সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কাজ শুরু করে দিল বহু প্রতীক্ষিত চাবাহার বন্দর। ভারতের আর্থিক সহায়তায় ইরানের এই বন্দর ব্যবহার করে এই প্রথম আফগানিস্তানে গম পাঠাল ভারত। রবিবার কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রক এই প্রেস বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই প্রথম নয়া রুট ব্যবহার করে আফগানিস্তানে গম পাঠান হল। ভবিষ্যতে এই পথেই অন্যান্য সামগ্রীও পাঠানো হবে। ভারত, ইরান ও আফগানিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যের নয়া দিগন্ত খুলে দেবে এই বন্দর, আশাবাদী বিদেশমন্ত্রক। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের উপস্থিতিতে প্রথম দফার পণ্য পাঠানো হয়। যৌথ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেই মুহূর্তের সাক্ষী ছিলেন আফগান বিদেশমন্ত্রী সালাহাউদ্দিন রাব্বানিও।
Thanks to 4 the 1st wheat shipment flagged off from to via . Grateful to for their partnership.
Advertisement— M. ASHRAF HAIDARI (@MAshrafHaidari)
কৌশলগত কারণে ও কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, চাবাহারের মধ্যে দিয়েই ভারত আর্থিক, সামরিক ও বাণিজ্যিক দিক দিয়ে আফগানিস্তানে নিজেদের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চায়৷ এই চাবাহার বন্দরের সাহায্যেই ভারত চিনের আর্থিক ও পরিকাঠামোগত সাহায্যে নির্মিত পাকিস্তানের গ্বদর বন্দরের প্রভাবও খর্ব করতে চায় কেন্দ্র৷ মুখে এ কথা স্বীকার না করলেও অত্যন্ত গোপনে প্রবল তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। চিনের আর্থিক সাহায্য ও অতি আগ্রহে তৈরি হচ্ছে পাকিস্তানের গ্বদর বন্দর৷ আরব সাগরের তীরে বালুচিস্তানে নির্মীয়মাণ গ্বদর বন্দরের কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে৷ পাক-চিন সড়ক যোগাযোগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধি, চিনের কাশগড় থেকে সড়ক মারফত বিপুল চিনা পণ্য, সামরিক সরঞ্জাম, সেনাবাহিনী, সাঁজোয়া গাড়ি অতি দ্রুত বালুচিস্তানের মধ্য দিয়ে গ্বদর বন্দরে নিয়ে আসার কাজ সহজ ও দ্রুততর হবে চিনের পক্ষে৷ এই কথা বিলক্ষণ জানেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর তাই গ্বদর বন্দরের পালটা চাবাহার বন্দরকে দ্রুত ‘অপারেশনাল’ করে তুলতে চাইছিলেন তিনি। এই কাজে তৎপরতা আসে যখন মার্কিন সচিব রেক্স টিলারসন ভারতে এসে এই ভারত-ইরান নিবিড় সম্পর্কে সম্মতি জানান। এমনিতে তেহরানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক তেমন ভাল নয়। কিন্তু ভারতের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যিক ও সামরিক পদক্ষেপে আমেরিকা কোনওভাবে আপত্তি জানাবে না বলে স্পষ্ট করেন টিলারসন। বরং আফগানিস্তানের উন্নয়নে সাহায্য করায় ভারতের প্রশংসা করেন তিনি। ঐতিহাসিক এই মুহূর্তে টুইট করে আফগানিস্তান ও ইরানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিন দেশের মধ্যেই সম্পর্কের বুনিয়াদকে আরও দৃঢ় করে তুলতে আন্তরিক উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন তিনি।
EAM flags off first shipment of wheat from India to Afghanistan through Chabahar port, Iran & Afghanistan joined the ceremony.
— Raveesh Kumar (@MEAIndia)
তবে ভারতের এই সাফল্যে ‘হিংসায়’ জ্বলছে পাকিস্তান। নয়াদিল্লির এই পদক্ষেপ আগে থেকে আঁচ করতে পারলেও প্রথমে তেমন আমল দেয়নি বেজিং ও ইসলামাবাদ৷ কিন্তু এখন চাবাহার বন্দর চালু হয়ে যাওয়ায় এখন পাকিস্তানের টেনশন ও মাথাব্যথার কারণ হয়ে গিয়েছে৷ কারণ, তাদের গ্বদর বন্দরের খুব কাছে, মাত্র একশ কিলোমিটারের মধ্যে তৈরি হয়েছে চাবাহার। এই বন্দরের সাহায্যে বালুচিস্তানে পাকিস্তান বিরোধী জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী হিংসায় মদত দেবে ভারতের গুপ্তচর সংস্থা ‘রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং’৷ এমনটাই মনে করছে ইসলামাবাদ৷ পাকিস্তান মনে করে, চাবাহার বন্দর চালু হতেই ভারত গ্বদর বন্দরের প্রভাব খর্ব করতে উঠে পড়ে লাগবে৷ গ্বদরের সঙ্গে চিনের কাশগড় অবধি সংযোগকারী আন্তর্জাতিক হাইওয়ে তথা সিল্ক রুট ধ্বংস করতে বিরতিহীনভাবে নাশকতা চালাবে ভারতীয় চররা৷ পাকিস্তান মনে করে, আরব সাগরে বাণিজ্যিক ও সামরিক প্রাধান্য বজায় রাখতে ইরানের চাবাহারকে ‘বেস’ করে চিনের নৌবাহিনী, পাকিস্তানের নৌবাহিনীর সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে যেতে চলেছে ভারতীয় নৌসেনা৷ কারণ আরব সাগর, ওমান উপসাগর, পারস্য উপসাগর ও ভারত মহাসাগরে যে কোনও মূল্যে আধিপত্য বজায় রাখতে চায় দিল্লি৷
EAM flags off first consignment of wheat from to
LIVE:
— Doordarshan News (@DDNewsLive)
এই একাধিপত্য হারালে মুম্বই, কান্দলা, ম্যাঙ্গালোর, কোচি-সহ পশ্চিম ভারতের ২০টি ছোট বড় বন্দর মারফত ভারতের পণ্য চলাচল ও পরিবহণ ব্যাপক মার খাবে৷ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কয়েক হাজার কোটি ডলারের রাজস্ব হারাবে ভারত৷ একইসঙ্গে আফগানিস্তানে ভারতের রাজনৈতিক ও সামরিক প্রভাব নষ্ট হবে৷ পাকিস্তানের আইএসআই ও চিনের গোপন সামরিক কাজকর্মের বিরুদ্ধে তাজিকিস্তানে, আফগানিস্তানে ভারত যে গোপন সামরিক কৌশলগুলি নিচ্ছে তাও নষ্ট হয়ে যাবে৷ তাই চিন-পাক যুগলবন্দি রুখে দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রাখতে ভারত চাবাহারকে যে কোনও মূল্যে চালু করে দিতে চাইছিল। ভারতের উদ্যোগকে স্বাগত জানায় ইরানের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ও প্রেসিডেন্ট রুহানির৷ ইরান জানিয়েছে, তাদের বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচির বিরুদ্ধে গোটা দুনিয়া যখন এককাট্টা হয়েছিল এবং অবরোধ জারি করে ইরানের আর্থিক অবস্থা বেহাল করে দিয়েছিল তখন তাদের আদি অকৃত্রিম বন্ধু ভারত দুনিয়াকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তাদের কাছে কয়েক কোটি ডলারের তেল কিনেছে৷ তাদের অসামরিক পরমাণু কর্মসূচির বিরুদ্ধে ভারত কোনওদিন অভিযোগ করেনি৷ উল্টে আমেরিকা, রাষ্ট্রসংঘ-সহ পশ্চিমি দুনিয়ার সঙ্গে সম্মানজনক আলোচনায় ইরানের হয়ে মধ্যস্থতা করেছে ভারতই৷ শুধু তাই নয়, বিশ্বের অন্যতম শিয়া মুসলিম দেশ ইরানের সঙ্গে নয়াদিল্লির সুসম্পর্ক ৬০ বছরের৷
Congratulations: & jointly flagged off the first shipment from to through ‘s .
— GMIC Afghanistan (@GMICafghanistan)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.