Advertisement
Advertisement

Breaking News

North Bengal

উত্তরে টানা ভারী বৃষ্টি অমিল, অসময়ে বীজতলা শুকিয়ে বিপাকে আমন ধানচাষিরা

বৃষ্টি ছাড়া পরিস্থিতি মোকাবিলার বিকল্প কোনও পথ নেই, জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

Paddy fielders of North Bengal in trouble due to lack of rain

জলের অভাবে শুকিয়ে গিয়েছে মাঠ। নিজস্ব চিত্র

Published by: Suhrid Das
  • Posted:July 9, 2025 5:11 pm
  • Updated:July 9, 2025 5:11 pm  

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: প্রখর রোদে পুড়ছে গোটা উত্তরবঙ্গ। ভরা বর্ষায় একটানা ভারী বৃষ্টির দেখা নেই। সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ ৩৫ ডিগ্রি থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। বিপাকে উত্তরের কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিং জেলার ধানচাষিরা। জলের অভাবে উঁচু জমিতে ধান চারা বুনতে পারছে না তাঁরা। এদিকে নিচু জমিতেও জল নেই।

Advertisement

জুনের মাঝামাঝি থেকে বর্ষাকালীন বৃষ্টি বিদায় নিয়েছে উত্তরে। মৌসুমী বায়ু শক্তি সঞ্চয় করে এবার তেমন সক্রিয় হতে পারেনি। পরিণতিতে অনাবৃষ্টির কবলে পড়েছে পাহাড়-সমতল। স্থানীয় স্তরে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরির কারণে বিক্ষিপ্তভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি কমলেই প্রখর রোদের তেজে জল শুকিয়ে যাচ্ছে। ওই পরিস্থিতিতে উত্তরের চার জেলার আমন ধান চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। বীজতলা শুকিয়ে যাচ্ছে। যারা ঝুঁকি নিয়ে ধানচারা বুনেছেন, তাঁদের জমিতে জল নেই। বিঘার পর বিঘা জমি শুকিয়ে যাচ্ছে। উঁচু জমির জল শুকিয়েছে আগেই। এখন নিচু জমিতেও জলের টান ধরেছে। কৃষিকর্তাদের শঙ্কা, ১০-১২ দিনের মধ্যে ভারী বর্ষণ না হলে ধানের উৎপাদন মার খাবে। কিন্তু কবে থেকে শুরু হবে ভারী বর্ষণ? এই বিষয়ে আবহাওয়া দপ্তর আশার আলো দেখাতে পারেনি। উলটে তাপমাত্রা বেড়ে চলার সতর্কতা জারি হয়েছে।

কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার,  জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি মহকুমায় ব্যাপক হারে আমন ধানের চাষ হয়। ধান চাষের এলাকার পরিমাণ প্রায় ৫ লক্ষ হেক্টর। ভালো বৃষ্টি হলে বিঘা প্রতি জমি থেকে ১৫ মন ধান মেলে। এক হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে সাড়ে ৪ টন ধান। কিন্তু এবার ধান চাষের মরশুমের শুরু থেকে বিপত্তি ঘনিয়েছে। বর্ষা এবার অনেকটা আগে ঢুকেছে উত্তরে। শুরুতে অতিবর্ষণ হলেও পরে অনাবৃষ্টির জন্য জলের টান ধরেছে। ওই পরিস্থিতিতে কৃষকরা সময়মতো ধানের চারা রোপণ করতে পারছে না।

Paddy fielders of North Bengal in trouble due to lack of rain
ভরা শ্রাবণে ভারী বৃষ্টির দেখা নেই। নিজস্ব চিত্র

আলিপুরদুয়ার জেলায় ১ লক্ষ ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়ে থাকে। জলের অভাবে এবার জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহেও অর্ধেক জমিতে ধান চারা রোপণ করা সম্ভব হয়নি বলে খবর। যে চারা রোপণ হয়েছে, জলের অভাবে সেগুলিও শুকিয়ে যাচ্ছে। চারা হলুদ হতে শুরু করেছে। কৃষিকর্তারা জানান, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এখন পর্যাপ্ত বৃষ্টি প্রয়োজন। না হলে ধানের উৎপাদন কমবে। কোচবিহার জেলায় আমন ধান চাষের এলাকা প্রায় ২ লক্ষ ১১ হাজার হেক্টর। এখানেও উঁচু জমির খেত শুকিয়েছে। দার্জিলিং জেলার সমতল এলাকা শিলিগুড়ি মহকুমায় প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়ে থাকে। সেখানেও একই পরিস্থিতি। জলপাইগুড়িতে আমন ধান চাষের এলাকা প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার হেক্টর।

জেলার কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের কোঅর্ডিনেটর বিপ্লব দাস জানান, বৃষ্টি ছাড়া পরিস্থিতি মোকাবিলার বিকল্প কোনও পথ নেই। একই আর্তি চাষিদের গলায়। জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ব্লকের উত্তর মাধবডাঙা গ্রামের চাষি গৌরাঙ্গ শর্মা বলেন, “জলের অভাবে গ্রামের প্রত্যেকের ধানখেতের মাটি শুকিয়েছে। ধানচারা হলুদ হচ্ছে। বৃষ্টি না হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।” কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের সিকিম কেন্দ্রের অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা জানান, মৌসুমি বাতাসের অক্ষরেখা অনেকটা নিচে নেমেছে। উপরে না ওঠা পর্যন্ত একটানা ভারী বৃষ্টি মিলবে না। বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ থাকায় সমস্যা আরও জটিল হয়েছে।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement