Advertisement
Advertisement
Gargi Roychowdhury

‘তারাসুন্দরী বহুমুখী অভিনেত্রী হয়েও অবহেলিত’, প্রথম নাট্য প্রযোজনা নিয়ে মুখ খুললেন গার্গী

নাটকটির প্রথম পোস্টার উন্মোচন হয়ে গেল শনিবার দুপুরে।

Tarasundari is a neglected actress, Gargi Roychowdhury opens up about her first theatre production
Published by: Arani Bhattacharya
  • Posted:October 4, 2025 8:58 pm
  • Updated:October 4, 2025 8:58 pm   

শম্পালী মৌলিক: বাংলা থিয়েটারের এক বিস্মৃতপ্রায় কিংবদন্তি অভিনেত্রীকে মঞ্চে নিয়ে আসছেন গার্গী রায়চৌধুরী। তারাসুন্দরী দেবীকে নিয়ে উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় নির্দেশিত এই নাটকে নামভূমিকায় থাকছেন গার্গী স্বয়ং। নাটকটির সূত্র, সম্পাদনা এবং উপদেষ্টার ভূমিকায় রয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী, থিয়েটার-ব্যক্তিত্ব তথা নির্দেশক-অভিনেতা ব্রাত্য বসু। তাঁর উপস্থিতিতেই সিক্স বালিগঞ্জ প্লেস রেস্তোরাঁয় নাটকটির প্রথম পোস্টার উন্মোচন হয়ে গেল শনিবার দুপুরে। উল্লেখ্য, এই নাটকের মাধ্যমেই গার্গী রায়চৌধুরীর প্রোডাকশন হাউস ‘থিয়েটার প্লাস’-এর যাত্রা শুরু হল।

Advertisement

নভেম্বরের প্রথম ও দ্বিতীয় দিন জিডি বিড়লা সভাঘরে ‘তারাসুন্দরী’ নাটকে গার্গীর একক অভিনয় মঞ্চস্থ হতে চলেছে। নিজস্ব প্রয়োজনা সংস্থা নিয়ে আসার দায়িত্ব অনেক, নেপথ্যে কী? গার্গী বলছিলেন, ‘এখন নয় তো আর কবে। মঞ্চ আমাকে বরাবর টানে। যত কাজের মধ্যেই থাকি সবসময় মনে হয়েছে মঞ্চের কাছে ফিরি। যে কারণে, বাইরে গিয়ে কাজের ক্ষেত্রেও দু’বার ভাবতে হয়। নিজের বিছানার বালিশটা বড় প্রিয়, মঞ্চও তেমন।’ ‘বহুরূপী’-তে ‘পিরিতি পরম নিধি’ (১৯৯৫ সাল) নাটক দিয়ে এক সময় নাট্যাভিনয় শুরু করেছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি শেষবার ‘রঙ্গিনী’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন। তার এত দিন পর একটি মোনোলগ নিয়ে মঞ্চে আসছেন তিনি। ‘থিয়েটার প্লাস’ কেন? অভিনেত্রী বলছিলেন, ‘স্বাধীনভাবে কাজ করতে গেলে এটা দরকার। আমার একটা পরিচিতি হয়েছে, ফিল্মের কাজ করে কিছু টাকাপয়সা অর্জন করেছি, স্পন্সরের খুব যে নির্ভর করেছি তা নয়, অনেকেই এগিয়ে এসেছেন যদিও– সব মিলিয়ে মনে হল নিজে কিছু করার জন্য এটাই ঠিক সময়। নিজের শক্তি-বুদ্ধি-মেধা প্রয়োগ করা উচিত।’ থিয়েটার তাঁর প্রাণভোমরা তাই সংস্থার নামে থিয়েটার জড়িয়ে, সেই সঙ্গে যোগ করলেন, “এই প্ল্যাটফর্মে অনেক কিছু হবে। যারা সত্যি ভালো অভিনয় করেছে, বা কাজ করতে চাইছে তাদের জায়গা করে দিতে চাই। নব্যগঠিত একটা সংস্থা তো, কুমার শানুকে কিশোর কুমারের গান গেয়ে উঠতে হয়েছিল, সেখানে বলব, গার্গী না হয় ‘তারাসুন্দরী’ হয়ে এল, মানুষ সংস্থাটাকে চিনল। তারাসুন্দরী দেবী ভীষণ-ই উপেক্ষিত চরিত্র। আমার মনে হয়েছিল বহুল চর্চিত নটী বিনোদিনী। প্রভাদেবীকে আমরা ঋত্বিক ঘটকের ছবিতে দেখেছি। তিনকড়ি দাসীও জনপ্রিয়। তাঁদের নিয়ে কাজ হয়েছে। কিন্তু তারাসুন্দরীর মতো বহুমুখী অভিনেত্রী যেন বড় অবহেলিত। তাঁর কথা কেউ জানে না। অথচ পেশাদার থিয়েটার মঞ্চে এই চারজন অভিনেত্রী ছিলেন কিংবদন্তি। সেই জন্যই আমি কঠিন পথ বেছে নিয়েছি। নিরামিষ রান্না দিয়ে শুরু করলে রান্নার পাকানোটা ভালো হবেই। আমিষের তো আলাদা স্বাদ আছে (হাসি)।” 
প্রাথমিক আলোচনার সময় ব্রাত্য বসুই গার্গীকে তারা সুন্দরীকে নিয়ে কাজের জন্য উৎসাহ দেন। তাঁর বই থেকেই এই নাটকের সূত্র নেওয়া। যার মধ্যে রয়েছে ‘অদামৃত কথা’ ও ‘উদ্বাসিত মান্দাস’।অমৃতলাল বসুর হাত ধরে মঞ্চে আসেন তারাসুন্দরী। পরবর্তী কালে অমরেন্দ্র নাথ দত্ত যখন ক্লাসিক থিয়েটার তৈরি করেছিলেন, সেখানে যোগ দেন অভিনেত্রী। কালক্রমে অমরেন্দ্রনাথের বিরুদ্ধেই মামলা করেছিলেন তিনি। অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর জুটি ছিল বিখ্যাত। এই কিংবদন্তি অভিনেত্রীকে পুনরাবিষ্কার করবেন দর্শক এই নাটকে। তাঁর জীবনের নানা বিবর্তন ধরা থাকবে সোলো প্লে-তে।

মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলছিলেন, ‘একক থিয়েটার সবসময় চ্যালেঞ্জিং। এখানে দর্শকের মনোসংযোগের খামতি ঘটে। এখন অবশ্য এমনিতেই মানুষের স্নায়ু খুব চঞ্চল। সেখানে ভালো পারফরম্যান্স হলে মানুষ দেখবেন আমার ধারণা। আমার মনে হয় কলকাতায় সত্যিকারের থিয়েটার রসজ্ঞ লোক কম পড়ে আছেন, তাঁরা সবাই এটা দেখবেন। তারাসুন্দরী ছিলেন সত্যিকারের সুপারস্টার। এরকম কাল্পনিক সুপারস্টার নয়। তাঁকে দেখার জন্য লাইন পড়ত। তাঁর জীবনটা একইসঙ্গে সর্পিল, ক্লেদাক্ত অথচ সমুন্নত। এরকম একজনকে নিয়ে কাজের জন্য গার্গীকে অভিনন্দন। আর লেখক ও নির্দেশক উজ্জ্বলকে অভিনন্দন যে, এটা পাথব্রেকিং কাজ হবে। যে ভাবে পুরো থিয়েটার ডিজাইন করা হয়েছে, আমার ধারণা যেভাবে তৃপ্তি মিত্র, শাঁওলি মিত্র, বিজয়লক্ষ্মী বর্মনরা বা স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত, শানু রায়চৌধুরি ইন্টারেস্টিং কাজ করেছেন, তেমন কাজের উত্তরসূরি হিসেবে এটা থাকবে।” গার্গীকে কোনও পরামর্শ দিয়েছেন উপদেষ্টা হিসাবে? ‘একটা -দুটো পরামর্শ দিয়েছি। উনবিংশ শতকের বাচনভঙ্গি অভিনয়ে রাখতে চেয়েছিলাম, সেটা আমার ধারণা গার্গী রেখেছে।’ উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, অভিনয় নিপুণ না হলে তারাসুন্দরী মঞ্চে নামতেন না, গার্গীও তাই। পারফেক্ট না হলে নামে না।

‘তারাসুন্দরী’-র আবহ ও সংগীত পরিচালনায় প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়। ফিল্মের মিউজিক তিনি করেন-ই। এটি নাটকের জন্য তাঁর সপ্তম কাজ। জানালেন এক ঘণ্টা দশ মিনিটের নাটকে মিউজিকের বিভিন্ন ইমোশন ধরা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। বলা যায় বাংলা পেশাদার থিয়েটারের স্বর্ণযুগের ঝলক দেখা যাবে মঞ্চে। প্রথমবার নাটকের পোশাক পরিকল্পনা করছেন টলিউডের প্রখ্যাত ডিজাইনার অভিষেক রায়। মঞ্চ সজ্জায় সৌমিক পিয়ালী, মঞ্চ নিয়ন্ত্রণে অম্বরীশ দাস। আলো করছেন সৌমেন চক্রবর্তী। পোস্টার ডিজাইন করেছেন একতা ভট্টাচার্য। ১৯৯৫ সালে থিয়েটারে যাত্রা শুরু গার্গীর, এখন ২০২৫ সাল বলা যায় প্রায় ৩০ বছরের বৃত্ত সম্পূর্ণ হতে চলেছে।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ