Advertisement
Advertisement
Sonar Kellay Jawker Dhan Review

মানিকবাবুর নস্ট্যালজিয়া উসকে দিল ‘সোনার কেল্লায় যকের ধন’, পড়ুন রিভিউ

কেমন হল পরমব্রত-কোয়েল-গৌরবের ছবি?

Parambrata, Koel starrer Sonar Kellay Jawker Dhan Film Review
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:May 31, 2025 3:43 pm
  • Updated:June 1, 2025 4:43 pm  

নির্মল ধর: ‘যকের ধন’ সিরিজের তিন নম্বর ছবি ‘সোনার কেল্লায় যকের ধন’। গল্পের শুরুতেই বাংলা সিনেমার আইকনিক ছবি ‘সোনার কেল্লা’ ও তার স্রষ্টার মানিকবাবুর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়েছেন নির্মাতারা। পরিচালক সায়ন্তন ঘোষাল ও প্রযোজক সুরিন্দর ফিল্মস অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে পুরো জয়সলমের ও সোনার কেল্লার প্রেক্ষাপটে এই ছবি তৈরি করেছেন। এবং ওই ছবির জাতিস্মর শিশু মুকুলকে চিত্রনাট্যকার সপ্তস্ব বসু তরুণ (সুপ্রভাত) চেহারায় ফিরিয়ে এনেছেন। বাকি গল্প অবশ্যই একেবারে আলাদা। তবে সত্যজিতের প্যারাসাইকোলজিকাল ব্যাপারটাও বেশ নাটকীয়তার মোড়কে শেষ পর্যন্ত বজায় রাখা হয়েছে ছবিতে।

গোয়েন্দা কিংবা সত্যান্বেষীর চেহারায় দেখা গেল বিমল (পরমব্রত), তাঁর বান্ধবী তথা মনস্তাত্ত্বিক ডাক্তার রুবি (কোয়েল) এবং তাঁদের সহযোগী কুমারকে (গৌরব)। অনুপস্থিত শুধু হেমাঙ্গ হাজরা। কিন্তু সেই জায়গাটা পুষিয়ে দিয়েছেন সুনীল ভার্গব (সাহেব) এবং কাঠপুতলিবাবা (মাসুদ আখতার)। কলকাতাবাসী তরুণ বই ব্যবসায়ী মুকুল আলপনা আঁকা ও বিচিত্র সংকেত-সহ রহস্যজনক চিঠি পায়। তাঁর মনের মধ্যে আগে থেকেই পূর্বজন্মের কিছু ধূসর স্মৃতি আনাগোনা করত। গল্পে দেখানো হয় তাঁর বইয়ের দোকানটি কে বা কারা যেন পুড়িয়ে দেয় এবং তাঁকে গুম করারও চেষ্টা করে। মুকুলও আবছা-আবছাভাবে পূর্বজন্মে সোনার কেল্লায় বসবাসের স্মৃতি আওড়াতে থাকে। সুতরাং বিমল, রুবি, কুমার মুকুলকে নিয়ে রওনা হয় সোনার কেল্লার দিকে। ওরা নিশ্চিত যে, ওখানেই রয়েছে মুকুলকে আক্রমণের মূল অপরাধী। কিন্তু সেখানে পৌঁছে একটি পরশ পাথরকে কেন্দ্র করে বারবার ঘুরে যায় ঘটনার মোড়। যেটি নাম ভাঁড়িয়ে হাতাতে চায় সুনীল এবং জানা যায় আটশো বছর আগেকার সেই পাথর ওই কেল্লারই কোনও এক গুপ্ত জায়গায় সুরক্ষিত রয়েছে। সেই রহস্য ভেদ করতে গিয়ে ঘটনার ঘনঘটা ও প্রতিটি চরিত্রের পারস্পরিক টানাপোড়েনে চিত্রনাট্য আরও জটিল হয়েছে। যা সাধারণ দর্শকের কাছে কিছুটা ধাঁধার মতো লাগতেই পারে কিংবা হয়তো কিছুটা ক্লান্তিকরও! এই প্লটটিকে আরও মজবুত করে সাজানো উচিত ছিল।

এবং ছবির শেষ পর্বে আসার আগেই ক্লাইম্যাক্স কিছুটা আন্দাজ করা যায়। ফলে রহস্যটা কিঞ্চিৎ ফিকে হয়ে পড়ে। তবে গল্পের কাঠামো ও পর্দায় তার বিন্যাসে সায়ন্তন যথেষ্ট মুন্সিয়ানার পরিচয় রেখেছেন। তাঁকে অবশ্যই এই বিষয়ে যোগ্য সহযোগিতা করেছেন দুজন। এক, আলোকচিত্রী রাম্যদীপ সাহা এব দ্বিতীয় ব্যক্তি রথিজিৎ ভট্টাচার্য, যিনি আবহ সৃজন করেছেন। ‘সোনার কেল্লায় যকের ধন’ যে সত্যজিৎকে অনুসরণ করেই পরিচালনা করা হয়েছে, সায়ন্তনের সেই প্রচেষ্টা বেশ ঠাহর করা গেল। রহস্য, রোমাঞ্চকর ছবি হিসেবে দর্শকের জন্য উদ্বেগ ও অনুসন্ধিৎসা বজায় রাখার দিকেও নজর রয়েছে। এই ছবির আরেকটা ভালো দিক হল, প্রায় সব শিল্পীরই সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যালান্সড অভিনয়। প্রথম নাম মুকুলবেশী সুপ্রভাত দাসের। তিনি মুকুলের মানসিক ভারসাম্যের ব্যাপারটা সারা ছবিজুড়ে সুন্দর বজায় রেখেছেন।

রুবির চরিত্রে কোয়েল মল্লিক বেশ স্বাভাবিক, সপ্রতিভ, এবং শেষ পর্বে এসে কিঞ্চিৎ অস্বস্তিকর পরিস্থিতির শিকার হওয়ার ব্যাপারটাও সুন্দর এনেছেন। বিমলের ভূমিকায় পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় তাঁর নিজের ধারা মতোই সহজ, কখনও আবার কমিক ছোঁয়া দিয়ে বাড়তি হাততালি পাচ্ছেন। সাগরেদ কুমার হয়েছেন গৌরব চক্রবর্তী। তিনিও পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন। সাহেব চট্টোপাধ্যায় সেজেছেন সুনীল ভার্গব। প্রথম পর্বে তাঁর অভিনয়ে ‘ভিলেনিপনা’, এবং পরবর্তী সময়ে একজন অসহায় বাবার আর্তি ভালোই প্রকাশ পেয়েছে। আরেকজনের নাম অবশ্যই করতে হচ্ছে। তিনি মাসুদ আখতার, যিনি কাঠপুতলিবাবা সেজে কাহিনীর শেষ পর্ব জমিয়ে দিয়েছেন। তবে এই পর্বের ‘যকের ধন’-এ বিমল ও কুমারকে বেশ কয়েকবার যেভাবে মারকুটে গুন্ডাদের অ্যাকশন দিয়ে মোকাবিলা করতে হল, সেটা কিছুটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গিয়েছে। অ্যাকশন কিছু কমানো যেতেই পারত, অন্তত সত্যজিতের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের কথা ভেবে।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement