স্টাফ রিপোর্টার: বছর তিনেক আগে হিপোক্রেটিক ওথের সঙ্গে চরক শপথকে মেশানোর কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে বিতর্কের ঝড় উঠেছিল। ফের কাঠগড়ায় কেন্দ্র। অ্যালোপ্যাথির সঙ্গে আয়ুর্বেদ পাঠ্যক্রমকে মিশিয়ে নতুন ধারার মিশ্র ডাক্তারি কোর্স চালুর ভাবনাচিন্তা করছে কেন্দ্র।
সম্প্রতি একটি সরকারি অনুষ্ঠানে এমনই ইন্টিগ্রেটেড এমবিবিএস-এর ইঙ্গিত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী তথা স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত আয়ুষ মন্ত্রী প্রতাপরাও জাধভ। পুদুচেরির কেন্দ্রীয় ডাক্তারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জওহরলাল ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চে (জিপমারে) পড়ানো হবে সেই কোর্স। শুক্রবার দিনভর এই নয়া ধারার ‘মিশ্রপ্যাথি’ নিয়ে চর্চা চলল চিকিৎসক মহলে।
অ্যালোপ্যাথি, আয়ুর্বেদ-দুই ধারাতেই এই কোর্স নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গিয়েছে। তবে, কেন্দ্রের এই প্রস্তাবনায় গৈরিকীকরণ দেখতে পাওয়া চিকিৎসকদের পাল্লাই ভারী। সমাজমাধ্যমেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সিদ্ধান্ত নিয়ে কটাক্ষের বন্যা বয়েছে। কেউ সুকুমার রায়ের খিচুড়ি কবিতার প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, এই ‘আলুর্বেদ’ (অ্যালোপ্যাথি থেকে আলু ও আয়ুর্বেদ থেকে বেদ) কোর্স ‘হাতিমি’, হাঁসজারুর মতো। না হবে অ্যালোপ্যাথি, না হবে আয়ুর্বেদ।
ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য শাখার সহকারী সম্পাদক ডা. অনির্বাণ দলুই জানিয়েছেন, আয়ুর্বেদ আর মডার্ন মেডিসিনের চিকিৎসা পদ্ধতি আলাদা। বিচার বিবেচনা না করে আয়ুর্বেদ আর মডার্ন মেডিসিন মিশিয়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার যেটা করতে চাইছে তাতে ভালো কিছু হবে না। গ্রামের মানুষের কাছে মডার্ন মেডিসিন পৌঁছে দেওয়ার যে অঙ্গীকার, তা ধাক্কা খাবে এই মিক্সোপ্যাথির প্রচলনে। আইএমএ-র দাবি, অ্যালোপ্যাথি ও আয়ুর্বেদকে মিশিয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুধু অবৈজ্ঞানিকই নয়, বিপজ্জনকও।
যদিও বিষয়টি খোলামনে দেখা উচিত বলেই মনে করছেন আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের একাংশ। অধ্যাপক ডা. অবিচল চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “কায়াচিকিৎসা, পঞ্চকর্ম, দ্রব্যগুণ, রসশাস্ত্র, সংহিতা ও নিদান ছাড়া আয়ুর্বেদের বাকি বিষয়ের (যেমন শল্য, শালক্য, প্রসূতিবিদ্যা, বিষ চিকিৎসা) প্রয়োগে আইনগত জটিলতা তৈরি হচ্ছে অনেক সময়। ইন্টিগ্রেটেড ডাক্তারি কোর্স যদি এই সমস্যা কাটাতে পারে তা হলে ক্ষতি কী?” প্রয়োগের পরিসীমা বাড়লে আয়ুর্বেদের গরিমাই বাড়বে। সম্মান বাড়বে আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের। তবে দেখতে হবে, এই মেলবন্ধনে আধুনিক প্রজন্ম আবার আয়ুর্বেদ থেকে মুখ ফিরিয়ে না নেয়। এমনটাই মত অবিচলবাবুর।আসলে গোটা বিষয়টি এখনও ভাবনাচিন্তার স্তরে। প্রস্তাবিত পাঠ্যক্রমটি শুরু হতে পারে ২০২৭-এর শিক্ষাবর্ষে। এমবিবিএস এবং বিএএমএস কোর্স দু’টি মিলিয়ে কেমন পাঠ্যসূচি তৈরি সম্ভব, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে জিপমারের কারাইকাল ক্যাম্পাসে পড়ানো হবে ইন্টিগ্রেটেড এমবিবিএস-বিএএমস কোর্সটি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.