Advertisement
Advertisement
Raghu Dakat

বাংলার থেকে দক্ষিণী ছায়া বেশি! কেমন হল ‘রঘু ডাকাত’? পড়ুন রিভিউ

ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত 'রঘু ডাকাত' যেন বাঙালির রবিনহুড।

bengali film Raghu Dakat's review
Published by: Arani Bhattacharya
  • Posted:September 26, 2025 2:31 pm
  • Updated:September 26, 2025 2:31 pm   

বিদিশা চট্টোপাধ্যায়: চাষিদের থেকে লাঙল চলে গেলে তারা আত্মহত্যা করে’। ‘চাষিদের থেকে জমি চলে গেলে তারা ডাকাত তৈরি হয়’। কিংবা ধরা যাক এই সংলাপটা, যার মানে করলে দাঁড়ায় ডাকাত যদি বিপ্লবী হয়ে ওঠে তখন শাসক মুশকিলে পড়ে। ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত ছবি ‘রঘু ডাকাত’ ইংরেজ আমলে নীল চাষের সময়কে ঘিরে, ব্রিটিশ এবং সেই সময়ের জমিদারদের দমনের ইতিহাসের আশপাশে ঘুরলেও উপরের এই সংলাপ আজও একইভাবে প্রাসঙ্গিক। শাসকের চেহারা এবং দমনের কাঠামো বদলে গিয়েছে মাত্র। আরও ভয়ংকর, তৎপর, স্মার্ট, আধুনিক, আরও ক্ষিপ্র হয়েছে। ঠিক যেভাবে ছবিতে শয়তান জমিদার বলে ওঠে, শত্রুকে ঘায়েল করতে হয় সাপের মতো, ছোবল মেরে। এই নিয়ম চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। এখন যুদ্ধ তাই সরাসরি নয়, আসল যুদ্ধ হয় সকলের অগোচরে, লোকচক্ষুর আড়ালে। আর আমরা সামনাসামনি যেটা দেখি সেটা ফায়ারওয়ার্ক! পৃথিবীতে চলছে তেমন ফায়ারওয়ার্ক। অহীন্দ্র বর্মনের শয়তানি যেন সেই সুদূরপ্রসারী অশুভর ইঙ্গিত দেয়। যাক সে অন্য কথা।

Advertisement

এখন বাংলা ছবির বাজারে অন্য ফুলঝুরি। ছবির লড়াই! সেখানে ‘রঘু ডাকাত’ লড়াই করছে। বাংলা ছবি হলেও ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ছবিতে যেন দক্ষিণী ছায়া দেখা যায়। ‘রঘু’র নাম ভূমিকায় মেগাস্টার দেব। কিন্তু ছবির প্রথম ভাগে রঘুর এন্ট্রি আরও জোরাল গল্পের মধ্যে দিয়ে হলে ভালো হত। ডাকাতের সিনেমায়, কেউ গল্পটা আলাদা করে ব্যাকড্রপে বলে দিলে মজা একটু কমে যায়। তবে রিলে রেসে জিততে, প্রয়োজনীয় সময়ে ফিনিশিং লাইন স্পর্শ করার মতো অবকাশ এই ছবিতে মজুত আছে, আছে ব্যাটন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো সহযোদ্ধারাও (সৌদামিনীর চরিত্রে ইধিকা পাল, অহীন্দ্র বর্মনের চরিত্রে অনির্বাণ ভট্টাচার্য, গুঞ্জার চরিত্রে সোহিনী সরকার, ডাঙ্কানের চরিত্রে অ্যালেক্স ও’নীল এবং অন্যান্যরা)। তবে পিরিয়ড ড্রামা হিসাবে অত সিরিয়াস হয়ে না দেখাই ভালো। সেটা অবশ্য ছবির প্রথমেই বলে দেওয়া হয়েছে, কাল্পনিক আইডল,পরিত্রাতা, বা বাংলার রবিনহুডের গল্প বলবে এই ছবি। এই সময়ে দাঁড়িয়ে

অবশ্য তেমন রবিনহুড আমাদের আর নেই। আমাদের পরিত্রাণের আশাও আছে কি? ‘পান সিং তোমর’ ছবিতে সেই দৌড়বাজ নিজেকে ডাকু বলতে নারাজ ছিল, সে নিজের পরিচয় দিত ‘বাগি’ বলে। বাগি অর্থাৎ যে বগাওয়াত করে, বিদ্রোহ করে। সেই বাগিরা আজ অন্য চেহারা নিয়েছে। তেমন ‘বাগি’ও আর বেশি সংখ্যায় নেই। তাদের মেরে ঠান্ডা করে দেওয়া হচ্ছে। স্পেক্টাকুলার, লার্জার দ্যান লাইফ বাংলার বাগি– ‘রঘু ডাকাত’-এর গল্পে যাই দেখানো হোক না কেন, কী এসে যায়! জঙ্গলের সেই পুরনো গল্পে আমরা শুনেছিলাম, শেয়াল নীল রং মেখে ছদ্মবেশে রাজা সেজে বসেছে। আজ গোটা পৃথিবীজুড়ে পরিত্রাতার তেমন ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে দমনকারী। ছবির এক দৃশ্যে শয়তান জমিদারকে নীল রং মেখে চানঘরে গায়ে জল মাখতে দেখলে সেই রংমাখা পৃথিবীর শাসকের কথাই মনে পড়ে যায়। ‘রঘু ডাকাত’-এর চরিত্রে দেব সেই শয়তানের মুখোশ খুলে দিতে পারেন হয়তো, কিন্তু বাস্তব পৃথিবীতে সেই দায়িত্ব কে নেবে? কে হবে পরিত্রাতা। নাকি আমার, আপনার, পৃথিবীর জনসাধারণের পরিত্রাণ তাদের নিজের মতো করেই খুঁজে নিতে হয়, কখনও নিজের মধ্যে, কখনও তেমন বন্ধু পেলে। রঘুর তেমন এক বন্ধু ছিল (গুঞ্জা), ছিল একখান প্রেমও (সৌদামিনী)। বন্ধুত্বে এবং প্রেমে নারীচরিত্র এই ছবির জোর। গ্রামীণ, রুক্ষ প্রান্তরে সেই প্রেম আর বন্ধুত্বের জোর, রঘুকে শত্রুবিনাশ করতে সাহায্য করে। প্রেম আর বন্ধুত্বের মধ্যে বেছে নেওয়ার সময়ও আসে! তেমন সময় আমার, আপনার জীবনে এলে কী করবেন? বন্ধুত্বে, প্রেম না হোক, প্রেমে বন্ধুত্ব থাকতেই হবে। ছবিতে প্রেম আর বন্ধুত্বের শরীর ছিল আলাদা, তাই একটি অনিবার্য কারণেই খসে পড়ে এবং সেই বিচ্ছেদ বেদনার উদ্রেক করে। হাতের কাছে থাকে প্রেম, সেই প্রেমের মায়াকেই সম্বল করে রঘু এগিয়ে যায়। সিনেমায় তো সকলই সম্ভব! হ্যাপিলি এভার আফটার জীবনে হয় না, হওয়া উচিতও নয়। তাই ছবি থেকে কুড়িয়ে-বাড়িয়ে যা পাওয়া যায়, তাই নিয়েই বাড়ি ফেরা।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ