সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পহেলগাঁও হামলার পর শুরু হচ্ছে অমরনাথ যাত্রা। তাই বাড়তি সতর্ক প্রশাসন। আর সেই জন্য পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা দিতেই ১২০০ জওয়ানকে উত্তরপূর্বের একাধিক রাজ্য থেকে কাশ্মীরে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে কেন্দ্র। সেই প্রস্তুতিতেই এবার মুখ পুড়ল কেন্দ্রীয় সরকারের। সৌজন্যে ভারতীয় রেলের নোংরা, অতি পুরনো জরাজীর্ণ কোচ। যে ভিডিও ইতিমধ্যেই সোশাল মিডিয়াতে ভাইরাল। আর তার জেরেই ভারতীয় রেলের যাত্রী সুরক্ষা ফের প্রশ্নের মুখে। আর সেই ট্রেন আবার সাধারণ ট্রেন নয়। কারণ, ওই ট্রেনেই পাঠানো হয়েছিল বিএসএফ জওয়ানদের। এই ঘটনায় বরখাস্ত করা হয়েছে আলিপুরদুয়ারের কোচিং ডিপোর চার কর্মকর্তাকে।
অপারেশন সিঁদুর-এর পর যখন একাধিক প্রশ্নে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে বিজেপির সম্মান জানানো নিয়ে বিতর্কের পাশাপাশি প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, তখন জওয়ানদের জন্য যে ট্রেনের কামরা বরাদ্দ করা হয়েছে, তার ছবি দেখে আঁতকে উঠতে শুরু করেছে গোটা দেশ। মুখ খুলেছে বিএসএফ। এই ঘটনার কড়া নিন্দা করা হয়েছে।
সংবাদ সংস্থার খবর, বিতর্কের সূত্রপাত কয়েকটি ছবি আর ভিডিওকে কেন্দ্র করে। বিএসএফ জওয়ানরা যখন অমরনাথ যাত্রীদের প্রাণ বাঁচাতে কাশ্মীরের উদ্দেশে রওনা দেন তখন তাঁদের কেমন ট্রেন দেওয়া হয়েছিল তার ফুটেজ প্রকাশ করেছেন জওয়ানরা। আর সেখানেই দেখা গিয়েছে ভয়াবহ দৃশ্য। বিএসএফ জওয়ানরা ট্রেনের যে কামরায় ওঠেন, সেখানকার সিট ছেঁড়া। সেই সঙ্গে কামরায় লাগানো দরজা কোথাও ঝুলছে, আবার কোথাও ছাদে রয়েছে মস্ত গর্ত। একদিকে ৭২ ঘণ্টারও বেশি ট্রেন লেট। আর তার মধ্যেই নোংরা, জরাজীর্ণ ট্রেনের তীব্র নিন্দা করল বিএসএফ। অমরনাথ যাত্রা উপলক্ষে দেশের উত্তরপূর্ব প্রান্ত থেকে জম্মু-কাশ্মীরে যাচ্ছেন ১২০০ বিএসএফ জওয়ান। যে ট্রেনে ওই ১২০০ জওয়ানকে তোলা হয়, তার পরিস্থিতি দেখলে আঁঁতকে উঠবে সাধারণ মানুষ। কোচগুলিতে তেলাপোকা।
শৌচাগারের অবস্থা শোচনীয়। তার উপর ময়লা। কোথাও কোনও পরিষ্কারের বালাই নেই। একজন কমান্ড্যান্ট-স্তরের কর্মকর্তার জন্য উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের এমন ট্রেন বরাদ্দ করা হয়েছিল কেন, এ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন জওয়ানরা। বিএসএফ আধিকারিক জানিয়েছেন, অমরনাথ যাত্রার জন্য সিএপিএফ স্পেশাল ট্রেন অনেক আগেই চাওয়া হয়েছিল। ওই কোচ ৬ জুন উদয়পুর রেলস্টেশনে (ত্রিপুরা) রাখার কথা ছিল। তবে, ৭২ ঘণ্টা বিলম্বের কারণে ওই ট্রেন ৯ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ উদয়পুর স্টেশনে রাখা হয়। মঙ্গলবার আগরতলা স্টেশন ম্যানেজারকে লেখা এক চিঠিতে ওই আধিকারিক বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশ অনুসারে পুরো ব্যাটালিয়নকে ১২ জুনের মধ্যে অমরনাথ যাত্রায় মোতায়েন করার কথা ছিল।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের প্রধান জনসংযোগ আধিকারিক কে কে শর্মা বলেছেন, “ভিডিওগুলিতে দেখা কোচগুলি রক্ষণাবেক্ষণের উদ্দেশ্যে সংযুক্ত করা হয়েছিল। ওগুলি যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য নয়। কিছু সিএপিএফ (সেন্ট্রাল আর্মড পুলিশ ফোর্সেস) কর্মী ভুল করে ওই কোচগুলিতে উঠে পড়েছিলেন। যার ফলে আগরতলায় ট্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল।”
বিএসএফ আধিকারিক জানিয়েছেন, কোচগুলি এতটাই খারাপ অবস্থায় ছিল যে এর থেকে স্পষ্ট, কয়েক মাস ধরে সেগুলি ব্যবহার করা হয়নি। শুক্রবার বাহিনীর উত্তর-পূর্ব সীমান্ত ত্রিপুরা, গুয়াহাটি, মিজোরাম এবং অসম থেকে ১৩ কোম্পানি পাঠানোর কথা ছিল। যার মধ্যে প্রায় ১৩০০ জওয়ান ছিলেন। ৩ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে অমরনাথ যাত্রা। শেষ হবে ৯ আগস্ট। শ্রীঅমরনাথ স্রাইন বোর্ড জানিয়েছে, ৩৮৮০ মিটার উঁচু অমরনাথ গুহায় উদ্দেশে যাত্রা আগামী ৩ জুলাই শুরু হবে। শেষ হবে ৯ আগস্ট। এই যাত্রা দুটি পথে করা যেতে পারে। একটি দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগের পহেলগাঁও হয়ে ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ। অপরটি মধ্য কাশ্মীরের গান্দেরবালের ১৪ কিলোমিটার ছোট কিন্তু খাড়া বালতাল রুট।
এই ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন খোদ রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। তিনি বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর মর্যাদা এবং সুবিধা সর্বাগ্রে। এ ধরনের অবহেলা কোনওভাবেই সয্য করা হবে না। এই গাফিলতির জন্য আলিপুরদুয়ারের চার কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই কর্মকর্তারা হলেন আলিপুরদুয়ার কোচিং ডিপোর অফিসার এবং আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের তিনজন সিনিয়র সেকশন ইঞ্জিনিয়ার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.