সুলয়া সিংহ: ওটিটি প্ল্যাটফর্মে কোনও সিরিজের প্রথম সিজন যদি মনে ধরে যায়, তবে পরবর্তীতে তার থেকে দর্শকের প্রত্য়াশাও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। আর সেই প্রত্যাশা ধরে রাখাই পরিচালকের কাছে হয়ে ওঠে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং। সে অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারলে বড়বড় নাম-ব্যানারের সিরিজকেও হারিয়ে যেতে দেখেছি আমরা। স্পেশাল অপস-এর ক্ষেত্রেও নিঃসন্দেহে নীরজ পাণ্ডের কাছে সেই বিপুল প্রত্যাশার চাপটা ছিল। কারণ আমার মতো যাদের ‘স্পেশাল অপস’ ভালো লেগেছিল, তারা দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে মনপ্রাণ দিয়ে দ্বিতীয় সিজনের অপেক্ষায় ছিল। মাঝে ১.৫ এলেও গল্পের সিক্যুয়েল তো সিজন ২। আর তা মুক্তি পাওয়ার পর বলতেই হচ্ছে, অপেক্ষা সার্থক।
প্রত্যেক সিনেমা অথবা সিরিজের আসল নায়ক কিন্তু তার কাহিনি। অনেক সময় সেদিকটা দুর্বল হলে পরিচালক এবং অভিনেতারা তাঁদের অসাধারণ কারিগরিতে বিষয়টা কোনওক্রমে উতরে দেন। কিন্তু যখন সবক’টা দিক ইতিবাচক হয়, তখনই তৈরি হয় স্পেশাল অপস সিজন ২। এ সিরিজের ইউএসপি এক নয়, একাধিক। এক এক করে বলি।
প্রথমেই আশা যাক সিরিজের গল্পে। বাস্তবের ঘটনাকে যেভাবে পরিচালক চিত্রনাট্যের সঙ্গে মিশিয়ে দেন, তা এককথায় প্রশংসনীয়। প্রথম সিজনেও সংসদ হামলার মূলচক্রীর খোঁজে অপারেশনে নামে ‘র’। একইরকমভাবে এই মরশুমেও বর্তমান রাজনীতি, প্রযুক্তি ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তুলে ধরে তার সঙ্গেই মিশিয়েছেন কল্পনার তর্কা। যার স্বাদ বেশ সুস্বাদু। সময় এগিয়েছে। অত্যাধুনিক হয়েছে প্রযুক্তি। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ভাল-মন্দ দুই প্রভাবই পড়েছে আমজনতার জীবনে। সেই বিষয়টিকেই এবারের কাহিনির অস্ত্র হিসেবে বেছে নিয়েছেন পরিচালক। এআইয়ের জন্ম যে ভারতেই, এও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রেক্ষাপট সাজিয়েছেন গালওয়ান সংঘর্ষের পর ভারত-চিন সম্পর্কের অবনতিকে ঘিরে। যাতে চোখের সামনে ভেসে উঠেছে বাস্তব পরিস্থিতি, পেগাসাস (এখানে নাম বদলে মেগাসাস), অনলাইন লেনদেনে জালিয়াতির ঝুঁকির মতো বিষয়গুলি। সবমিলিয়ে সাইবার অ্যাটাকের বড়সড় প্লট তৈরি করে কাহিনি এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন পরিচালক। প্লটের সঙ্গে সাবপ্লটকেও মিলিয়েছেন নিখুঁতভাবে। মনে আছে ব্য়াঙ্কের আর্থিক তছরুপের ঘটনায় মালিকের দেশ ছেড়ে পালানোর ঘটনা? ব্যস, স্পয়লার দেওয়ার ইচ্ছে নেই।
এবার আসা যাক আরেক ইউএসপির কথায়। সিরিজের কলাকুশলী। কেকে মেননকে নিয়ে নতুন করে আর কিছুই বলার নেই। হিম্মত সিং চরিত্রটি যেন তাঁর জন্যই রচিত। কিংবা তাঁর অন্দরেই যেন বছরভর সুপ্ত থাকে কোনও হিম্মত সিং। যে পরিচালকের হাত ধরে বেরিয়ে আসে। ‘হামারে পাস সিআইএওয়ালোকে লিয়ে কুছ হ্যায়?’ এসব সংলাপ তাঁর মুখেই মানায়। ‘র’ এজেন্টের পাশাপাশি বাবা এবং ছাত্রের ভূমিকাতেও সেরা কেকে মেনন। এরপরই বলতে হয় টোটা রায়চৌধুরীর কথা। প্রথমবার এই সিরিজে পা রেখেই ছক্কা হাঁকালেন টলিউড অভিনেতা। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে বোঝালেন এখনও তিনি কতখানি ফিট। টলিপাড়া থেকে যাঁরা শুধুমাত্র বলিউড ছবিতে এক ঝলক মুখ দেখাবেন বলে পাড়ি দেন, তাঁদের টোটাকে দেখে অনেক কিছু শেখার আছে। আরেক অভিনেতার নাম না বললেই নয়। তাহির রাজ ভাসিন (সুধীর আওয়াস্তি)। এই খলনায়ক যে পরের পর কী করতে চলেছে, আন্দাজ করাই কঠিন।
সিরিজের আরও একটি ভালো দিক এর লোকেশন। শুধুমাত্র চিত্রনাট্যকে ঝকঝকে করতে নয়, বরং গল্পের স্বার্থেই এই লোকেশনগুলি ব্যবহার করা হয়েছে। যা আপনাকে কখনওই বোর করবে না। সবমিলিয়ে ঝরঝরে, মেদহীন, সাসপেন্স আর সায়েন্সে ভরা আরও একটা সিজন মন কাড়ল।
তারপরেও দিনের শেষে পরিচালককে অনুরোধ, যদি কিছু জায়গায় মিউজিকের আধিক্য কমিয়ে ফেলা যায় এবং একটি দৃশ্যের রহস্য উন্মোচনের বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে দেখানো হয়, তাহলে দর্শক হিসেবে আমরা উপকৃত হই। এহেন স্পাই সিরিজে অ্যাকশন সিকোয়েন্সে গলদ থাকলেও মন খারাপ হয়। কিন্তু যদি এখনও স্পেশাল অপস দেখে না থাকেন, তাহলে অবশ্যই জিও-হটস্টারে কয়েকটা ঘণ্টা কাটাতেই পারেন। দেশভক্তির মোড়কেও বলিউড সিরিজে হলিউডি আবহ পাওয়ার সুযোগ তো সবসময় মেলে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.