শম্পালী মৌলিক: হিন্দি সিনেমার জন্য বাংলাতেই বাংলা সিনেমার ভাঁড়ারে টান! বলিউড কিংবা দক্ষিণী সিনেইন্ডাস্ট্রির মেগাবাজেট ছবির ধাক্কায় বাংলা সিনেমার মন্দা বাজার। এই সমস্যা নতুন নয়! ধুঁকতে থাকা সিঙ্গলস্ক্রিনগুলিকে ব্যবসার স্বার্থেই মুম্বইয়ের প্রযোজনা সংস্থার শর্তের কাছে মাথা নোয়াতে হয়। ফলে কোণঠাসা হতে হয় বাংলা সিনেমাকে। সেই সমস্যার সমাধান খুঁজতেই বৃহস্পতিবার নন্দনে টলিপাড়ার তাবড় প্রযোজক, পরিচালকরা একজোট হয়ে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সেই ইতিবাচক বৈঠকে খুশি টলিউড।
মেগাবাজেট হিন্দি সিনেমার গুঁতোয় কখনও ভালো ব্যবসা করা বাংলা ছবিকে হল থেকে উৎখাত করা হয়েছে, আবার কখনও বা ব্যবসার স্বার্থে বাংলা সিনেমার শো কমিয়ে দেওয়া হয়েছে মারাত্মক হারে। যার প্রভাব সরাসরি পড়েছে বাংলার ছবির ক্যাশবাক্সে। বর্তমানে রাজ্যজুড়ে যখন বাঙালি অস্মিতায় শান দেওয়া হচ্ছে, তখন সেই আবহেই বাংলা সিনেমাকে বাঁচাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হয়েছিলেন টলিউডের পরিচালক-প্রযোজকরা। সেই প্রেক্ষিতেই এদিন বৈঠক ডাকেন অরূপ বিশ্বাস। নির্ধারিত সময়ে মিটিংয়ে যোগ দেন দেব, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা, নিসপাল সিং রানে, রানা সরকার প্রমুখ। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইম্পা সভাপতি পিয়া সেনগুপ্তও। কী কথা হল?
‘সংবাদ প্রতিদিন’কে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, “বাংলা ভাষা আমার প্রাণ। আট বছর এই ভাষাতেই শিক্ষকতা করেছি। আমার ভাষা আমার গর্ব। সেই ভাষাতেই ছবি বানাই। কিন্তু বহু বছর ধরেই বাংলা ছবি দেখাতে গিয়ে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। হিন্দি ছবির দাপটে বাংলা সিনেমা জায়গা পায়নি। শুধু আমার ছবি বলে নয়, এই একই সমস্যার সম্মুখীন আমাদের বাংলা সিনেইন্ডাস্ট্রির প্রত্যেকে। তার মধ্যেই আমরা টিকে রয়েছি। পরিবেশকদের কাছে ‘নাকি’ মুম্বই থেকে এরকম শর্ত আসে যে- সিঙ্গল স্ক্রিনের ক্ষেত্রে চারটে শোয়েই হিন্দি ছবি চালাতে হবে। বাংলা সিনেমা চালালে হিন্দি ছবি দেব না। যেহেতু হিন্দি সিনেমার রোজগার খুব ভালো, সেক্ষেত্রে পরিবেশকরা নিরুপায় হয়ে শর্তে রাজি হয়। ফলে বাংলা সিনেমা বিপদে পড়ে। সেটা নিয়েই আমাদের আজকের বৈঠক। পশ্চিমবঙ্গে কোনও প্রেক্ষাগৃহ বাংলা ছবি নিতে অস্বীকার করতে পারবে না। সেটা সামাঞ্জস্য বজায় রেখে শো দিতে হবে। এবং কোনও বাংলা ছবি যদি ভালো ব্যবসা না করে তাহলে তা সরিয়ে দেওয়ার অধিকার থাকবে হল মালিকের। বাংলা সিনেমার জন্য খুব ইতিবাচক বৈঠক হল।”
বৈঠক শেষে বেরিয়ে দেব জানালেন, “বাংলায় বাংলা সিনেমা চলবে না, সেটা তো অত্যন্ত দুঃখজনক। খুব ইতিবাচক বৈঠক হল। এবং সবকটা হলকে একটা শোতে হলেও বাংলা সিনেমা চালাতে হবে, তেমনটাই আলোচনা হল। পরিবেশক, হল মালিকদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। এবং সকলেই একমত যে বাংলায় বাংলা সিনেমা চলবে।” আগে কেন কখনও এই নিয়ম চালু করার কথা ভাবা হয়নি? এ প্রসঙ্গে দেবের উত্তর, “আমরা আগে কখনও একজোট হয়ে আওয়াজ তুলিনি।”
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের মন্তব্য, “আমার ছবিগুলো চলছে, লোকও দেখছে। তারপরও টাইম স্লট বদলে দেওয়া হচ্ছে। পরিবেশকরাও অনেক সময় প্রযোজকদের যথাযথ যুক্তি দিতে পারেন না। সেখানে প্রযোজকদের মধ্যেও তো একটা হতাশা কাজ করে। দু’টো সপ্তাহ তো সিনেমাটা রাখা উচিত। সব সিনেমার ব্যবসা তো সমান হয় না। কেউ যখন ভালোবেসে বাংলা সিনেমা তৈরি করছে তখন তাঁকে বাংলাতে তো একটা জায়গা দিতে হবে। সেই জায়গাই যদি না পাওয়া যায়, তাহলে প্রমাণ হবে কোথা থেকে? আজকের বৈঠকে খানিকটা সমাধানের পথ পাওয়া গিয়েছে। আমি এখনও বলব, যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেটা আগে প্রয়োগ হোক। আমরা খুব খুশি হব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.