শম্পালী মৌলিক: ৩০ মে, আজ ‘ঋতু বিয়োগে’র দিন। বারো বছর আগে ঠিক এই দিনটিতেই ইন্ডাস্ট্রিকে ‘অনাথ’ করে চিরঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। তাঁকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়েই শুক্রবার ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত উন্মোচন করলেন তাঁর আসন্ন সিনেমা ‘গৃহপ্রবেশ’-এর ট্রেলার। আর সেই ট্রেলার লঞ্চের অনুষ্ঠানই ঋতুপর্ণ ঘোষের টানে হয়ে উঠল ‘ঋতুময়’। প্রয়াত পরিচালকের জন্য একছাদের তলায় শামিল হন সিংহভাগ টলিউড। উপস্থিত ছিলেন বন্ধু তথা ‘ইন্ডাস্ট্রি’ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, মহেন্দ্র সোনি, রাজ চক্রবর্তী, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, সোহিনী সেনগুপ্ত, আবির চট্টোপাধ্যায়, রুদ্রনীল ঘোষ, জীতু কমল-সহ আরও অনেকে। অনুষ্ঠানের শেষপাতে এলেন শ্রীকান্ত মোহতাও।
স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, “যখনই ঋতুদার নাম ওঠে, তখনই মন ভারী হয়ে যায়। এটা ভেবে যে, ঋতুদা আর আমাদের মধ্যে নেই। ঋতুদার সাথে অনেকবার দেখা হয়ে ওঠেনি, ওঁর সঙ্গে কাজ করা হয়ে ওঠেনি। ওঁকে ভালো করে ছুঁতে পারিনি। মনে পড়ে একটা অনুষ্ঠানে ঋতুপর্ণ ঘোষকে দেখে আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। একেবারে ক্যাবলার মতোই হা করে তাকিয়ে ছিলাম। উনি সেটা বুঝতে পেরে নিজে এসে আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। আমার নাম জানতেন। আমার ছবি ‘পরাণ যায় জ্বলিয়া রে’ দেখেছিলেন। সেটার থেকে বড় পাওনা আমার কাছে আর কিছুই হতে পারে না।” ‘গৃহপ্রবেশ’ ছবিতে ‘তিতলি’ নামে যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি, সেই চরিত্রেও রয়েছে ঋতুপর্ণ ঘোষের ছোঁয়া। সেকথা বলতে গিয়েই শুভশ্রীর সংযোজন, “আজকে আমি ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তকে মন থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ওঁর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। ঋতুদাকে ট্রিবিউট দেওয়ার জন্য এরকম একটা গল্প ভেবেছেন। এই ছবির মুখ্য চরিত্র তিতলিকে আমার মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন, সেটার জন্য সারাজীবন ওঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব। এই কাজটা করতে গিয়ে নিত্যদিন সেটে আমাদের মননে ঋতুদাকে লালন করেছি আমরা। এই ছবিটি পর্দায় দেখতে গিয়ে সকলে ঋতুপর্ণ ঘোষের ছোঁয়া পাবেন প্রতিটা ফ্রেমে।”
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’-তে অভিনেতা হিসেবে ছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। সেই ছবির স্মৃতি চারণায় একটি বিশেষ ঘটনার কথা তুলে আনেন কৌশিক। ‘সেদিন ছিল শেষদিনের শুটিং। চপলরানি সাজবেন ঋতুদা। আর সাজলেই ঋতুদা জিজ্ঞেস করতেন দেখ রেখার মতো লাগছে? বা শর্মিলা ঠাকুরের মতো বসেছি। সমস্ত সাজের পর দেখা গেল ঋতুদা পরিপূর্ণ নারীমূর্তি হয়ে উঠলেন। আমরা আর কথা বলতে পারছিলাম না ঋতুদার সঙ্গে, এত সুন্দর লাগছিল। যথারীতি জিজ্ঞেস করলেন রেখার মতো লাগছে। বললাম খুব সুন্দর লাগছে। তারপর শুটিং শেষ হঠাৎ হেয়ার ড্রেসার এসে বললেন ঋতুদার ডাকছে। উপরের ঘরে গিয়ে দেখি ঋতুদা বসে মেকআপ তুলছেন। হারেম প্যান্ট আর কালো টি-শার্ট পরা। কাঁদতে কাঁদতে বললেন, মেয়েটা চলে গেল। ততক্ষণে কাজল ধুয়ে গিয়েছে। এই মেয়েটার জন্যই অপেক্ষা করেছেন ঋতুদা। তারপর বিভিন্ন সার্জারির মধ্যে ওই মেয়েটিকে খুঁজতে বেরয় ঋতুদা। তারপর নানা অলিগলি ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ হারিয়ে গেল ঋতুদা। আজকে মনে হয় অত্যন্ত দুঃখিত, ঋতুদাকে ওই মেয়েটার সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার জন্য।’
মহেন্দ্র সোনির উপস্থিতিতে আবেগপ্রবণ পরিচালক ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত বললেন, “মণিকে আগে কোনও ছবির ট্রেলার লঞ্চে দেখিনি। আর ওঁকে না ডাকলে ঋতুপর্ণ ঘোষের স্মৃতিচারণা অসম্পূর্ণ বলেই মনে হয়। এই ছবিতে আমার সাধ্যমতো ঋতুদাকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানানোর চেষ্টা করেছি।” প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “ট্রেলার লঞ্চের অনুষ্ঠানে এত মানুষকে দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। কারণ আমরা এমন একটা সময়ে বাস করছি যেখানে মানুষ সম্পর্কগুলো ভুলে যাচ্ছে। সেখানে দাঁড়িয়ে আমাদের ইন্ডাস্ট্রির অধিকাংশ মানুষ আজ এখানে উপস্থিত হয়েছেন, সেটা দেখে ভালো লাগল। ঋতুকে এখন সত্যিই খুব দরকার ছিল। যে কোনও স্কুলেই তো একজন কড়া প্রিন্সিপালের দরকার হয়, ঋতু সেরকমই ছিল।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.