Advertisement
Advertisement
তসলিমা নাসরিন

‘গর্জে উঠতে হবে বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে’, আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ খুনের প্রতিবাদে মুখর তসলিমা

ভারতীয় সমাজে মেরুকরণের বিরুদ্ধেও গর্জে উঠেছেন লেখিকা।

Renowned writer Taslima Nasreen opens up on Goerge Floyed death row
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:June 2, 2020 3:23 pm
  • Updated:June 2, 2020 7:08 pm   

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কৃষাঙ্গ খুনের প্রতিবাদে জ্বলছে আমেরিকা। ‘আই কান্ট ব্রিদ’ আর ‘ব্ল্যাক লাইফ ম্যাটার্স’ এই দুই স্লোগানই এখন আমেরিকাবাসীদের প্রতিবাদী বুলি। হোয়াইট হাউস চত্বরের বাইরে ফুঁসছে প্রতিবাদীরা। অবস্থা এতটাই সঙ্গীন যে, ভয়ে গোপন বাঙ্কারে আশ্রয় নিতে হয়েছে স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও। বিশ্বের তালিকায় করোনা সংক্রমণের জেরে শীর্ষে আমেরিকার নাম হলেও ভাইরাসের ভয়কো বুড়ো আঙুল দেখিয়েই প্রতিবাদীরা একত্রিত হয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। কাঁদানে গ্যাস, পুলিশ বাহিনী, এ যেন এক অচেনা আমেরিকা! সেই প্রেক্ষিতেই এবার সরব হলেন খ্যাতনামা লেখিকা তসলিমা নাসরিন (Taslima Nasrin)।

Advertisement

তসলিমার কথায়, “করোনা ভাইরাসের প্রকোপে আমেরিকার মানুষ সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সেই মরণ ত্রাসকে উড়িয়ে দিয়ে হাজার হাজার মানুষ বেরিয়ে পড়েছেন রাস্তায়। উপেক্ষিত লকডাউন। সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই। ভাইরাসে মরতে হয় মরবে, কিন্তু জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার প্রতিবাদ করতেই হবে তাদের। গর্জে উঠতে হবে বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে, অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে। জর্জ ফ্লয়েডকে (George Floyd) যেভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে পুলিশ, তার বিরুদ্ধে গোটা আমেরিকাজুড়ে ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণী নির্বিশেষে মানুষ আজ রুখে দাঁড়িয়েছেন। যে কোনও অন্যায়েরই প্রতিবাদ হওয়াটা অত্যন্ত জরুরী। প্রতিবাদ না হলে সমাজে অন্যায়গুলোই খুব স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায়। তখন অন্যায়গুলোকে আর ‘অন্যায়’ বলে মনে হয় না।”

তবে হিংসাত্মক প্রতিবাদের ভাষাকে সমর্থন করতে মোটেই রাজি নন তসলিমা। এপ্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “জ্বালানো, পোড়ানো আর লুঠের ঘটনা বাদ দিলে আমেরিকার এই প্রতিবাদ অত্যন্ত জরুরী এবং প্রাসঙ্গিক। তবে সবাই কিন্তু প্রতিবাদের উদ্দেশে বের হননি। কেউ কেউ বেরিয়েছেন ভায়োলেন্স করতে, দোকানপাট লুঠ করতে। যে কোনও আন্দোলনেই এমন কিছু অসৎ লোক থাকে, যারা মিছিলে যায় না। যারা মূলত বেরয় দোকানপাট লুঠ করতে। আর তাদের এসব কর্মকাণ্ডকেই তুলে ধরে কেউ কেউ মুনাফা লোটে। এমন প্রতিবাদকে অন্যায় আখ্যা দেওয়ার চেষ্টায় উঠে-পড়ে লাগে।”

[আরও পড়ুন: ‘তুফানের পর তুফান আসুক, বাংলা বাঁচতে জানে’, দুর্দিনে বেঁচে থাকার গান ধরলেন কবীর সুমন]

এর পাশাপাশি ভারতীয় সমাজে মেরুকরণের বিরুদ্ধেও গর্জে উঠেছেন লেখিকা। বর্ণবৈষম্য কিংবা শ্রেণিবৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রত্যেক ভারতীয়ই যাতে এভাবে প্রতিবাদ করেন, সেই দৃশ্য দেখার আশাতেই বুক বেঁধেছেন তসলিমা। লেখিকার কথায়, “ভারতীয় উপমহাদেশেও এরকম দৃশ্য দেখতে চাই। হিন্দুর ওপর অত্যাচার হলে মুসলমান প্রতিবাদ করবে, মুসলমানের ওপর হলে হিন্দু করবে প্রতিবাদ। এই সহযোগিতা, এই সহমর্মিতাই পৃথিবীকে সুন্দর করবে।”

তবে জর্জ ফ্লয়েড মৃত্যুর প্রতিবাদী মিছিলে শেতাঙ্গদের উপস্থিতি মুগ্ধ করেছে তসলিমাকে। অন্যায় রোখার জন্যে যে নিজের গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধেও স্রোতের বিপরীতে গা ভাসিয়ে দাঁড়ানো যায়, আমেরিকাবাসীদের সেই দৃশ্য দেখে আপ্লুত তলসিমা। “শহরে শহরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কিংবা মিছিলে গত দু’দিনের যে চিত্রটি দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি, তা হল শেতাঙ্গদের উপস্থিতি। শুধু কৃষ্ণাঙ্গরা নয়, সাদা চামড়ার লোকেরাও প্রতিবাদ করছে। ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে করে রুখে দাঁড়িয়েছে। স্লোগান দিচ্ছে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নেমেছে। কৃষ্ণাঙ্গদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ঘোচানোর জন্য করোনার ঝুঁকি নিয়ে যেভাবে শেতাঙ্গরা আন্দোলন করছে, তাদের জন্যই এই পৃথিবীটা সুন্দর। ইউরোপ আর আমেরিকার সমাজে বর্ণবাদ আনার জন্য শেতাঙ্গরাই যেমন দায়ী, এর বিরুদ্ধে আইন জারি করা, সমাজ থেকে একে দূরে সরানোর আন্দোলনেও তারাই শামিল হয়েছে। সংখ্যালঘুদের একার আন্দোলনে তা কোনওদিনই ফলপ্রসূ হত না”, মত তসলিমা নাসরিনের (Taslima Nasrin)।

[আরও পড়ুন: হ্যারি পটারের পর ফের শিশুদের জন্য রাউলিং ম্যাজিক, লকডাউনেই এল নয়া কল্পকাহিনি]

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ