দুই প্রজন্মের অভিনেতা তাঁরা। মিল-অমিল সঙ্গে নিয়ে ‘রক্তবীজ ২’ মুক্তির সময় জুটি বেঁধে আড্ডা দিলেন ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় ও আবির চট্টোপাধ্যায়। শুনলেন শম্পালী মৌলিক।
কেমন আছেন?
আবির চট্টোপাধ্যায়: এই তো চলছে। পুজো রিলিজের একটা উত্তেজনা থাকে, তবে সেটা থেকেও অনেকটা কাটিয়ে উঠেছি। তবে এই বৃষ্টি ভালো লাগছে না। পুজোর অপেক্ষা সারা বছরের (হাসি)।
স্যর, পুজোর আগে আপনি কলকাতায়। এবারে দেখা গেল অভিনেতা-অভিনেত্রীরা পথে নেমে প্রচার পর্বে। এইরকম অ্যাগ্রেসিভ প্রচার তো আপনাদের সময়ে ছিল না। এটা কীভাবে দেখছেন?
ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় : অ্যাগ্রেসিভ প্রচারের পক্ষে আমি কখনওই না। কিন্তু এখনকার সময়ে নিশ্চয়ই প্রয়োজন, তাই খরচ করছে। আই ডোন্ট থিঙ্ক ওয়ান শুড ডু।
‘রক্তবীজ’ ২০২৩ সাল। ‘রক্তবীজ ২’ ২০২৫ সাল। নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের এই ছবির দ্বিতীয় ভাগ নিয়ে প্রচণ্ড প্রত্যাশা।
ভিক্টর: আমি তো ঝোলাব (হাসি)। ও ঝোলাবে না (আবিরকে উদ্দেশ্য করে)। আমার তো কিছুই করণীয় নেই। ওখানে চণ্ডীপাঠ ছিল, এখানে তাও নেই।
আবির: এই কথাটা মানছি না। ধরো যদি মেনে নিই, তাহলে বলব ভিক্টরদা আছেন এটাই অনেক। ২০২৩-এ যখন ‘রক্তবীজ’ রিলিজ করে প্রথমে সাড়া পাইনি। শহরের বাইরে ছিলাম, ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। ষষ্ঠী থেকে মানুষ হইহই করে দেখতে শুরু করলেন। আসলে ভালোবাসা পেলে দায়িত্ব বেড়ে যায়। গল্পটাই এমন ভাবা হয়েছিল, আমাদের মনে হয়েছিল, বোধহয় শেষ হল না। আর মূল যে বিষয়টা সেটাও অর্থাৎ শুভ-অশুভের লড়াই। তাও রয়ে গিয়েছে দুর্ভাগ্যবশত। বারবারই এমন অশান্তি মাথাচাড়া দিয়েছে বা দিচ্ছে। এবার প্রত্যাশা বেশি। আর ভালো দিক হল, চরিত্রগুলোর সঙ্গে পরিচয় হয়ে গিয়েছে। এবারে সেটা আরও বাড়বে (হাসি)। উত্তেজনা বা ব্যাপ্তি দ্বিতীয় ভাগে আরও বেশি।
আপনার চরিত্র ‘অনিমেষ’ প্রণব মুখোপাধ্যায়ের আদলে তৈরি, সকলেই এখন জানেন। আপনি তো তাঁকে কাছ থেকে দেখেছিলেন। এমন চরিত্রে অভিনয় নিশ্চয়ই খুব স্পেশাল?
ভিক্টর: না, আমি সেটা একবারও ভাবিনি। ওঁকে নকল করে কিছু করার চেষ্টা করিনি। ওঁর ওপর বেস করে চরিত্রটা লেখা হলেও, আমি সেভাবে অভিনয় করিনি।
গতবার আপনার বিরাট কিছু করার ছিল না বললেন। তবে এবারে গল্পটা তো আরও বিস্তার পেয়েছে…
ভিক্টর : আমাকে তো বর্ডারের ওপারে সরিয়ে দিয়েছে। এবারে আরও দূরে (হাসি)। সত্যি বলছি, গল্পের মধ্যে দম আছে। এই ছেলেটির (আবির) মধ্যে দম আছে। সব মিলিয়ে বই হিট হবে।
আপনারা দুই প্রজন্মের মানুষ। তবে দু’জনের মধ্যে মিল হল– ব্যক্তিগত জীবন আড়ালে রাখতে পছন্দ করেন। কারণ কী?
ভিক্টর : (হাসি) ভাইবোন ছিল না আমার। একা জঙ্গলে মানুষ হয়েছি। কখনও তেমন লোকজনের প্রয়োজন হয়নি। আমার বন্ধুবান্ধব খুব কম। মা খুব আগলে রেখেছিলেন যাতে কোনও বন্ধুর সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ঠতা না হয়। পজেসিভ ছিলেন। আর আমি পাহাড়ে চড়ি। ওপরে একা বসলে নিজের ইনসিগনিফিকেন্সটা বোঝা যায়। তখন মনে হয়, এখানে একাই ভালো।
আবির এমন একটা প্রজন্মের যখন সোশাল মিডিয়া ছাড়া মানুষ নড়ে বসে না।
আবির : আমি খুব যে প্ল্যান করে কিছু করেছি তা নয়। নির্দিষ্ট কিছু বন্ধু আছে। আমার জীবনে তাদের গুরুত্ব আছে। তাদের সঙ্গে কমফর্টেবল। পারিবারিক জীবনেও তাই। কাজের গুরুত্ব খুব আমার কাছে। কাজ শেষ হয়ে গেলে আমি নিজের মতো। সেটা ব্যালান্স রাখতে সাহায্য করে। কাজ খুব গুরুত্বপূর্ণ হলেও, কাজ বাড়ি নিয়ে যাওয়া ঝামেলার। সময় ভাগ করার ক্ষেত্রে আমি সিলেক্টিভ।
আপনারা দু’জনেই খেলাধুলো ভালোবাসেন।
ভিক্টর : একদম। আমি ফুটবল, হকি, রাগবি খেলেছি। বাস্কেটবলও খেলেছি একদিনের জন্য।
আবির : আমি ক্রিকেট বেশি খেলেছি।
ভিক্টর : আমাদের খেলায় হারতে শিখেছি, জিততেও। ওদের খেলায় এই মেঘ করল, বল ওদিকে ঘুরল, এই রোদ হল কী হয়ে গেল। আমরা হারতে শিখেছি, সম্মান দিতে শিখেছি প্রতিপক্ষকে। আর ডিসিপ্লিন আছে রক্তে।
আবির : আমি প্রচুর ফুটবলও খেলেছি। দামি কথা বলেছেন ভিক্টরদা। আমরা যখন বড় হচ্ছি প্রতিপক্ষকে জমি না ছাড়াই নিয়ম ছিল। অথচ সম্মান করো, সমীহ নয়। যুগের নিয়মের সঙ্গে সবকিছুই বদলাচ্ছে। স্লেজিং সামলানোর ট্রেনিং হত। এখনকার ট্রোলিংয়ের মতো।
ফুটবলের প্রসঙ্গে যখন এলই– মোহনবাগান না ইস্টবেঙ্গল?
ভিক্টর : রক্তে মোহনবাগান। (হাসি)
আবির : (হাসি) আমি সম্পূর্ণ অন্য দিকে।
প্রতিযোগিতা প্রসঙ্গে, চারটি পুজো রিলিজের লড়াইয়ের কথা বলতেই হয়। আপনি নিশ্চয়ই জানেন?
ভিক্টর : আমি জানিও না, শুনিনি। কারা আছে তাও জানি না।
আবির, এই নিয়ে চতুর্থবার আপনি আর দেব মুখোমুখি। ২০২২ সাল থেকে। ‘কর্ণসুবর্ণ’ এল যখন, ‘কাছের মানুষ’ এল। ‘রক্তবীজ’-এর সঙ্গে ‘বাঘাযতীন’। ‘টেক্কা’ এল, সঙ্গে ‘বহুরূপী’। এবার ‘রঘুডাকাত’ এবং ‘রক্তবীজ টু’ মুখোমুখি।
ভিক্টর : খেলায় একজন গোল করে, একজন করে না। তার মানে সে ভগবান নয়। একটা হিট হলে কিছু যায় আসে না। এই তো প্রযোজক বলে গেল, পরের ছবিতে আমরা আছি। আমরা তো জিতে গেছি অলরেডি। গোল স্কোর হয়ে গেল। (জোরে হাসি)
আবির : আমাদের খুব ইচ্ছে পরেরবার একসঙ্গে আসার। বাকিটা প্রযোজক-পরিচালক বলবেন। আর আপনার প্রশ্নের উত্তরে বলি। মুখোমুখি বিষয়টা মিডিয়া লেখালিখি করবে। অনুরাগীরা এটা নিয়ে মাতামাতি করবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অনেস্টলি বলছি, আমাদের কাজটা করে যেতে হবে। অন্য কিছু ভাবছি না তাও নয়। প্রতিযোগিতাও থাকবে। তবে মূল লক্ষ্য আরও বেশি মানুষ বাংলা ছবি দেখুক। কখনও একজনের ছবি বেশি লোকে দেখবে। কখনও আরেক জনের ছবি বেশি লোকে দেখবে। সেই নিয়ে মনে খিচখিচ হবে বা আনন্দ হবে, সেটাই শেষ কথা নয়। সত্যি বলতে আমরা কেউ কারও শত্রু নই, প্রতিযোগী হতে পারি। খেলাধুলো এটাই শেখায়।
ভিক্টর : আমার ভাগ্য ভালো, আমার কমপিটিটর ছিল না। তখন আমাকে কারও সঙ্গে লড়তে হয়নি। আমার ফিল্ম দেখে উত্তমবাবু মারা গেলেন।
স্যর, আপনি উত্তমকুমারের সঙ্গে কাজ করেছেন। এই বছর থেকে ওঁর শতবর্ষ পালন শুরু হল। আপনার ওঁকে কেমন লাগত?
ভিক্টর : একটিমাত্র লোক জন্মেছিলেন যাঁর কোনও তুলনা হয় না। তাঁকে বিরাট অভিনেতা মনে না করলেও, তিনি হলেন গ্রেটেস্ট সুপারস্টার। ওই হাসি, ওই ব্যক্তিত্ব আর কারও নেই।
আপনি একাধারে আন্তর্জাতিক খ্যাতি পেয়েছেন, আবার বাংলা বাণিজ্যিক ছবিতেও সফল হয়েছেন। এখন এই নতুন প্রজন্মের সঙ্গে কাজ করতে কেমন লাগে?
ভিক্টর : যদি কেউ নিষ্ঠা-সহ নতুন কিছু করতে চায়, সেটা আমি ভালোবাসি, এনকারেজ করি। এ খুব ডেডিকেটেড ছেলে (আবিরকে দেখিয়ে)।
আবির : ভিক্টরদার সঙ্গে কাজ করে খুব আনন্দ পেয়েছি। (হাসি)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.