বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: নির্ধারিত ওষুধে দমন করা সম্ভব হচ্ছে না সবুজখেকো ‘লুপার ক্যাটার পিলার’দের। স্বভাবতই সবুজ পাতা উৎপাদনে ঘাটতিতে শঙ্কা বাড়ছে উত্তরের চা বলয়ে। ব্যবস্থা চেয়ে চা পর্ষদের দ্বারস্থ হচ্ছে বণিকসভাগুলি। ইন্ডিয়ান টি প্ল্যানটার্স অ্যাসোসিয়েশনের ডুয়ার্স শাখার সচিব রাম অবতার শর্মা বলেন, “এবার এপ্রিল থেকে লুপার ক্যাটার পিলারের আক্রমণ চলছে। সরকারি তালিকাভুক্ত ওষুধে কাজ হচ্ছে না। একদিকে যেমন খরচ বেড়েই চলেছে, অন্যদিকে পাতা ধ্বংস অব্যাহত। আমরা খুব তাড়াতাড়ি বিষয়টি নিয়ে চা পর্ষদের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসব।”
কেনই বা উদ্বিগ্ন হবেন না চা বণিকসভার কর্তারা? বর্গির হানা বললেও কম বলা হবে। ‘লুপার ক্যাটার পিলার’ নামে সবুজখেকো পোকার হামলায় বিঘার পর বিঘা চা বাগানে দুটি পাতা একটি কুড়ি উধাও হতে বসেছে। কঙ্কালসার চেহারা দেখে মনেই হবে না, ওটি চা বাগান। বড় চা বাগানের পাশাপাশি এমন দুর্যোগের কবলে পড়ে দিশেহারা হয়েছেন উত্তর দিনাজপুর, তরাই এবং জলপাইগুড়ি জেলার কয়েক হাজার ক্ষুদ্র চা চাষি। কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয় গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “চা শিল্প মারাত্মক ক্ষতির মুখে দাঁড়িয়েছে। একদিকে অনাবৃষ্টি-অতিবৃষ্টি। অন্যদিকে, রোগ পোকার আক্রমণে নাজেহাল দশা হয়েছে। এবার জুন মাসেও কাচা পাতার উৎপাদন অন্তত ৩৫ শতাংশ কমবে।”
চা গবেষণা কেন্দ্রের গবেষকদের মতে, তাপমাত্রার ঘনঘন পরিবর্তনের জন্য বংশবিস্তারের অনুকূল পরিবেশ পেয়েছে লুপার। এপ্রিলে অনাবৃষ্টি, অসহ্য গরম ছিল চা বলয়ে। মে মাসে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টির জেরে তাপমাত্রা দ্রুত ওঠানামা করছে। আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতিতে ঝড়ের গতিতে বংশবিস্তার করে একের পর এক বাগানে ছড়িয়ে সর্বনাশ ডেকেছে সবুজখেকো লুপার। ফলে চা পাতা উৎপাদন অনেকটাই মার খাবে। চা বণিকসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, জুন মাসে উত্তরে ৫০ মিলিয়ন কেজি সবুজ চা পাতা উৎপাদন হয়ে থাকে। এবার কত পরিমাণ হয়, তা নিয়ে সংশয় বেড়ে চলেছে।
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফোরাম অব স্মল টি গ্রোয়ার্স’-এর চেয়ারম্যান রজত কার্জি বলেন, “ফার্স্ট ফ্ল্যাশ ও সেকেন্ড ফ্ল্যাশ মার খেয়ে আশা ছিল আবহাওয়ার উন্নতি হবে। থার্ড ফ্ল্যাশে ঘাটতি মিটে যাবে। কিন্তু সেটা হয়নি। উলটে লোকসান বেড়েছে। এই পরিস্থিতি আরও কিছুদিন চললে অনেকে চা বাগান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন। কারণ, চা গাছ রক্ষা করতে ক্রমশ খরচ বাড়ছে। কিন্তু রোজগার নেই।” ক্ষুদ্র চা চাষিদের অভিযোগ, লুপার ঠেকাতে অনেক কীটনাশক ব্যবহার করেছেন। লাভ হচ্ছে না। ময়নাগুড়ির রামশাই এলাকার চা চাষি মানিক সরকারও অভিযোগের সুরে বলেন, “ওষুধ কিনতে দামের জন্য মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.