শীর্ষেন্দু চক্রবর্তী: প্রাণপণ চেষ্টা করছেন ফুঁ দিতে। কিছুটা দিচ্ছেনও। কিন্তু কম্পিত হাত বারবার সরিয়ে দিচ্ছে বাঁশিটাকে। যে বাঁশি সৃষ্টি করেছিল ‘কল অফ দ্য ভ্যালি’-র ইতিহাস, সে বাঁশি আজ কুড়ি মিনিটেও সুর দিতে পারল না।
হ্যাঁ। তিনি হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া। মঙ্গলবার। দিল্লির ঐতিহ্যশালী কামানি অডিটোরিয়াম। তিলধারণের জায়গা নেই। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই এ অনুষ্ঠানের প্রচার চালিয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম-টুইটার– প্রচার চলেছিল সর্বত্র। কানায়-কানায় পূর্ণ হলের দর্শকদের যে একটাই চাহিদা ছিল। পণ্ডিতজিকে চাক্ষুষ করা। তাঁর সুরধ্বনির সাক্ষী থাকা।
তাই তো সাতটা থেকে প্রায় দু’ঘণ্টা অপেক্ষা করেছিলেন সকলে। ন’টা নাগাদ মঞ্চে উঠলেন তিনি। সঙ্গী আরও কয়েকজন। পর্দা উঠতেই করতালিতে ফেটে পড়ল গোটা অডিটোরিয়াম।
মঞ্চের সামনের দিকে চেয়ার বসে পণ্ডিতজি। প্রিয় বাঁশিটা তুলে নিলেন হরিপ্রসাদ। গোটা অডিটোরিয়াম চুপ।
এর পরই যেন সুর কেটে গেল। বাঁশিতে ফুঁ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু, ঠিক মতো দিতে পারছেন না। সঙ্গে ভয়ংকরভাবে কেঁপে চলেছে শিল্পীর হাতদুটো। ক্রমেই তা চলে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। প্রায় ১৫-২০ মিনিট এভাবেই চেষ্টা করে চলেছেন তিনি।
প্রিয় শিল্পীর এহেন অসহায় দশা মেনে নিতে পারেননি কেউ। আস্তে আস্তে দর্শকরা আসন ছাড়তে শুরু করেছেন। আর অন্যদিক, তখনও বাঁশিতে সুর তোলার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া।
মঙ্গলবারের এই দৃশ্যের ভিডিও ভাইরাল সোশাল মিডিয়াতে। দর্শক আসনে ছিলেন লেখক তসলিমা নাসরিনও। নিজের সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে ঘটনা শেয়ারও করেছেন তিনি। পরে তিনি ফোনে জানান, প্রায় দু’ঘণ্টা পর ওনাকে মঞ্চে তোলা হয়। আগে অন্য অনামী শিল্পীদের অনুষ্ঠান চলছিল। পণ্ডিতজিকে প্রায় কুড়ি মিনিট প্রত্যক্ষ করে আমি চলে আসি। তিনি চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, একবারের জন্যও সুর ধরতে পারেননি পণ্ডিতজি।
Yesterday at Delhi’s Kamani Auditorium, hearing Pandit Hariprasad Chaurasia’s flute left me heartbroken. He can no longer truly play. His hands tremble; the flute will not stay steady. He blows into it with immense effort, yet no music emerges.
The blame lies with the organizers.…— taslima nasreen (@taslimanasreen)
অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল দিল্লির ‘চতুর লাল মেমোরিয়াল সোসাইটি’। বিশ্বখ্যাত এমন একজন শিল্পীর অসুস্থতার খবর জানার পরও কেন তাঁকে দিয়ে অনুষ্ঠান করানো হল– উঠছে সে প্রশ্ন। যদিও একাধিকবার ফোন করা হলেও কেউ কোনও উত্তর দেননি। বারবারই নানা অজুহাতে ফোন কেটে দেন তাঁরা।
তাহলে কি হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়াকে সামনে রাখা হয়েছিল কেবল বাণিজ্যিক স্বার্থে? এ প্রশ্নের উত্তরও পাওয়া যায়নি। বিতর্ক হচ্ছে দেখে মুখে কুলুপ এঁটেছে কামানি অডিটোরিয়াম কর্তৃপক্ষও।
হরিপ্রসাদ রাজ কাপুরের প্রতিটি ছবির অবিসংবাদী অংশ। আবার, শিবকুমার শর্মা হরিপ্রসাদ যুগলের ১৯৮১ (‘সিলসিলা’) থেকে ১৯৯৩ (‘ডর’) পর্যন্ত আটটি হিন্দি ছবিতে সুরারোপ সিনেমা সংগীতের ঐতিহ্যে একটা নতুন যুগ তৈরি করেছিল। মঙ্গলের সন্ধ্যার রাজধানীর বুকে সেই হরি ফুঁ দিলেন, কিন্তু বাঁশি বাজল না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.