Advertisement
Advertisement
Taslima Nasrin on The Bengal Files

‘বিকৃত ইতিহাসে সাম্প্রদায়িকতার বিষ’, ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’কে তোপ তসলিমার! উদ্বিগ্ন বাংলাদেশের হিন্দুদের জন্য

'কোনও উটকো লোক...', তসলিমা নাসরিনের নিশানায় কি বিবেক অগ্নিহোত্রী?

Taslima Nasrin reviews Vivek Agnihotri's The Bengal Files
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:September 12, 2025 1:37 pm
  • Updated:September 12, 2025 1:37 pm   

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জন্মলগ্ন থেকেই বিতর্কে বিবেক অগ্নিহোত্রীর ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’। কখনও বাংলার ইতিহাস বিকৃত করার অভিযোগে চর্চার শিরোনামে উঠে এসেছে এই ছবি তো কখনও বা আবার প্রোপাগান্ডা সিনেমা তৈরির অভিযোগে বিদ্ধ হয়েছেন পরিচালক। এবার এই সিনেমা দেখে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করলেন তসলিমা নাসরিন। ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ দেখে বাংলাদেশের হিন্দুদের জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন লেখিকা।

Advertisement

তসলিমা লিখেছেন, “দীর্ঘ সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ দেখতে দেখতে ভাবছিলাম বাংলায় কি সিনেমা বানানোর লোক কম ছিল, কেন উত্তরপ্রদেশের লোকদের বাংলার কাহিনি নিয়ে হিন্দি ভাষায় সিনেমা বানাতে হয়? কেন বাঙালিরা বাংলার ইতিহাস নিয়ে সিনেমা বানাতে আগ্রহী নন? আগ্রহী না হলে তারপর তো বহিরাগত কেউ এসে বানিয়ে ফেলে সিনেমা। বহিরাগত যদি ইতিহাস সঠিকভাবে উপস্থাপন না করেন, তখন ‘বেঠিক’ ইতিহাসই আমজনতার কাছে কিন্তু ‘ঠিক ইতিহাস’ হয়ে দাঁড়ায়।” বলাই বাহুল্য বাংলার ইতিহাস বিকৃত করার বিষয়টি তসলিমার নজর এড়ায়নি।

সেই পোস্টেই লেখিকার সংযোজন, “জীবনে আমি প্রচুর যুদ্ধের সিনেমা দেখেছি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপর কী অসাধারণ সব সিনেমা বানানো হয়েছে, ইহুদি গণহত্যার উপর, রাশা’র গুলাগের উপর, পল পটের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের উপর, মাও সেতুংয়ের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের উপর, কিউবার বিপ্লবের উপর ভালো ভালো সব সিনেমা আমার দেখা হয়েছে। নামীদামি ইহুদি পরিচালকরাই হিটলারের ৬০ লক্ষ ইহুদি নিধন নিয়ে সিনেমা বানিয়েছেন। সেই সব সিনেমা হৃদয় স্পর্শ করে। তবে ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ মনে হয় না কারও হৃদয় স্পর্শ করার জন্য বানানো হয়েছে। যাঁরা ভালো সিনেমা দেখে অভ্যস্ত, তাঁরা এই সিনেমা দেখেই বুঝবেন, এটি সিনেমা হিসেবে ভালো নয়। চরিত্রগুলো বিশ্বাসযোগ্য নয়। এই সিনেমা কিছু ট্র্যাজিক ঘটনাকে স্মরণ করার জন্য বানানো হয়েছে নাকি কোনও বদ উদ্দেশ্য নিয়ে বানানো হয়েছে, সেটা সিনেমার দর্শকরা বুঝে নেবেন। তথ্য যা দেওয়া হয়েছে, তা সত্য না মিথ্যে, তাও গবেষকরা বলবেন। আজ এক পত্রিকায় রিভিউ বের হয়েছে, লিখেছে- এই সিনেমা মানুষের মনে সাম্প্রদায়িক বিষ ঢোকাচ্ছে। হ্যাঁ, সাম্প্রদায়িক বিষ ঢোকাচ্ছে, কিন্তু তারপরও আমি মনে করি বাংলার দাঙ্গা নিয়ে পরিচালক তাঁর মত প্রকাশ করেছেন। গান্ধীবিরোধী, নেহরুবিরোধী, সেক্যুলারিজমবিরোধী, মুসলিমবিরোধী মত প্রকাশের অধিকার তাঁর আছে। এখন অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ, উদার, মুক্তচিন্তক কেউ বানান নির্ভেজাল কোনও সিনেমা। সেও আমরা দেখব।”

এরপরই বাংলাদেশের হিন্দুদের উপ হওয়া নির্যাতনের কথা মনে করিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তসলিমা নাসরিন। লেখিকার মত, “বাংলাদেশে যে হিন্দুর ওপর অত্যচার হয়, হিন্দুরা যে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়, এ নিয়ে সচেতন এবং সংবেদনশীল বাঙালি পরিচালকদের সিনেমা বানানো উচিত। আমার লজ্জা উপন্যাস নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের কেউ সিনেমা বানাতে সাহস করেননি। ভেবেছেন, এতে তাঁদের সেক্যুলার পরিচয় ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। বাংলাদেশের হিন্দুদের ইতিহাস নিয়ে ভালো কোনও পরিচালক ভালো সিনেমা বানান। তা না হলে কোনও উটকো লোক ‘দ্য বাংলাদেশ ফাইলস’ নামে কোনও প্রোপাগাণ্ডা ফিল্ম যে বানিয়ে ফেলবে না, তা বলা যায় না।”

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ