বাবুল হক, মালদহ: আমের জেলায় আনারস! ফি বছর বাড়ছে চাষের জমির পরিধি। বাড়ছে ফলন। এই বিকল্প চাষে লক্ষ্মীলাভ করছেন মালদহের কৃষকরা। আমের জেলা মালদহে এই মরশুমেও ব্যাপক ফলন হয়েছে আনারসের। উৎপাদিত আনারস এখন পাড়ি দিচ্ছে দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি ওড়িশায়। ওড়িশা থেকে পাইকাররা মালদহে এসে লরিবোঝাই আনারস নিয়ে পাড়ি দিচ্ছেন। এতেই বাড়তি উপার্জন, লক্ষ্মীলাভ। খুশি মালদহের আনারস চাষিরা। বছর দশেক আগে আমের জেলায় আনারসের চারা পুঁতে প্রথমে পথ দেখিয়েছে জেলার বরেন্দ্রভূমি ব্লক বামনগোলা। তারপর এক এক করে হবিবপুর, ওল্ড মালদহ, গাজোল, রতুয়া-সহ শুষ্ক মাটির ব্লকগুলিতে চাষ শুরু হয়।
উদ্যান পালন দপ্তর সূত্রে খবর, চলতি বছরেই জমির পরিধি বেড়েছে প্রায় ৮০০ বিঘা। এবার মালদহের বামনগোলা ও হবিবপুর ব্লকের প্রায় ১৭০০ বিঘা জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। বছর কয়েক আগে চাষির সংখ্যাটা ছিল খুবই নগন্য। এখন চাষির সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। বামোনগোলা ব্লকের নালাগোলার বাসিন্দা নবদ্বীপ দেবনাথ আনারস চাষ করছেন দীর্ঘদিন ধরেই। লাভ হচ্ছে ভালোই। বর্তমানে তিনি সাত বিঘা জমিতে আনারস চাষ করছেন। তাঁর কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে এলাকার অনেকেই আনারস চাষ করছেন।
মালদহের জেলা উদ্যান পালন দপ্তরের উপ-অধিকর্তা সামন্ত লায়েক জানিয়েছেন, আমের জেলা মালদহে আনারস ফলবে সেটা কেউই ভাবতে পারেননি। উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি, চোপড়া ও ইসলামপুর এলাকায় মূলত আনারস চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু মালদহের শুষ্ক জমিতে কেউ আনারস চাষ করার উদ্যোগ নিতেন না। পরে উদ্যান পালন দপ্তর এই বিষয়ে চাষিদের পরামর্শ দেওয়া শুরু করে। আনারস উৎপাদনের ক্ষেত্রে বামনগোলা, হবিবপুর, গাজোল, ওল্ড মালদহ ও রতুয়া ব্লকের মাটি যে উপযুক্ত, তা সরকারিভাবে প্রচার করা হয়। এক এক করে চাষিরা এগিয়ে আসেন। আনারস চাষ শুরু করেন। এখন বামনগোলা এবং হবিবপুর ব্লকে আনারস চাষ খুব ভালো হচ্ছে। গাজোল, রতুয়া ও ওল্ড মালদহ ব্লকে আনারস চাষ শুরু করা হয়েছে। চাষিদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। চাষিদের আগ্রহ ব্যাপক হারে বাড়ছে। এই মরশুমেও আনারসের ভালো ফলন হয়েছে।
এখন জোরকদমে চলছে জমি থেকে আনারস তোলার কাজ। বামনগোলায় তৈরি হয়েছে আনারসের আড়ত বা পাইকারি বাজার। চাষিদের কাছ থেকে পাইকাররা সেই আড়ত থেকে নায্যমূল্যে আনারস কিনে নিয়ে বাইরে পাঠাচ্ছেন। কৃষকরা জানান, রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় আনারস চাষ চলছে। এখানে ‘জায়েন্ট কিওর’ জাতের আনারস চাষ হচ্ছে। সামান্য খরচ। শিলিগুড়ি থেকে ৫-৬ টাকা দরে চারা আনছেন। এক বছরে মধ্যে আনারস চাষ করা সম্ভব হচ্ছে। ৪০-৫০ টাকা করে আনারস বিক্রি হচ্ছে বাজারে। এই চাষে রোগ-পোকার আক্রমণ সহজে হয় না। উদ্যান পালন দপ্তরের উপ-অধিকর্তা সামন্ত লায়েক বলেন, “এক বছরের মধ্যে ৮০০ বিঘা জমিতে নতুন করে আনারস চাষ হচ্ছে। পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। গত বছর জমির পরিমাণ ছিল ৯০০ বিঘা। এবারে তা বেড়ে হয়েছে ১৭০০ বিঘা। প্রায় এক হাজার চাষি এখন আনারস চাষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। আমরা চাষিদের বোঝাচ্ছি যে, মালদহের মাটিতেও আনারস চাষ করা সম্ভব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.