ফাইল ছবি
সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: প্রায় দু’মাস আগের কথা। ২২ এপ্রিল। আর পাঁচদিনের মতো সেদিনও মালিকের থেকে ঘোড়া নিয়ে রোজগারের আশায় বৈসরন উপত্যকা গিয়েছিল আদিল শাহ। তারপরই সেই নাশকতা। বেছে বেছে হিন্দু নিধন যজ্ঞে মাতে চার সন্ত্রাসবাদী। বাধা দিতে গিয়ে প্রাণ হারান একমাত্র স্থানীয় মুসলমান আদিল। তারপর থেকেই থমথমে পরিবেশ গোটা পহেলগাঁও জুড়ে। অমরনাথ যাত্রাকে কেন্দ্র করে যা কাটছে অল্প অল্প করে। সেদিন যে ঘোড়াটি নিয়ে বৈসরণ গিয়েছিলেন আদিল, সেই ঘোড়াও রওনা দিয়েছে যাত্রায় আসা পুণ্যার্থীদের সাহায্য করতে। শুধু তার সহিস বদলে গিয়েছে। এখন সেই ঘোড়ার লাগাম আদিলের খুড়তুতো ভাইয়ের হাতে।
রক্তাক্ত কিছু ইতিহাস, গুহার ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য এমনিতেই দেশের অন্যান্য তীর্থক্ষেত্রের থেকে অনেকটা আলাদা অমরনাথ যাত্রা। অনেক বেশি সতর্কতা থাকে হিন্দুদের এই যাত্রাকে কেন্দ্র করে। এর আগে ২০০০, ২০০১, ২০০২ ও ২০১৭–চার-চারবার হামলা হয়েছে পুণ্যার্থীদের উপর। প্রাণ গিয়েছে ৬২ পুণ্যার্থীর। শহিদ হয়েছেন জনা দশেক নিরাপত্তাকর্মী। মারা গিয়েছেন দশ জন স্থানীয় মুসলমান সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষও। এবার তাই সতর্কতা বেড়েছে আরও। দু’মাস আগে পহেলগাঁও নাশকতার পর থেকে এখনও অধরা চার সন্ত্রাসবাদী। পিরপঞ্জালের জঙ্গলে তারা লুকিয়ে থাকতে পারে, এই খবর এসেছে বিভিন্ন সংস্থার কাছে। তারা যে ফের রক্তাক্ত করবে না ভূস্বর্গ, এমন গ্যারান্টি দিতে পারছেন না কেউ। তাই নিরাপত্তার কড়া আঁটুনিতে মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা জম্মু-কাশ্মীর। এই আবহে অন্যবারের থেকে একটু বেশিই চিন্তায় পুণ্যার্থীরা। তবে চিন্তার মেঘ কাটাতেই ফের দেশবাসীকে বার্তা দিলেন হাপতনার এলাকার লাগবাল গ্রামের প্রায় ছ’ফুট লম্বা, ভাঙা চোয়ালের, শীর্ণ চেহারার সৈয়দ হায়দার শাহ। যাঁর পরিচয়, পহেলগাঁও কাণ্ডে একমাত্র মুসলিম শহিদের পিতা। পুত্রবিয়োগের কষ্ট মনে চেপে রেখেও আসন্ন অমরনাথ যাত্রীদের, গোটা দেশবাসীর কাছে ফের নিশ্চিন্তে কাশ্মীর আসার ডাক দিলেন হায়দার।
ভরা মরশুমেও বৈসরন নাশকতার জন্য গত দু’মাস ভাটা চলেছে গোটা জম্মু-কাশ্মীরে। অমরনাথ যাত্রাকে কেন্দ্র করে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা। হায়দার বলছিলেন, “কোনও ভয় নেই। আপনারা নিশ্চিন্তে আসুন। আমাদের হাপতনারের ছেলেরাও সবাই ঘোড়া নিয়ে রওনা দিয়ে দিয়েছে। কেউ পহেলগাঁও গেছে, কেউ চন্দনওয়াড়ি, আবার কেউ বালতাল। আদিলের ঘোড়াটা নিয়ে আমার ভাইয়ের ছেলে গিয়েছে। আদিল নেই তো কী, অন্য অনেক আদিল এখনও আছে আপনাদের পাশে থাকার জন্য।” আরও বলছিলেন, “সেই অভিশপ্ত দিনের পর থেকে সবাই বাড়িতে বেকার বসেছিল।” দিনকয়েক আগেই এনআইএ-র হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে সন্ত্রাসবাদীদের দুই সহযোগী। তাদের থেকে পাওয়া তথ্যে এবার ছেলের হত্যাকারীদের শাস্তি হবে, এই আশায় দিন গুনছেন হায়দার শাহ। বলছিলেন, “আশা করি এই গ্রেপ্তারির পর তদন্ত গতি পাবে। দোষীদের খুঁজে বার করে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে।” তাঁদের বাড়িতেও বিভিন্ন সংস্থার আধিকারিকরা কয়েক দফায় এসে জিজ্ঞাসাবাদ করে গিয়েছেন।
একদিকে ছেলের হত্যাকারীদের শাস্তি, অন্যদিকে পুণ্যার্থী-পর্যটকদের পায়ের ছোঁয়ায় স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়ন। এই দুই আশায় সময় কাটাচ্ছেন বৈসরণ নাশকতার শহিদের বাবা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.