Advertisement
Advertisement
Aparajita Ghosh

‘বয়সের সঙ্গে ভালোবাসার কোনও সম্পর্ক থাকতে পারে না’, মত ‘চিরসখা’র কমলিনীর

এখনও সেই জীবনটাই বাঁচি, যেটা কুড়ি বছর আগে করতাম। যে জীবনটা আমি বাঁচতে চাইতাম।

Aparajita Ghosh about her acting to professional life

ছবি: ইনস্টাগ্রাম

Published by: Arani Bhattacharya
  • Posted:May 23, 2025 6:28 pm
  • Updated:May 23, 2025 6:28 pm  

“বয়সের সঙ্গে ভালোবাসার কোনও সম্পর্ক থাকতে পারে না”। স্পষ্ট কথা অপরাজিতা ঘোষের। বাংলা টেলিভিশনের শক্তিশালী অভিনেত্রীদের মধ্যে অন্যতম তিনি। ‘চিরসখা’-র সৌজন্যে। তাঁর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। তাঁর মুখোমুখি শম্পালী মৌলিক।

প্রায় কুড়ি বছর টেলিভিশন করছেন। ‘একদিন প্রতিদিন’ থেকে এখনকার ‘চিরসখা’ (স্টার জলসা)। ইন্ডাস্ট্রি অনেক বদলে গিয়েছে। বদলটা কেমন লাগে?

-চেঞ্জ ইজ দ‌্য অনলি কনস্ট‌্যান্ট থিং। সুতরাং বদল তো হবেই। যদি বদল না হত, সেটা কি আমার খুব ভালো লাগত? বদলের কিছু ভালো-খারাপ থাকে, সেটাও আপেক্ষিক। যেটা হওয়ার সেটা হবেই। আমিও বদলেছি।

টানা টেলিভিশন করলে ক্লান্তি আসে। সেই জন‌্যই কি কিছুটা বিরতিতে ফেরেন?

-সেটা একটা বড় কারণ। দ্বিতীয়ত, যদি ভালো কিছু করতে হয়, তার জন‌্যও অপেক্ষার প্রয়োজন। এরকম তো হয় না, একটা কাজ শেষ হল আর সঙ্গে সঙ্গে পরের ভালো কাজ অপেক্ষা করবে। এই গ‌্যাপটা দরকার হয়। টেলিভিশন যখন করি, সেটা আলাদা রকমের কমিটমেন্ট। ওই বিরতিতে তখন অন‌্যরকমের কাজ করার চেষ্টা করি।

অন‌্যরকমের কাজ বলতে?

-সেটা ছবি হতে পারে, সিরিজ হতে পারে বা প্রচুর বেড়াতে যাওয়া। এই সবগুলোই। ফ্রিল‌্যান্সার হওয়ার এটা অপূর্ব সুবিধা (হাসি)। তাছাড়া আমার জীবনে দুটো ফেজ এসেছিল, যখন আমি একটু বিরতি নিই। আমাদের সন্তানের জন্মের সময়, খুব স্বাভাবিক কারণেই বিরতি নিয়েছিলাম। অ‌্যান্ড ইট ওয়াজ আ ওয়ান্ডারফুল ব্রেক। তারপরে কোভিডের সময়, যখন কাজ করিনি। বাকি সময়টা এই রকমভাবে দিব্যি চলছে।

ভালো কাজের জন‌্য অপেক্ষার প্রয়োজন বললেন। ‘চিরসখা’ কি সেই ভালো কাজটা, যেটা লীনা গঙ্গোপাধ‌্যায় দিয়েছেন?
-অবশ‌্যই। অ‌্যাম ব্লেসড, মনে করি। এ জন‌্য আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। আমার অনেকগুলো সিরিয়ালের চরিত্র মানুষের মনের মধ্যে থেকে গেছে। মনে হয়, ‘চিরসখা’-য় আমি যে চরিত্রটি (কমলিনী) করছি, সেটিও তাদের মধ্যে একটি। এবং আমার অভিনয় করে ভীষণ ভালো লাগছে। প্রথমদিন থেকে এই চরিত্রটা যখন করছি, ‘কমলিনী’র সঙ্গে আমারও একটা জার্নি হয়েছে। সেই পথচলাটা খুব সুন্দর।

‘চিরসখা’ প্রধানত কমলিনী (অপরাজিতা ঘোষ), স্বতন্ত্র (সুদীপ মুখোপাধ‌্যায়) ও ডল (সমতা দাস) -এর ত্রিকোণ প্রেম। যেখানে মধ‌্যবয়সের প্রেম বড় জায়গা নিয়েছে। মধ‌্যবয়সের প্রেম নিয়ে কী বক্তব‌্য?
-এখানে মধ‌্যবয়সের প্রেম যেমন আছে, ভীষণভাবে আছে বন্ধুত্ব। আমি বলব, প্রেমটা সেকেন্ডারি। সেজন‌্য নামটাও দেওয়া হয়েছে ‘চিরসখা’। এখানে কিন্তু একতরফা ভালোবাসা। এবং সেই ভালোবাসা সেলফলেস। অন্যজনের তরফে ভালোবাসা থাকলেও, দু’জনেরই শ্রদ্ধার জায়গা আছে। তারা কিন্তু কোনওদিনই সীমানা অতিক্রম করেনি। মানে ঠিক করে দু’জন দু’জনকে বলেও উঠতে পারেনি। আর মধ‌্যবয়সের প্রেম নিয়ে আমার বক্তব‌্য হল, ইট’স ফ‌্যানটাসটিক। বয়স একটা সংখ‌্যা মাত্র, তার সঙ্গে ভালোবাসার কোনও সম্পর্ক থাকতেই পারে না। লাভ ইজ বিউটিফুল (হাসি)। প্রেমের থেকেও বলব ভালোবাসা।

‘কমলিনী’-র জন‌্য কেমন প্রতিক্রিয়া পান?
-কমেন্ট বক্সে দেখছিলাম কেউ কেউ ‘কমলিনী’কে চোখে হারায়। আমার কাছে খুব ভালো প্রতিক্রিয়া আসে। সেগুলো ভালো লাগে। শুধু আমার বিষয়ে নয়, ধারাবাহিকটা নিয়েই ভালো প্রতিক্রিয়া পাই। আমাদের পুরো টিমটাই খুব ভালো। সবাই খুব যত্ন করে তাদের কাজটা করছে। তবে তারই মধ্যে কিছু এক্সট্রিম রিঅ‌্যাকশনও দেখেছি। একদলের দারুণ লাগছে, আরেক দলের ন‌্যাকা মনে হয়। কেউ আবার সম্পর্কের ডায়নামিক্স না বোঝার ফলে পরকীয়া খুঁজে পান। সবকিছু তো সবার জন‌্য নয়। যার যা লেগেছে, সেটা নিশ্চয়ই গ্রহণ করব। তবে পরকীয়া এর মধ্যে নেই। কারণ একজন স্বামীহারা, সিঙ্গল। অন‌্যজনও সিঙ্গল। ওটা একান্তই তাদের ভাবনা (হাসি)।

লীনা গঙ্গোপাধ‌্যায়ের সঙ্গে আবার কাজ করার ইচ্ছে কতটা? ‘চিরসখা’ তো একশো পর্ব অতিক্রম করে গিয়েছে।
– লীনাদির সঙ্গে অবশ্যই আবার কাজ করতে চাই। লীনাদি ভীষণ ভালো লেখেন এবং একটা চরিত্রকে খুব সুন্দরভাবে তৈরি করেন। লেখা পড়েই বুঝতে পারি চরিত্রটা এবং ভীষণ সুন্দর তার ভাষা। প্রত্যেকে আলাদা এবং খুব স্ট্রং।

এখন ধারাবাহিকে অনেক নতুন মুখ। কমবয়সিরা এসেই একটা সিরিয়াল হিট করলেই স্টার। আপনি যখন শুরু করেছিলেন সোশাল মিডিয়ার এত রমরমা ছিল না। বিষয়টা কীভাবে দেখেন?
– এই বিষয়টা আমি দেখি না। কারণ, এই জীবনটাই আমি বাঁচিনি। এখনও সেই জীবনটাই বাঁচি, যেটা কুড়ি বছর আগে করতাম। যে জীবনটা আমি বাঁচতে চাইতাম। বেসিকালি লাজুক প্রকৃতির আমি। অভিনেতারাও লাজুক হন। যেটা আমি নিজেকে দিয়ে বুঝেছি। সুতরাং আমি যখন অভিনয় করছি না, ভিজিবিলিটিতে থাকি না, একটু লুকিয়ে থাকি। আমার ফেসবুক অ‌্যাকাউন্ট-ও নেই। (হাসি)

সোশাল মিডিয়া ব‌্যবহার করেও তো অনেকে জনপ্রিয়। এফবি-তে না থাকা অসুবিধা করতে পারে, মনে হয় না?
– নাহ্‌। কারণ আমি একদমই জনপ্রিয় হতে চাই না। (হাসি) তবে ইনস্টায় আছি আমি।

প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যের বেশ কয়েকটা (‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’, ‘বাকিটা ব‌্যক্তিগত’) ছবিতে কাজ করেছেন আপনি। ওঁর ‘নধরের ভেলা’ রয়েছে অপেক্ষায়। অঞ্জন দত্ত বা অতনু ঘোষের ছবিতেও কাজ করেছেন। কিন্তু যতটা প্রতিভা আপনার, আরেকটু বেশি ছবিতে কাজ হতে পারত না কি?
– এটা নিয়ে ভাবি না। আই অ‌্যাম ভেরি কনটেন্ট। একটা মানুষ তার জীবদ্দশায় কটা ভালো কাজ করতে পারে? তুমি একজন পরিচালকেরই তিনটে কাজের কথা বললে, যেখানে আমি আছি। যাঁদের কথা বললে, ওঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে একাধিক কাজ করেছি। অনীকদার (দত্ত) সঙ্গে একটা কাজ করেছি, যেটা রিলিজ করবে। আমার জীবনে কখনও মনে হয়নি কী পেলাম, আর পেলাম না। আমি কোনওদিন ভাবিনি টেলিভিশন ছেড়ে সিনেমা করতে চাই। কারণ সিনেমা আমার কাছে অত গুরুত্বপূর্ণ না, লেট ইট বি ভেরি ক্লিয়ার। জীবনে যা কিছু, সবটুকুই টেলিভিশনের জন‌্য। আমার কাছে ভালো কাজ গুরুত্বপূর্ণ। সে টিভি, সিনেমা বা নাটক– বোঝাতে পারলাম? কোন মাধ‌্যম সেটা নয়। আমরা কিন্তু সিনেমার লোকেদের জিজ্ঞেস করি না, টেলিভিশন করতে পারছ না বলে আক্ষেপ আছে? কাজেই কোনও জায়গা নেই এই ইন্ডাস্ট্রিকে ছোট করার। দিস ইন্ডাস্ট্রি ইজ ভেরি গুড।

ঋত্বিক চক্রবর্তী আপনারই মতো টিভি করতেন একসময়, তারপর সিনেমায় আসেন। দু’জনে একই পেশায় বলে চাপ হয়েছে কখনও?
– নাহ্‌, কোনওদিন না।

টাইম ম‌্যানেজমেন্ট নিয়েও না?
– না, আমাদের কত সময়। কারণ, আমরা দু’জনেই ফ্রিল‌্যান্সার। দু’জনেই কেউ কিছু হতে চাই না। ফলে হাতে অনেক সময় (হাসি)। কুড়ি বছরের কেরিয়ারে এটা আমার আট নম্বর ধারাবাহিক। বুঝতে পারছ মাঝে কতটা সময়? ঋত্বিকও তেমন।

ছেলে তো বড় হয়েছে এখন, আপনার কাজ দেখে কোনও মন্তব‌্য?
– ও আমাদের খুব বেশি কাজ দেখেনি। ওর খুব দুঃখ যে বাবা-মা ছোটদের কোনও কাজ করে না। ওকে অনেক সময় লেগেছে বোঝাতে যে ‘নধরের ভেলা’-র ট্রেলারও ওকে দেখানো যাবে না। ১২ বছরের বাচ্চা কী দেখবে, না দেখবে, সেটা তো ভাবার বিষয়। ঋত্বিক ফেলুদা করেছে, ফলে ও খুশি যে, এমন একটা কিছু করেছে, যেটা উপমন্যু দেখতে পারবে (হাসি)।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement