তথাকথিত পুরুষ তান্ত্রিক সমাজে মহিলাদের স্থান কোথায়? তারা নেহাতই ভোগ্যপণ্য নাকি স্বামীদের হাতের পুতুল? নাকি চোখে চোখ রেখে ঘুরে দাঁড়ানোর হিম্মতও দেখাতে পারে? এমনই নানা প্রশ্ন তুলেছে হানি ত্রেহনের ছবি ‘রাত আকেলি হ্যায়’ (Raat Akeli Hai)। তবে শুধুই কৌতূহল বাড়ায়নি, মিটিয়েছেও। লিখছেন সুলয়া সিংহ।
টানটান গল্প: দ্বিতীয় বিয়ের কয়েক ঘণ্টা পরই খুন বর। ‘কচি’ স্ত্রীর (রাধিকা আপ্তে) সদ্য রঙিন হয়ে ওঠা জীবন সাদা-কালো করে বিদায় নেয় বিরাট প্রতিপত্তির মালিক প্রৌঢ় রঘুবীর সিং। যার সংসারের শাখা-প্রশাখা অনেকখানিই বিস্তৃত। আর এই হাই প্রোফাইল মার্ডার কেসের তদন্ত করতে নামে ইনস্টপেক্টর জটিল যাদব মানে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি (Nawazuddin Siddiqui)। একের পর এক রহস্যের পর্দা ফাঁস হতে থাকে। গল্পের শেষ পর্যন্ত সেই রহস্যের গন্ধ নাকে আসে। রহস্য উদঘাটন হওয়ার পরও যার রেশ থেকে যায়।
সমাজের বাস্তব চিত্র: অর্থ আর ক্ষমতা। এই দুই দিয়ে সত্যের মুখ চেপে দেওয়া যায় অনায়াসে। ক্ষমতার লোভে বিক্রি করে দেওয়া যায় নিজের আত্মসম্মান বোধও। দুর্নীতির চাদরে ধামাচাপা পড়ে যায় নির্যাতিতার কান্নার শব্দ। ধুলো জমে কুলুঙ্গিতে রাখা অভিযোগনামার। নুন আনতে পান্তা ফুরলে সুবিচারের আশা না করাই ভাল। বরং মুখ বন্ধ থাকলে প্রাণে বাঁচা যাবে। সেই ছবিই অত্যন্ত সহজভাবে তুলে ধরেছেন পরিচালক।
নারীর বহু রূপ: এটাই ছবির সবচেয়ে শক্তিশালী বিষয় বলা চলে। নির্যাতিতা, প্রতিবাদী, সাহসিনী, নির্ভয়া, স্নেহময়ী- নারীর নানা রূপ বিস্মিত করেছে। পরিবেশ-পরিস্থিতি, আর্থিক অনটন কিংবা সম্মান বাঁচানোর তাগিদ কীভাবে এক মা অথবা মেয়ে বা স্ত্রী অথবা রক্ষিতাকে বদলে দিতে পারে, সেই খুনের রহস্যের সঙ্গে তা ওতপ্রতভাবে জড়িয়ে গিয়েছে। মনের মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভের কীভাবে প্রতিফলন ঘটবে, হয়তো সে নিজেও বোঝে না অনেক সময়। না পাওয়া কিংবা পেয়েও সব হারানোর যন্ত্রণা নারীর মনকেও লোহার মতো শক্ত করে তোলে। ঠিক যেমন রাধার চরিত্রে হয়েছে রাধিকা। কিংবা পরিচারিকা চুন্নির (রিয়া শুক্লা) দিদা।
কম বাজেটেও কামাল: স্টার কাস্ট বলতে নওয়াজ এবং রাধিকা আপ্তে। আর সে অর্থে বড় কোনও তারকা নেই ছবিতে। তাও স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আড়াই ঘণ্টা কাটিয়ে দেওয়াই যায়। আর প্রতি মুহূর্তে বাড়ে সন্দেহের তালিকা। লোকেশনও সাদা-মাটা। একেবারে যেন বাস্তবের ছবি। বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটেছে রাতে। ছবির নামেই তা স্পষ্ট। রাতের অন্ধকারে গায়ে আগুন লাগা ব্যক্তির ল্যাম্প পোস্টে ধাক্কা খেয়ে চিৎকার করে পড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে গায়ে কাঁটা দেয় বইকী। তবে তদন্তের কিছু অংশে কাটছাঁট করাই যেত।
অভিনয়: নওয়াজউদ্দিনের অভিনয় নিয়ে কি সত্যিই নতুন করে কিছু বলার থাকে? মনে হয় না। তিনি একাই শচীন তেণ্ডুলকরের মতো ক্রিজে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। মায়ের সঙ্গে খুনসুটি থেকে সাহসী ইনস্টপেক্টর হিসেবে সত্যের খোঁজ, আবার মুহূর্তে প্রেমিক হয়ে ওঠা- সবক্ষেত্রেই তিনি জাস্ট পারফেক্ট। রাধিকা আপ্তেও সুন্দরভাবে সব হারিয়েও বেঁচে থাকার সাহসকে ফুটিয়ে তুলেছেন। উপরতলার মানুষদের কাছে মাথা নত না করার জেদ মন ছুঁয়ে যায়। নওয়াজের মায়ের ভূমিকায় বেশ ভাল ইলা অরুণ।
নেটফ্লিক্সের পর্দায় চোখ রেখে নওয়াজ-রাধিকার ‘ঘৃণা’য় ভরা প্রেম আর রহস্যের কাহিনি দেখে ফেলতেই পারেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.