বৃষ্টি ভাণ্ডারী: ধর্ম কি কখনও মায়ের আরাধনায় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে? সন্তানের অন্তরের ভক্তিই তো আসল। সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে উস্তাদ রশিদ খানের বাড়িতে প্রথমবার দুর্গাপুজোর আয়োজন। অতঃপর আয়োজনের কলেবর নিয়ে কৌতূহল অস্বাভাবিক নয়। কেমন প্রস্তুতি চলছে? সংবাদ প্রতিদিনকে জানালেন রশিদপুত্র আরমান রশিদ খান।
আরমান জানালেন, “অনেকদিন ধরেই ইচ্ছে ছিল বাড়িতে মায়ের পুজো করার। কিন্তু নানা কারণে এযাবৎকাল সেটা হয়ে ওঠেনি। তবে এবার মায়ের আশীর্বাদে সেই ইচ্ছেপূরণ হতে চলেছে।” উস্তাদ রশিদ খানের বাড়িতে যে কোনওদিন ধর্মের ভেদাভেদ কিংবা ছুঁৎমার্গ নেই, সেকথা সকলেরই জানা। কিন্তু দুর্গাপুজো মানে তো ‘রাজসূয় যজ্ঞ’, অনেকেই আবার মুসলিম বাড়িতে দুর্গাপুজোয় আপত্তি তুলতে পারেন! এপ্রসঙ্গে আরমানের মন্তব্য, “আমাদের বাড়িতে সরস্বতী পুজো, লক্ষ্মীপুজো, গণেশপুজো হয়, সেখানে দাঁড়িয়ে মায়ের পুজোতে আপত্তি কোথায়? ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত সমস্ত নিয়ম মেনেই দুর্গাপুজো হবে। সেইজন্যই আমাদের বাড়িতে এখন আমিষ রান্না হচ্ছে না। আমরা নিরামিষ খাচ্ছি। আর পাঁচজনের কাছে হয়তো মাতৃত্বের আরাধনার পথে ধর্ম অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে আমার বিশ্বাস, ঈশ্বরের কোনও ধর্ম হয় না। ঈশ্বর তো বলেননি যে, মুসলিম ধর্মাবলম্বী কোনও মানুষ দুর্গাপুজো করতে পারেন না। কিংবা এমন কোনও কথা কোথাও লেখা নেই যে, হিন্দু ধর্মের কোনও মানুষ মাজারে যেতে পারেন না। মীরপুরের দরগায় মুসলিমদের থেকে বেশি হিন্দুরা যান। ওখানে ‘হিন্দুদের প্রবেশ নিষিদ্ধ’ বলে তো কাউকে আটকানো হয় না। কোনও ধর্মেই এই ভেদাভেদের মন্ত্র দেওয়া হয়নি। ভগবান এক, তবে আলাদা আলাদা নামে সম্বোধিত হন।” জানা গেল, রীতি অনুযায়ী দেবীকে অন্নভোগ দেওয়া হবে। রশিদ খানের বাড়ির ভিতরের মাঠেই সেজে উঠছে মায়ের মণ্ডপ।
তাঁর সংযোজন, “আমার যে সংস্কৃতি পছন্দ, আমি সেটাই বহন করব, ধারণ করব। এটায় তো কারও আটকানোর কিছু নেই। তাই লোকে কে কী বলল, আমার যায়-আসে না। কারণ আমি জানি, আমি কোনও ভুল কাজ করছি না। মা দুর্গার প্রতি ভালোবাসা, হিন্দুত্বের প্রতি শ্রদ্ধা থেকেই বাড়িতে দুর্গাপুজোর আয়োজন করেছি। কারণ হিন্দু ধর্ম-সংস্কৃতি থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। সব ধর্মের পাঠই মানুষের থাকা উচিত।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.