব পছন্দ হয়। তারপর স্বত্ব কিনে পদ্মনাভদাকে (দাশগুপ্ত) দেওয়া হয় চিত্রনাট্য লেখার জন্য। একটা ৩/৪ লাইনের গল্পকে ২ ঘণ্টার সিনেমায় দাঁড় করানো হয়েছে। ৬ মাস ধরে চিত্রনাট্য লেখা হয়েছে। প্রায় ২২-২৩টা ড্রাফট হয়েছে। প্রত্যেকটা ড্রাফট আমি মন দিয়ে শুনেছি এবং ভীষণভাবে একাত্ম হওয়ার চেষ্টা করেছি।
রাজের ছবি মানেই কপি কিংবা রিমেক আখ্যা দেওয়া হয়।
‘২২শে শ্রাবণ’-এর নেপথ্যের কাহিনিও আশা করি সবারই জানা। রিমেক সবাই করে কিন্তু দোষ রাজেরই হয়।
ট্রেলার লঞ্চের পর আপনার অভিনয় বেশ প্রশংসিত হয়েছে। এর আগে কখনও এভাবে দেখা যায়নি শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়কে।
আমি চেয়েছিলাম সিনেমা দেখার সময়ে দর্শকদের কাছে যেন শুভশ্রী সত্ত্বা ছাপিয়ে যায় ‘পরিণীতা’র মেহুল।
শুভশ্রীও কি মেহুলের মতোই দুষ্টু-মিষ্টি?
একটু বাচ্চাপনা তো আমার মধ্যে রয়েইছে। আমি মনে করি, প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যেই একটা শিশুসুলভ ব্যাপার থাকে।
নিজেকে পোক্ত করার জন্য নিশ্চয় হোমওয়ার্কও করতে হয়েছে অনেক?
একদমই তাই। মেহুলের জীবনের দু’টো পার্ট দেখানো হয়েছে। অনেক লেয়ারিং রয়েছে আমার চরিত্রটির মধ্যে। একবার স্কুলগার্ল হিসেবে দেখানো হচ্ছে। একবার পরিণতমনস্কা মেহুলকে দেখানো হচ্ছে। আমার জন্য ডেফিনিটলি চ্যালেঞ্জিং ছিল। সোহিনীদির (সেনগুপ্ত) কাছে ওয়ার্কশপ করার সময়ে বলেছিলাম, আমাকে একটু অন্য কিছু শেখাও। কিন্তু সোহিনীদি সেসময় বলেছিল, অভিনয় তো শেখানো যায় না। চরিত্রটাকে ফিল করতে হয়। শেখানো যায় না।
মিউজিক লঞ্চের সময় রাজ চক্রবর্তী বলেছিলেন আপনার অ্যাক্টিং স্কিল ইন্ডাস্ট্রির কেউ এখনও কাজেই লাগাতে পারেননি.. আপনার কী মত?
একমত। তবে ‘হানিমুন’ ছবিটা করার সময়ে বুঝেছিলাম কমেডি চরিত্রে অভিনয় করাটাও অত সহজ নয়। কিন্তু ‘পরিণীতা’য় নিজেকে ভাঙার অনেক সুযোগ পেয়েছি। তাই হয়তো মেহুলের চরিত্রে শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিনয়ের অন্য দিকটা দেখতে পাবেন দর্শক।
ঋত্বিক-শুভশ্রী, ইন্ডাস্ট্রিতে নিঃসন্দেহে ছকভাঙা জুটি। কী মনে হচ্ছে দর্শকদের কতটা পছন্দ হবে?
ট্রেলার মুক্তির পর বাবাই-মেহুল জুটি বেশ প্রশংসিত হয়েছে। প্রথমে আমি ভাবতাম, ঋত্বিকদার মতো বড় একজন অভিনেতার সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করতে হবে, কেমন হবে? সেটে আমাকে হেল্প করবে কি না? কিন্তু সেটে গিয়ে দেখলাম এত ডাউন টু আর্থ একজন মানুষ ও। প্রকৃত অর্থে একজন ভাল মানুষ। শুটিংয়ে গিয়ে আমি কখনও ঋত্বিকদাকে (চক্রবর্তী) পাইনি। পেয়েছি বাবাইদাকে। তবে আমাদের অনস্ক্রিন কেমিস্ট্রি ফুটিয়ে তোলার নেপথ্যের মূল কাণ্ডারী কিন্তু পরিচালক।
তাহলে পুরো ক্রেডিট রাজ চক্রবর্তীর?
হ্যাঁ। তবে পরিচালক-ডিওপি সহ গোটা টিমেরই।
স্বামী-স্ত্রী না ডিরেক্টর-অ্যাক্টর, সেটে রাজ-শুভশ্রী কেমিস্ট্রি কেমন ছিল?
স্বামী-স্ত্রী ব্যাপারটা সেটে আমাদের দু’জনের মধ্যে একেবারেই ছিল না। বরের সঙ্গে কাজ করছি সেটা তো দূরের কথা, আমি যে শুভশ্রী সেটাই ভুলে গিয়েছিলাম। মেহুল যতটুকু আমি ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি, পুরো কৃতিত্বই আমার পরিচালকের। সেটে একটা দিনের জন্যও মনে হয়নি যে আমি আমার স্বামীর ছবিতে কাজ করছি।
লুক সেট করার সময়ে কী কী মাথায় রেখেছিলেন?
চিত্রনাট্য শোনার সঙ্গে সঙ্গেই আমার মনে হয়েছিল, মেহুলের মুখে একফোঁটা বেস মেকআপও থাকা উচিত নয়। প্রচণ্ড রিয়েলিস্টিক লুক দরকার মেহুলকে ফুটিয়ে তোলার জন্য। রাজকে বলেছিলাম যে আমি মেক-আপ করতে চাই না। ও শুনে খুবই খুশি হয়েছিল। শুধু সানস্ক্রিন মেখে শুটিং করেছিলাম।
‘হে গর্ভধারিণী’র শুট কবে থেকে?
১৫ সেপ্টেম্বর।
কোথায় হবে শুটিং?
কলকাতা এবং পুরুলিয়া।
একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি, সম্প্রতি কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের চেয়ারম্যান পদে বসানো হয়েছে রাজ চক্রবর্তীকে। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের অপসারণের পর বিস্তর বিতর্ক, জল্পনা হয়েছে। এমনকী কমিটি ছেড়েও বেরিয়ে চলে গিয়েছেন অনেকে। এই প্রসঙ্গে কী বলবেন?
রাজ সম্পর্কে বলব, আমি খুবই খুশি। একজন গর্বিত স্ত্রী। যারা রাজকে কাছ থেকে চেনে ওর স্ট্রাগলিং পিরিয়ড সম্পর্কে জানে। ওর জার্নিটা কিন্তু ভীষণ ইন্সপায়ারিং। রাজ আমার কাছে রিয়েল লাইফ হিরো। ওর হোমওয়ার্ক, সিনেমার প্রতি প্যাশন-ভালোবাসা সব মিলিয়ে দারুণ একটা কাজ করতে চলেছে রাজ। ওর মধ্যে লিডারশিপ ব্যাপারটা রয়েছে। সবাইকে নিয়ে চলার ক্ষমতা রাখে ও। রাজকে অনেক শুভেচ্ছা জানাই চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য। আমি নিশ্চিত যে এবার ২৫তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব খুব ভাল হবে। এবং অন্যরকম হবে।
বিশদে জানতে দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.