ফাইল ছবি
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেশের সংবিধান থেকে মুছে ফেলা হোক ‘সমাজতান্ত্রিক’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দ দুটি। সংঘের সুরে সুর মিলিয়ে এবার কেন্দ্রের কাছে এই দাবি রাখলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। কেন এই শব্দ দুটি সংবিধান থেকে বাদ দেওয়া উচিত সে বিষয়ে যুক্তিও পেশ করেছেন হিমন্ত।
শনিবার বিজেপির সদর দপ্তরে ‘দ্য এমার্জেন্সি ডায়েরিজ’ নামে এক বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন হিমন্ত। সেখানেই বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, “‘সমাজতান্ত্রিক’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দ দুটি মূল সংবিধানের অংশ কখনই ছিল না। ফলে এই শব্দদুটি অপসারণ করা উচিত। যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা শব্ধটি ভারতীয় সর্বধর্ম সমন্বয়ের ধারনার বিরুদ্ধে। এবং সমাজতন্ত্র কখনই ভারতের মূল অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির অংশ নয়।” শুধু তাই নয়, সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি আরও বলেন, জরুরি অবস্থার ভয়াবহ অতীত ও তার বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম নিয়ে বই প্রকাশ করা হয়েছে। ফলে জরুরি অবস্থার পরবর্তী প্রভাব মুছে ফেলার এটাই সঠিক সময়। জরুরি অবস্থার সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সংবিধানে এই দুই শব্দ যোগ করেছিলেন যা ভারতীয় ধারনার বিরুদ্ধে। ফলে তা সরানো করা হোক।
উল্লেখ্য, এর আগে এই ইস্যুতে সরব হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান। তিনি বলেন, ”এমার্জেন্সির সময় ‘সমাজতান্ত্রিক’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দ দু’টি যোগ করা হয় ভারতীয় সংবিধানে। এগুলি সংবিধানের মূল প্রস্তাবনায় ছিল না। পরে এই শব্দগুলি আর সরানো হয়নি। এগুলিকে সরানো হবে কিনা তা নিয়ে অবশ্যই বিতর্ক হওয়া দরকার। এমার্জেন্সির সময় অধিকার ছিল না, ন্যায়বিচার ছিল না। সেই সময়ই এই শব্দগুলি যোগ করা হয়।” একইসঙ্গে তিনি বলেন, ”ভারতে সমাজতন্ত্রের কোনও প্রয়োজন নেই। ধর্মনিরপেক্ষতা আমাদের সংস্কৃতির মূলও নয়। তাই এই বিষয়ে অবশ্যই আলোচনা হওয়া দরকার।” পাশাপাশি একই কথা শোনা গিয়েছে, আরএসএসের সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেয় হোসাবলের গলায়।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৬ সালে ইন্দিরা গান্ধী সরকারের আনা সংশোধনীর ফলে সংবিধানের প্রস্তাবনায় যুক্ত হয়েছিল দু’টি শব্দ। যার ফলে ভারত ‘সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র’ থেকে ‘সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র’-এ পরিণত হয়। এর আগের বছর দেশব্যাপী জারি হয়েছিল জরুরি অবস্থা। সেই সময় নির্বাচনে অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে এলাহাবাদ হাইকোর্ট তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল। এবং ছয় বছরের জন্য তাঁকে সংসদ থেকে বহিষ্কার করেছিল। এরপরই জরুরি অবস্থার ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। সাংবিধানিক অধিকার এবং নাগরিক স্বাধীনতা স্থগিত হয়েছিল। সংবাদমাধ্যমকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা শুরু হয়। এবছর ৫০ বছর পূর্ণ করল এমার্জেন্সি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসের অন্যতম কালো অধ্যায়’ বলে এমার্জেন্সির সমালোচনা করে কংগ্রেসকে তোপ দেগেছিলেন। প্রতি বছর এই দিনটা ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে বিজেপি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.