শম্পালী মৌলিক: বড় পর্দায় কাজলকে কেন্দ্রচরিত্রে দেখতে পাব বলে কিছুটা আশা নিয়েই প্রেক্ষাগৃহে গিয়েছিলাম। কাজল ঘন হলেও চিত্রনাট্য বড়ই ফ্যাকাসে। মা মা করে কাঁদলেও দু’ঘণ্টা পনেরো মিনিট ধরে চিত্রনাট্যের ভূত ছাড়ে না। বিশাল ফুরিয়ার এই ছবিটা হরর-ফ্যান্টাসি গোত্রের। মিথোলজির সঙ্গে থ্রিল মিশেছে, প্রচুর ভিএফএক্সের ব্যবহারও আছে। একা কাজলের কাঁধে বড় বেশি দায়িত্ব পড়ে গেছে। যে তার বাচ্চাকে পুরনো অভিশাপ থেকে বাঁচাতে লড়ছে। সমাজ, অন্ধবিশ্বাস, সংস্কারের সঙ্গেও লড়ছে। এক সময় সে প্রায় মা-কালীর মতো শক্তিশালী হয়ে উঠছে পৈশাচিক ক্ষমতার সঙ্গে সংগ্রামে।
ছবির প্রেক্ষাপট বাংলার এক গ্রাম। ‘চান্দরপুর’ বলা হচ্ছে যাকে। বাংলা-হিন্দি মেশানো এক অদ্ভুত উচ্চারণের প্রবাহ দেখলাম ছবিতে। কানে শুনতে যেমন অদ্ভুত লাগছিল, ভাষা অনুধাবন করতেও কষ্ট। গ্রামের প্রাচীন জমিদার বাড়ির লোকজন অমন হাইব্রিড ভাষায় কথা বলবে কেন! যাই হোক, চান্দরপুরে জমিদারের ছেলে শুভঙ্করের (ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত) আদি বাড়ি। অর্থাৎ অম্বিকার (কাজল) শ্বশুর বাড়ি। ঘন জঙ্গল পূর্ণ এলাকা। সেখানে সদ্য রজস্বলা মেয়েরা একের পর এক নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছিল একসময়। তার পর তারা ফিরে আসছিল কিন্তু কিছু তাদের মনে পড়ত না। এই পরিস্থিতিতে অম্বিকা তার মেয়েকে নিয়ে এসেছিল আদি বাড়িতে। তার পর রাক্ষসের অভিশাপের বিরুদ্ধে একা মায়ের যুদ্ধ শুরু হয়। ভূত-প্রেতের সঙ্গেও পাঙ্গা নিতে সে পিছপা নয়।
তার আগে চল্লিশ বছর আগের একটা গল্প দেখানো হয়। যখন কালীপুজোর দিনে জমিদার বাড়িতে যমজ সন্তানের জন্ম হয়। ছেলেটিকে বাঁচিয়ে রাখা হয়, অন্যদিকে কন্যা সন্তানকে মেরে ফেলা হয়। যার সঙ্গে এই ভয়ংকর গল্পের গভীর যোগ আছে। পরে দেখা যায় জমিদারের ছেলে শুভঙ্কর শহরে থাকে। তারও একটি মেয়ে শ্বেতা (খেরিন শর্মা)। যা তারা গোপন রেখেছে পরিবারের কাছে। একসময় বাবা মারা যেতে শুভঙ্কর দেশের বাড়ি যায়। এবং বাড়ি বিক্রির ইচ্ছে প্রকাশ করে। এই ব্যাপারে সরপঞ্চ (রনিত রায়) বা জয়দেব অগ্রণী ভূমিকা নেয়। সেই অম্বিকা আর তার মেয়েকে গ্রামের বাড়িতে এসে ডিল ফাইনাল করতে বলে। তারা আসে এবং নানারকম অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে শুরু করে।
চিত্রনাট্যে ধর্ম, পুরাণ কথা অনেকটা জায়গা নিয়েছে। তার মধ্যেই শুভ-অশুভের লড়াই, দৈত্য, ভগবান, স্বপ্নদর্শন সব মিলিয়ে বড্ড ঘোঁট পেকেছে। সে সব আর বিশদে বলছি না। আদি বাড়িতে অম্বিকার মেয়ে শ্বেতা আর নন্দিনীর (সূর্যশিখা দাস) মেয়ে দীপিকার (রূপকথা চক্রবর্তী) বন্ধুত্ব হয়। তারপর সুপারন্যাচরাল কান্ডকারখানা ফুল সুইংয়ে ওঠে। পুরুষতন্ত্রের দাপটও দেখি, পরে অবশ্য কাজল হাল ধরেন। ভিস্যুয়ালগুলো অবশ্য ইন্টারেস্টিং। তবে মানুষ-দানবের যুদ্ধ আর ঐশ্বরিক অনুঘটকের উপস্থিতি খুবই সাধারণ লেগেছে। অনেকদিন পর হরর ছবি দেখতে গিয়ে হাসলাম। কাজল যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছেন চরিত্রটি বিশ্বাসযোগ্য করতে। ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তর খুব বেশি কিছু করার ছিল না। দীপিকার চরিত্রে রূপকথা চক্রবর্তী ভালো। রনিত রায় জয়দেবের চরিত্রে পারফেকট কাস্টিং। একটি চরিত্রে দিব্যেন্দু ভট্টাচার্যও যথাযথ। কিন্তু অনেকগুলো বিষয়ের ভিড়ের ফলে চিত্রনাট্য যে কক্ষচ্যুত ফলে শেষ রক্ষা হয় না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.