সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: এক অভূতপূর্ব ঘোষণায় অসম সরকার রাজ্যের সংখ্যালঘুপ্রধান, অরক্ষিত ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসী নাগরিকদের ঢালাও অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশ এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সম্প্রদায়গুলিকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য একটি বিশেষ প্রকল্পের আওতায় এই পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। যদিও বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এভাবে সরকার নির্দিষ্ট কোনও গোষ্ঠীর হাতে অস্ত্র তুলে দিতে পারে কি না, তা নিয়ে একদিকে প্রশ্ন উঠেছে। অন্যদিকে, এই ঘটনায় রাজ্য সরকার তথা প্রশাসনের ব্যর্থতাই প্রকট হল বলে মনে করছে অনেকে। কারণ, নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া প্রশাসনের কাজ। তারা সেটা পারছে না বলেই নাগরিকদের হাতে অস্ত্র তুলে দিতে হচ্ছে। অসম সরকারের এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে তৃণমূল কংগ্রেসও।
মূলত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় যে ভূমিপুত্ররা থাকেন, তাঁদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই অসম সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে দাবি। অসমের যে সমস্ত প্রত্যন্ত এলাকায় বা উত্তেজনাপ্রবণ এলাকায় অসমের ভূমিপুত্ররা ক্রমাগত হুমকির মুখে পড়ছেন, তাঁদের নিরাপত্তার জন্য মন্ত্রিসভা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অসমের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। কিন্তু ঠিক কী ধরনের হুমকির মুখে বা বিপদের মুখে ওই ভূমিপুত্ররা পড়ছেন, তা স্পষ্ট করা হয়নি অসম সরকারের তরফে। জানা গিয়েছে, ধুবড়ি, নগাঁও, মরিগাঁও, বরপেটা, দক্ষিণ শালমারা এবং গোয়ালপাড়ার মতো জেলায় এই প্রকল্প চালু হবে। প্রসঙ্গত, এই সমস্ত জেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা বেশি। এবং তাঁদের ‘বাংলাদেশি’ তকমা দেওয়ার চক্রান্ত চলছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। তবে এই লাইসেন্স পেতে বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। কোন এলাকার বাসিন্দা সেটা যেমন খতিয়ে দেখা হবে, তেমনই ওই ব্যক্তির কোনও অপরাধের রেকর্ড থাকাও চলবে না।
যদিও তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেব রাজ্য সরকারের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর কথায়, “সরকারের সিদ্ধান্তে প্রমাণিত হচ্ছে যে, অসম পুলিশ ও বিএসএফ সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। তাই অস্ত্র হাতে তুলে দিয়ে বলছে, তোমরা নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করো। এটা কোনও সরকারের অস্ত্রনীতি হতে পারে না। কারণ, হাতে অস্ত্র পেয়ে নিরাপত্তার নামে যখন খুশি কাউকে খুন করার অবাধ অনুমতি দেওয়া যায় না। ডবল ইঞ্জিন সরকার নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।” পাশাপাশি, রাজ্যের আদি বাসিন্দার কোনও সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা আজও নির্ধারিত হয়নি বলে দাবি করে সুস্মিতার মত, কয়েক মাস পর অসমে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে হিমন্ত নানা ধরনের চমক দিতে চাইছেন।
এর আগে একাধিকবার অসমের মুখ্যমন্ত্রীর মুখে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক মন্তব্য শোনা গিয়েছে। অসমে লাগাতার বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ চলছে বলেও অভিযোগ করেছিলেন। এমনকী এর জন্য অসমের জনবিন্যাস বদলে যাচ্ছে বলেও দাবি করেছিলেন তিনি। এ বার সরাসরি অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার কথা বললেন। রাজ্যের বিশেষ বিশেষ এলাকায় ভূমিপু্ত্রদের অত্যাচারিত হওয়ার কথা বলে, সরাসরি অস্ত্রের লাইন্সেস দেওয়ার সিদ্ধান্ত কি আরও সাম্প্রদায়িক অশান্তির পথে ঠেলে দেবে অসমকে? উঠছে প্রশ্ন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.