Advertisement
Advertisement
Maalik Review

রাজকুমার-প্রসেনজিতের দ্বৈরথে কতটা জমল ‘মালিক’? পড়ুন রিভিউ

প্রতিশোধস্পৃহ 'মালিক' রাজকুমারকে কি শায়েস্তা করতে পারল 'প্রভুদাস' প্রসেনজিৎ?

Rajkummar Rao, Prosenjit Chattarjee starrer Maalik Review
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:July 12, 2025 2:07 pm
  • Updated:July 12, 2025 2:07 pm   

চারুবাক: বেশ কয়েক বছর রোম্যান্টিক-কমেডি ঘরানার সিনেমায় ধরা দিয়ে ‘গম্ভীর’ ইমেজের ছক বদলে ফেলেছিলেন রাজকুমার রাও। মধ্যবিত্ত দর্শকের কাছে মধ্যমেধার সাধারণ নায়ক হলেও সিনেবিশেষজ্ঞদের কাছে তিনি বরাবর ‘ডিরেক্টর্স অ্যাক্টর’। রাজকুমার তাঁর শেষতম ছবি ‘ভুলচুক মাফ’-এও ছিলেন আমার-আপনার মতো গোবেচারা গোছের মানুষ! তবে সাত-আট বছর বলিউডে কাটিয়ে এবার তিনি দর্শকদের পাতে নিজের ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ ইমেজ পরিবেশন করলেন। আর তাই বোধহয় তথাকথিত কিছু সিনেসমালোচকরা ‘মালিক’কে রাজকুমার রাওয়ের প্রত্যাবর্তন হিসেবে দেখছেন!

Advertisement

না, এই ছবিতে তিনি সিক্স প্যাক দেখাননি কিংবা চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী নায়কোচিত বা খলনায়কোচিত, যেটাই বলুন না কেন, পেশী ফুলিয়ে ‘ডন’ও হওয়ার চেষ্টা করেননি। কিন্তু কোথায় মালিক ‘মালিক’ হওয়ার চেষ্টা করেছেন? লুকে কিংবা সিনেমাজুড়ে নানা কর্মকাণ্ডে। একমুখ দাড়ি, প্রচন্ড গলাবাজি আর সব্যসাচী হয়ে দু’ হাতে অটোমেটিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে কয়েক হাজার গুলি ছুড়েছেন ক্যামেরার সামনে। আর আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি শেষ হলে চলেছে তাঁর বিরাশি নয়, একশো শিক্কার ঘুষি, আবার কখনও বা হাতাহাতি। তাতে না হলেও বাঁশ, বেলচা, প্রযোজক কিংবা পরিচালক পুলকিত সম্রাট যা যা যুগিয়েছেন, তাই দিয়ে দুষ্টের দমন-পীড়ন চালিয়েছেন। ছবি দেখতে দেখতে একটা সময় দর্শক ক্লান্ত হলেও রাজকুমার এবং তাঁর গ্যাং কখনও ক্লান্ত হয় না। আসলে ছবির নায়কের নামই তো ‘মালিক’, সুতরাং তিনি থামবেন, এমনটা আবার বাণিজ্যিক ছবিতে হয় নাকি?

কাহিনির প্রেক্ষাপট এলাহাবাদ শহর। সময় ১৯৮৮-৯০ সাল। চাষির ছেলে দীপক বাবার খুনের প্রতিশোধ নিতে গিয়ে এমন নৃশংস কাণ্ড করে বসে যে, দীপক হয়ে যায় শহরের সমস্ত কুকর্মের মালিক। মন্ত্রী (সৌরভ শুক্লা) ও স্থানীয় বিধায়ক চন্দ্রশেখর (সৌরভ সচদেব) তখন তার প্রায় পোষমানা লোক। সংসার বলতে রয়েছে, তরুণী স্ত্রী শালিনী (মানুষী চিল্লার) এবং বৃদ্ধা মা। অসামাজিক কীর্তিকলাপ থেকে স্বামীকে সরিয়ে আনতে শালিনী আদরের সঙ্গে অনুনয় বিনয় করলেও মালিক কিন্তু শহরের ‘মালিক’ই থাকতে চায়। এটাই তো ক্ষমতার আকর্ষণ! যে দলে পড়েন নেতা-মন্ত্রীও। তাঁরাই নিজস্ব স্বার্থ চরিতার্ছ করতে এহেন ‘মালিক’ তৈরি করেন। ব্যবহার করেন। আবার প্রয়োজন শেষ হলে বা বেশি বাড়াবাড়ি করলে নীরবে সরিয়ে দিতেও পিছপা হন না। পুলকিত সম্রাটের চিত্রনাট্য অবশ্য সেই পরিচিত পথে হাঁটেনি, সম্ভবত মারপিটের দৃশ্যগুলো আরও প্রলম্বিত করার উদ্দেশেই। কিন্তু মধ্যান্তরের পর অন্তহীন মারপিট অসহ্য হয়ে ওঠে! আর তাই প্লটে ট্যুইস্ট দিতে আবির্ভাব হয় প্রভুদাস নামের এক এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট পুলিশ অফিসারের। যে ভূমিকায় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। খোদ বিধায়ক যাকে এলাহাবাদে বদলি করে নিয়ে এসেছেন ‘মালিক’ রাজকুমারকে শায়েস্তা করার জন্য। অবশ্য তাঁর বুদ্ধি কাজে লাগিয়েই শেষ পর্যন্ত মালিকরাজের অবসান ঘটানো সম্ভব হয়।

দেখতে দেখতে মাঝখানে মনে হচ্ছিল প্রসেনজিৎ কি তাহলে এমন একটা ‘অকিঞ্চিৎকর’ চরিত্র নিয়েই শান্ত থাকবেন? না,সেটা হয়নি। চূড়ান্ত পর্বে প্রভুদাসই হয়ে ওঠেন বোরের চাল। তবে সেই চাল দেওয়ার আগে মন্ত্রী, বিধায়ক, তাঁদের একাধিক সাগরেদ এবং শতাধিক অতিরিক্ত শিল্পীর জবাই ঘটেছে, বললেও অত্যুক্তি হয় না। নির্বোধ অ্যাকশন দিয়ে যে দর্শক টানা যায় না, ‘মালিক’ আবারও সেটা প্রমাণ করল। মুক্তির দিন কলকাতার কোনও হলের একটি প্রদর্শনীও হাউজফুল হয়নি। তবে হ্যাঁ, রাজকুমার কিন্তু তাঁর অ্যাংরি নায়কের ইমেজ বিল্ডআপ করেছেন বেশ যত্ন নিয়েই। শরীর না দেখিয়ে অ্যাকশন দেখানোয় তিনি খামতি রাখেননি। প্রসেনজিৎ বদরাগী পুলিশ অফিসারের চরিত্রে বেশ মানানসই। অভিনয়েও সাবলীল। তবে কলকাতার বাংলা ছবির দাপুটে নায়ককে বলিউডের এমন সাধারণ ছবিতে ‘অতি সাধারণ’ চরিত্রে কাজ করতে দেখলে, সত্যিই কষ্ট হয়। নতুনদের মধ্যে নজর কেড়েছেন মালিকের ডানহাত বদায়ুঁর চরিত্রে অংশুমান পুষ্কর। তাছাড়া সৌরভ শুক্লা, সদানন্দ কিরকিরে তাঁদের সুনাম বজায় রেখেছেন। শালিনীর চরিত্রে মানুষী চিল্লার কিন্তু আবেগপূর্ণ দৃশ্যগুলোয় যথেষ্ট পরিপাটি। গানের মধ্যে ‘নামুমকিন…’ এবং ‘তেরি বাহোমে বইঠে হ্যায় দিল থমকে…’ মন্দ লাগেনি, কিন্তু সিনেমা শেষ হওয়ার পর সেই রেশ আর থাকবে কতক্ষণ?

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ