সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিজেপি বাংলায় ঘুরপথে এনআরসি চালু করতে চাইছে বলে যখন তৃণমূল কংগ্রেস পথে নেমেছে তখন ফের ওড়িশার ঝারসুগুড়ায় বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর চড়াও হল প্রশাসন। সম্প্রতি বিজেপি শাসিত ওড়িশা সরকার পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলার অন্তত ২০০ জন পরিযায়ী শ্রমিককে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটক করেছে। সমস্ত বিজেপিশাসিত রাজ্যেই এইভাবে বাংলাভাষী শ্রমিকদের বাংলাদেশি সন্দেহে গ্রেপ্তার করে ‘পুশব্যাক’ করার চেষ্টা চলছে।
উত্তম ব্রজবাসী নামে দিনহাটার এক ব্যক্তিকে অসম সরকার বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে তলব করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনায় ক্ষোভপ্রকাশ করে জানিয়েছেন, বাংলাভাষীদের মুছে ফেলার ষড়যন্ত্রে নেমেছে বিজেপি। বাংলার বিরুদ্ধে এটি একটি বড় চক্রান্ত। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে পারবে না বুঝে বিজেপি ঘুরপথে বাংলায় এনআরসি চালুর চেষ্টা করছে। বুধবার কোচবিহারের সর্বত্র দিনহাটার ঘটনা নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে তৃণমূল। এর মাঝেই ঘটে গিয়েছে ওড়িশার ঘটনাটি।
এ প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম। ‘এক্স’ হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, “ফের বাংলাভাষী শ্রমিকদের উপর বর্বরতা চালাচ্ছে বিজেপি শাসিত ওড়িশা সরকার। মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, মালদহ, নদিয়া, পূর্ব বর্ধমান ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে যাওয়া শ্রমিকদের শুধু বাংলা বলার অপরাধে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করা হয়েছে।” তিনি সরাসরি প্রশ্ন তোলেন, “বাংলা বলা কি অপরাধ? এই গরিব মানুষগুলোর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর এত রাগ কেন?” সম্প্রতি ঝাড়সুগুড়া পুলিশ ৪৪৪ জন পরিযায়ী শ্রমিককে আটক করেছে। বুধবার এ প্রসঙ্গে তৃণমূলে রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “বাংলায় কথা বললেই হেনস্তা। এটা একটা বাজে জায়গায় যাচ্ছে। নথি দেখালেও কেন এই সব করা হচ্ছে। এনআরসি-প্রতিবাদের মাঝেই বহিরাগত বলে আক্রমণ করা হচ্ছে। বিএসএফের হাতে দেওয়া হচ্ছে। তারা আবার বলছে ফিরতে চাইলে গুলি করব।”এই ঘটনা নতুন নয় বলেই তাঁর অভিযোগ। সামিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, আগেও বহু শ্রমিককে একইভাবে আটক করা হয়েছিল, অথচ কেন্দ্র বা ওড়িশা সরকার তাঁদের অভিযোগকে গুরুত্ব দেয়নি। এবার তাই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য সরকার। তৃণমূল সাংসদের দাবি, বাংলার মুখ্যসচিব ইতিমধ্যেই ওড়িশার মুখ্যসচিবকে চিঠি লিখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি আরও জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলার মানুষ যদি অন্য রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে এই ধরনের হয়রানির শিকার হন, তাহলে সরকার চুপ করে বসে থাকবে না। সামিরুল হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “এই বর্বরতা বন্ধ না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।”
ঘটনার নেপথ্যে রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে বলে অভিযোগ তৃণমূল নেতৃত্বের। তাঁদের প্রশ্ন, আদৌ কি প্রশাসনিক তদন্ত হয়েছে, নাকি শুধুমাত্র ভাষা বা পরিচয়ের ভিত্তিতে এই শ্রমিকদের নিশানা করা হচ্ছে? বাংলা থেকে হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক বিভিন্ন কাজে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যান। তাঁদের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় এবার রাজ্য সরকার যে আরও সক্রিয় হচ্ছে, তার ইঙ্গিত স্পষ্ট করে দিয়েছে এই পদক্ষেপ।
পাশাপাশি, পড়শি রাজ্য ওডিশায় আটকে নদিয়ার ২৩ জন শ্রমিক। ‘বেআইনিভাবে’ তাঁদের আটকে রাখার অভিযোগ তুলে এক্স হ্যান্ডলে সরব নদিয়ার কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তৃণমূল সাংসদ লেখেন, ‘নবীন পট্টনায়েক যখন ওড়িশার মসনদে ছিলেন, কোনও দিন এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। অথচ এখন প্রতিনিয়ত এমনটা ঘটছে।’ কৃষ্ণনগর লোকসভার অন্তর্গত কালীগঞ্জের পানিঘাটা গ্রামপঞ্চায়েতের মির্জাপুরের ২৩ জন বাঙালি শ্রমিক ওডিশায় কাজে গিয়েছিলেন। প্রত্যেকের কাছে বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। অথচ তার পরেও বেআইনি ভাবে তাঁদের ঝাড়সুগুদায় ওরিয়েন্ট থানার পুলিশ আটকে রেখেছে। এ দিন মহুয়া বলেন, “শতাধিক বাঙালি শ্রমিককে আটক করা হয়েছে। তার মধ্যে ২৩ জন আমার এলাকার।” তিনি আরও জানান, নদিয়ার পুলিশ সুপার ইতিমধ্যেই ঝাড়সুগুদার পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের তরফে জানানো হয়েছে, কাগজপত্রে কিছু ত্রুটির কারণে এই আটক। মহুয়ার বক্তব্য, “২৩ জনেরই বৈধ নথি রয়েছে। আধার কার্ড-সহ যা যা নথি কাজ করতে গেলে সঙ্গে থাকা দরকার, ওই শ্রমিকদের কাছে সবই রয়েছে। এ দেশের প্রতিটা নাগরিকের অধিকার রয়েছে, দেশের অন্য রাজ্যে যাওয়ার। তা বসবাসের জন্য হোক বা পেটের তাগিদে।”
সংবাদে প্রকাশ, পুলিশ আটক ব্যক্তিদের নথি যাচাই করছে, যাদের মধ্যে অনেকেই জেলার বিভিন্ন অংশে শ্রমিক, রাজমিস্ত্রি, হকার এবং ঘর রং করার কাজ করতেন। রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপটি দেশে অবৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশী নাগরিকদের সনাক্ত করার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে শুরু হওয়া বৃহত্তর অভিযানের অংশ বলে জানিয়েছে ওড়িশা সরকার। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং ওড়িশা সরকারের জারি করা নির্দেশিকা মেনে তাদের নথি যাচাইও করা হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, “এই ব্যক্তিরা মূলত নির্মাণ খাতে কাজ করছিলেন, আবার কেউ কেউ খনির কাজে যুক্ত ছিলেন। তাদের মধ্যে ৪৪৪ জনই পুরুষ।” তিনি আরও বলেন, “জেলার বিভিন্ন পুলিশ সীমানার মধ্যে এসটিএফ একটি অভিযান চালায়, যার সময় ৪৪৪ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং নথি যাচাইয়ের জন্য দুটি হোল্ডিং সেন্টারে পাঠানো হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.